একাত্তর আঁকড়েই এগোবে চব্বিশ: নাহিদ ইসলাম
Bangladesh: শেখ হাসিনার সরকারের পতনের ঠিক ছ'মাসের মাথায় আবার নতুন করে উত্তপ্ত বাংলাদেশ। নতুন করে এই অশান্তি কেন? ঢাকায় বসেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের সঙ্গে কথা বললেন অর্ক দেব।
৭২ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ভাঙা চলছে শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিধন্য শেখ হাসিনার বাসভবন, ৩২ ধানমন্ডি রোড। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের ঠিক ছ'মাসের মাথায় আবার নতুন করে উত্তপ্ত বাংলাদেশ। নতুন করে এই অশান্তি কেন? এই ভাঙচুর কেন আটকানো গেল না? নতুন বাংলাদেশ কি ১৯৭১ সালের ঐতিহ্যকেই অস্বীকার করতে চাইছে? জামাত বাংলাদেশের ভাগ্যবিধাতা হয়ে উঠছে ক্রমে? ঢাকায় বসেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের সঙ্গে কথা বললেন অর্ক দেব।
অর্ক: চোখের সামনে দেখলাম ৩২ ধানমন্ডি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো। এই ঘটনা কি আটকানো যেত না? এর কোনও প্রয়োজনীয়তা ছিল?
নাহিদ: বাংলাদেশে বিচারপ্রক্রিয়া চলমান। আমরা চাইছি দ্রুত নিষ্পত্তি। বিচারে প্রমাণ হয়ে গেলে আন্তর্জাতিকভাবে আমরা এগোতে পারব। ভারত সরকার শেখ হাসিনা এবং বেশ কিছু আওয়ামী নেতাকে আশ্রয় দিয়েছে। তারা একটা ব্যখ্যা আমাদের দিয়েছে। তারা বলেছে, শেখ হাসিনাকে কোনও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে দেওয়া হবে না। সেই প্রতিশ্রুতি যথাযথ রক্ষা হচ্ছে না। বিচার হওয়ার আগে হাসিনার সমস্ত সক্রিয়তার ব্যাপারে আমরা ভারত সরকারকেই প্রশ্ন করব। গতকাল বিদেশমন্ত্রক এই নিয়ে একটি বিবৃতি জারি করেছে। ভারতের হাই কমিশনারকে তলবও করা হয়েছে। আমরা ভারত সরকারের থেকে এ বিষয়ে দায়িত্বশীলতা আশা করছি। আওয়ামী লীগ বরাবর প্রচার করে গিয়েছে, তারা ক্ষমতা থেকে চলে গেলে তাদের নেতাকর্মীদের খুন করা হবে। পাঁচ অগাস্টের পর থেকে আমরা বারবার মানুষকে সংযত থাকতে বলেছি। মানুষ মেনেও নিয়েছে আমাদের কথা। সেই সময় সরকার ছিল না। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে কিন্তু পরিস্থিতি অন্য দিকে যেতে পারত। বহু আওয়ামী নেতা পালিয়ে গিয়েছে, গা ঢাকা দিয়ে আছে, তাদের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ আছে। যারা নির্যাতন করেছে, নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে এই ক্ষোভ থাকবে, যতদিন নির্বাচন না হয়। ৩২ ধানমন্ডির ঘটনা এই বিক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ। আমরা চাই না এর পুনরাবৃত্তি।
অর্ক: জনতা বিক্ষুব্ধ বুঝলাম কিন্তু সেনা কেন কোনও ব্যবস্থা নিল না?
নাহিদ:আইন শৃঙ্খলা বাহিনী শক্তি প্রয়োগ করলে ঘটনা আরও হঠকারী হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতো। তারা চেষ্টা করেছে ক্ষোভ প্রশমনের। কেবল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। রাজনৈতিক উস্কানি দেওয়া হয়েছে এখানে। এখন বিষয়টা যাতে আর না ছড়ায়, সরকারের তরফে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অর্ক: আপনারা তার মানে মব জাস্টিস সমর্থন করছেন?
নাহিদ: না করছি না। আপনাকে বুঝতে হবে, এটা অভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতি। এই সময় মানুষের মধ্যে সমাজ-মনস্তাত্বিক ট্রমা থাকে। তাদের শুশ্রূষা দরকার হয়। স্বাভাবিক হতে সময় লাগে। আমরা কোনও ঘটনাকে প্রশ্রয় দিইনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে আমরা জড়িতদের গ্রেফতারির ব্যবস্থা করেছি। আমরা সবাইকে সচেতন হতে অনুরোধ করছি। আরেকটা কথা মাথায় রাখবেন, বাংলাদেশে পুলিশ ব্যবস্থা এখনও সক্রিয় নয়, আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থা এখনও স্বাভাবিক নয়।
অর্ক: বাংলাদেশে পুলিশ প্রশাসনে আওয়ামী-ছায়া আছে বলছেন?
