ভোরবেলা পুলিশের হানা, ১০ পড়ুয়াকে আটক! যা চলছে জামিয়া মিলিয়াতে

Delhi Jamia Millia Islamia University Protest: ভোরবেলা ক্যাম্পাসে ঢোকে পুলিশ। ভোর ৪টে নাগাদ, অন্ধকারের মধ্যেই ১০ জনেরও বেশি পড়ুয়াকে তাঁরা সরিয়ে নিয়ে গিয়ে আটক করেন।

দুই পিএইচডি গবেষকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল। অভিযোগ এই দুই গবেষক বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। দুই গবেষককেই এমন প্রতিবাদ আয়োজনে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণ দর্শাতে বলে বিজ্ঞপ্তি ধরানো হয়। গত ১০ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ করেন দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের একাংশ। বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ১০ জনেরও বেশি পড়ুয়াকে দিল্লি পুলিশ আটক করেছে। সোমবার অর্থাৎ ১০ ফেব্রুয়ারি পড়ুয়ারা বিক্ষোভ দেখান মূলত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেভাবে অতিসক্রিয় হয়ে ছাত্রদের উপর দমনপীড়ন চালাচ্ছে তার নিন্দা জানিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, আন্দোলনরত পড়ুয়ারা কেন্দ্রীয় ক্যান্টিনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি ভাংচুর করেছে এবং নিরাপত্তা উপদেষ্টার কার্যালয়ের দরজা ভেঙেছে। ফলে এই বিক্ষোভকারীদের আটক করে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতেই হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, জামিয়া মিলিয়ার অন্দরে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পড়ুয়াদের বিক্ষোভস্থল থেকে সরিয়ে দিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই পুলিশের হস্তক্ষেপ চায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে অনুরধ আসার পরেই ভোরবেলা ক্যাম্পাসে ঢোকে পুলিশ। ভোর ৪টে নাগাদ, অন্ধকারের মধ্যেই ১০ জনেরও বেশি পড়ুয়াকে তাঁরা সরিয়ে নিয়ে গিয়ে আটক করে। ক্যাম্পাসের বাইরে বিশাল পুলিশ মোতায়েন করে দেওয়া হয়। বিক্ষোভকারী পড়ুয়াদের একাংশের দাবি, পুলিশ ক্যাম্পাসে ঢোকার পর থেকে ২০ জন পড়ুয়া নিখোঁজ। এমনকী বাকিদের আটক করে পুলিশ কোথায় রেখেছে তাও জানানো হচ্ছে না।

আরও পড়ুন- কতজন ভারতের নাগরিকত্ব পেলেন সিএএ-তে? যে জবাব দিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক

বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার খেসারত হিসেবে জামিয়া মিলিয়া প্রশাসন অনেক পড়ুয়াকে বরখাস্তও করছে বলে অভিযোগ। এক পড়ুয়া জানাচ্ছেন, তাঁর কাছে সাসপেনশন লেটার এসেছে। ওই চিঠিতে বলা আছে, “১০ ফেব্রুয়ারি, আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি ভাংচুর করা একটি বিক্ষুব্ধ দলের নেতৃত্বে হিসাবে চিহ্নিত হয়েছেন। পাশাপাশি, ১১ ফেব্রুয়ারি, আপনি আবার জেএমআই ক্যাম্পাসের মধ্যে একটি অননুমোদিত এবং বেআইনি বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন যা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত করেছে এবং ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে হট্টগোল সৃষ্টি করেছে এবং এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষক, ছাত্রদের ক্ষতি হয়েছে। এই চিঠির মাধ্যমে আপনাকে জানানো হচ্ছে যে আপনাকে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া (জেএমআই) থেকে অবিলম্বে বরখাস্ত করা হয়েছে ভাংচুর, অননুমোদিত এবং বেআইনি প্রতিবাদ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মানহানির কাজে জড়িত থাকার কারণে যা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশের গুরুতর লঙ্ঘনের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও শৃঙ্খলারও অবমাননা।"

 

একটি বিবৃতিতে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, মুষ্টিমেয় পড়ুয়া ১০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা থেকে আকাডেমিক ব্লকে বেআইনিভাবে জড়ো হয়ে বিক্ষোভের ডাক দেয়। এরপর থেকে শান্তিপূর্ণভাবে ক্লাস চলাতে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে পড়ুয়ারা, অন্য ছাত্রদের সেন্ট্রাল লাইব্রেরিতে প্রবেশ করতে দেয়নি এবং ক্লাসেও যেতে বাধা দিয়েছে। এদিকে শিয়রে মিড-সেমিস্টার। জামিয়া মিলিয়া কর্তৃপক্ষ আরও জানাচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম লঙ্ঘন করা, আপত্তিকর নিষিদ্ধ জিনিসপত্র আনা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তির ক্ষতি, দেওয়ালের বিকৃতি এবং ক্লাসে বাধা দেওয়ার মতো একাধিক কারণেই কড়া হতে বাধ্য হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অভিযোগ, একটি কমিটির মাধ্যমে বিক্ষুব্ধ পড়ুয়ার দাবি নিয়ে আলোচনা করার প্রস্তাব দেওয়া হলেও, পড়ুয়ারা সুপারভাইজার, হেড এবং ডিন সহ প্রশাসনের সঙ্গে বসতেই অস্বীকার করেছে।

আরও পড়ুন- মোদি জামানায় তুঙ্গে ধর্মের বিদ্বেষ! যেভাবে বেড়েছে হাড়হিম করা অপরাধ

এই বিক্ষোভের অন্যতম নেত্রী সোনাক্ষী বলছেন, বিক্ষোভকারীদের চারটি মূল দাবি রয়েছে: দুই পিএইচডি গবেষককে জারি করা শো-কজ নোটিশ প্রত্যাহার করতে হবে, ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ দেখানো নিয়ে ২০২২ সালে যে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে তা বাতিল করতে হবে, গ্রাফিতি এবং পোস্টারের জন্য ৫০,০০০ টাকা জরিমানা বাতিল করতে হবে এবং প্রতিবাদে অংশ নেওয়ার জন্য ভবিষ্যতে পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে যাতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।

জানা গিয়েছে, ২০২৪ সালের ১৫ ডিসেম্বর "জামিয়া প্রতিরোধ দিবস" আয়োজনে দুই পিএইচডি ছাত্রের ভূমিকা পর্যালোচনা করার জন্য শৃঙ্খলা কমিটি ২৫ ফেব্রুয়ারি বৈঠকে বসবে। উল্লেখ্য, ১৫ ডিসেম্বর হচ্ছে ২০১৯ সালের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) বিরোধী বিক্ষোভের বার্ষিকী। ২০১৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর দিল্লি পুলিশ CAA-বিরোধী বিক্ষোভের সময় 'বহিরাগতদের' খুঁজতে জামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ঢোকে এবং লাইব্রেরির ভিতরে ছাত্রদের লাঠিচার্জ করার অভিযোগ ওঠে। যা নিয়ে সারা দেশ উত্তাল হয়েছিল সেই সময়।

More Articles