নাহিদ: বাংলাদেশে সরকার বদলালে অনেকে চেহারা বদলে ফেলে। এবারেও তেমন হয়েছে। দেখুন, আমাদের অনভিজ্ঞতা আছে, মেনে নিতেই হবে। আমরা ছাত্র, আবার আমাদের মাথায় যারা, তারাও সে অর্থে রাজনীতির ব্যাপারী না। দলগুলি নিজেদের লোককে শনাক্ত করতে পারে যেহেতু আগে থেকে বোঝাপড়া থাকে। আমরা জানিই না কে কোন পক্ষের লোক। পনেরো বছরের হাসিনা শাসনকালে আমাদের সব প্রতিষ্ঠানের দলীয়করণ হয়েছে। প্রথম স্তরটা বাদ দিলে, দ্বিতীয়-তৃতীয় স্তরেও তাদের লোক আছে। আবার ধরুন যাদের বঞ্চিত করা হয়েছে, যাদের এখন পদোন্নতির ব্যবস্থা হয়েছে, তাদের অনভিজ্ঞতা রয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন থেকে বহু পুলিশকর্তাকে চাকরিচ্যুত করার করা হয়েছে, অনেককে ঢাকার বাইরে পাঠানো হয়েছে, আবার কয়েকজনকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু যিনি এসেছেন তিনি তো শহরটাই চেনেন না, এত বড় শহর, এত অপরাধ হয়, ফলে তার কাছে এখন খুব বড় চ্যালেঞ্জ। এখানে বেশিরভাগই ক্ষমতার বক্ষলগ্ন হয়ে থাকতে চায় এবং যেহেতু তারা মনে করছে এই সরকারটা অল্প দিনের, দলীয় সরকার তৈরি হবে, তাই তারা এখন থেকেই সেই দলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করছে, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজিকে অনেক ক্ষেত্রে প্রশ্রয় দিচ্ছে। এই ধরনের ঘটনা ঘটেই চলেছে।
আরও পড়ুন-নির্বাচন নেই, হিংসা আছে! অন্তর্বর্তী সরকার আদৌ শান্তি চায়? যে প্রশ্ন তুলছে বিএনপি
অর্ক: আপনারা বলেছিলেন একাত্তরের ধারাবাহিকতায় চব্বিশ। একাত্তরের ঘটনায় তো জামাত ক্ষমা চায়নি। জামাতকে আপনারা অন্তর্ভুক্ত করেছেন, ক্ষমা চাওয়ার কথা বলেননি, তাহলে কেন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কথা আসছে?
নাহিদ: ১৯৭১ পরবর্তীতে এতকাল পরেও ইচ্ছে করেই জামাত ইস্যুটা প্রাসঙ্গিক করে রাখা হয়েছে। যে কোনও বিরোধিতা বা আন্দোলনকেই জামাত শিবির ট্যাগ দেওয়ার প্রবণতা ছিল। তাদের নানাভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। জামাতের নেতৃত্ব এখন মুক্তিযুদ্ধকে স্বীকার করেই তাদের বক্তব্য দিচ্ছে। এই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়ার মধ্যে দিয়ে জামাতের কাফফারা হয়েছে। কিন্তু জামাতকে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে, একাত্তর মীমাংসিত বিষয়। এ নিয়ে ভবিষ্যতে তারা রাজনৈতিক বিরোধিতা করবে না। একাত্তর বিরোধী অবস্থান নেবে না, এই নিশ্চয়তা তাদের দিতে হবে। এখন মূল নেতৃত্ব একাত্তর নিয়ে কথা বলছে না কিন্তু অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা নানা কথা বলে বিতর্ক চালাচ্ছে। আবারও বিভাজনের রাজনীতি আমরা দেখতে পাচ্ছি। একাত্তর আমাদের ভিত্তি। এটাই শেষ কথা। একাত্তরের পক্ষ ও বিপক্ষ নির্মাণের রাজনীতি আমরা চাই না। আমরা পঞ্চাশ বছর পার করে ফেলেছি। কিছু বিচারও হয়েছে। তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কিন্তু জামাত অনুসারীদের একাত্তর বিরোধিতার জন্যে বিচারের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। আওয়ামী লীগের তো এখনও বিচারও হয়নি।
অর্ক: আওয়ামী লিগকে পুনর্বাসন দেওয়া হবে না কেন? আপনারা নিষিদ্ধকরণ সংস্কৃতির পক্ষে?
নাহিদ: কাদের সঙ্গে সংলাপ করব তার তো একটা সীমা আছে। আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগ সেই ফ্রেমওয়ার্কেই আসে না। ওরা বাকশাল করেছে। জুলাই গণহত্যা ঘটিয়েছে। এখনও পর্যন্ত কোনও অনুশোচনা নেই ওদের। তারা জুলাই বিপ্লবকে স্বীকৃতি দেয়নি। ক্ষমা চাইলে তো পুনর্বিবেচনা! আমরা কিন্তু নিষিদ্ধকরণের কথা বলিনি শুরুতে, কিন্তু ছাত্রলীগ মিছিল, গুপ্তহত্যা শুরু করল। শহিদ পরিবারের উপর মামলা করছিল ওরা। এটা এখন জননিরাপত্তার বিষয়। আমরা বিচারপ্রক্রিয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চেয়েছিলাম। দল হিসেবে ওদের ভূমিকা প্রামণিত হতো এর মাধ্যমে। আমরা চাইলে আট অগাস্টেই নিষিদ্ধ করে দিতে পারতাম ছাত্রলীগকে। কিন্তু ওরা এই সুযোগে সহিংস কার্যক্রম চালিয়ে যেতে চাইছে। আমি মনে করি, আওয়ামী লীগের মতাদর্শ ফ্যাসিস্ট মতাদর্শ। এই মতাদর্শ বাংলাদেশকে পিছিয়ে দিয়েছে। এই মতাদর্শকে আর সুযোগ দেওয়া উচিত না, বাংলাদেশের মানুষ গ্রহণও করবে না। তবে আওয়ামী লীগের যে নেতাকর্মীরা প্রত্যক্ষভাবে দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন না, তাদের নাগরিক অধিকার যাতে ক্ষুণ্ণ না হয় তা দেখতে হবে। আমাদের দেখতে হবে, বিরোধী হলেই যেন আওয়ামী লীগ ট্যাগ দিয়ে দেওয়া না হয়, যেমন আগে উল্টোকথা বললেই জামাত শিবির ট্যাগ দিয়ে দেওয়া হতো। আমরা চাই যারা নির্দোষ তারা সমাজে শান্তিতে বসবাসের অধিকার পাক।
অর্ক: হাসনাত আবদুল্লাহ আর মাহফুজ আলমের কথার মধ্যে বিরোধাভাস আছে। হাসনাত ভাঙার কথা বলছেন মাহফুজ গড়ার কথা বলছেন। আপনাদের মধ্যে একধরনের ক্ষমতার লড়াই চলছে?
নাহিদ: মাহফুজ আলম সরকারের জায়গা থেকে দায়িত্বশীল বক্তব্য দিয়েছেন। আবার ভাঙতে না জানলে আমরা গড়তেও পারব না। ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়েই এই সময়টা যাবে। এটুকুই বলব। নানা ঘরানার মানুষ ছাত্রদের ব্যানারে এসে জড়ো হয়েছেন। সবাই একমতের হবে না এটাই স্বাভাবিক। আমরা একাত্তর আর চব্বিশকে ধারণ করেই বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চাই।
অর্ক: জাতীয় নাগরিক কমিটি থেকে যদি একটা দল তৈরি হয়, তাহলে তা কিংস পার্টি হবে না?
নাহিদ: সরকারের বাইরে যারা আছে, তারা সরকারের কোনও সুযোগ সুবিধে নিচ্ছে না। আবার আমরা প্রত্যক্ষভাবে তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যোগও দিচ্ছি না। বুঝতে হবে, এই সরকারকে ছাত্রদের সরকার বলা হলেও এটা কোনও দলীয় সরকার নয়। জিয়াউর রহমান সরকারে থেকেই দল গঠন করেছিলেন। এখানে তো তেমন হচ্ছে না। আমাদের অন্তর্বর্তী সরকারে সব ধরনের মানুষ আছে। জামাত-বিএনপির লোক আছে প্রশাসনে। ছাত্রদের প্রশাসনে লোক নেই, আমরা দু'-তিনজন আছি উপদেষ্টা হিসেবে। ডক্টর ইউনূসও কোনও দলীয় কর্মী নন। কিংস পার্টি বলার জায়গা নেই। গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন দল তৈরি হওয়াটা স্বাভাবিক ঘটনা। বহু মানুষ গণঅভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিলেন, তাদের একটা রাজনৈতিক স্পৃহা তৈরি হয়েছে। নেতৃত্বদানের আকাঙ্খা তৈরি হয়েছে। আগামী দিনে তারা রাষ্ট্র গঠনে ভূমিকা রাখতে চান। রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা দলে ফিরে গিয়েছেন। যাদের দল নেই, তারা শূন্যতার মধ্যে একটা অবয়ব গড়তে চাইছেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত যেসব নেতা-নেত্রীরা সরকারের বাইরে আছে, তাদের সমাজের সঙ্গে যে বোঝাপড়া তা সরকারি বোঝাপড়া নয়। বহু ক্ষেত্রেই তাদের দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়া সরকারের পক্ষে সম্ভব হয়নি। তারা কোনও দলীয় সরকারের ছাত্র সংগঠন হিসেবে সক্রিয় এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। গণঅভ্যুত্থান তাদের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্বের অধিকার দিয়েছে। মানুষ তাই তাদের কথা শোনে।
অর্ক: ইউনূস সরকারের অনেক কিছু মেনে নিতে হচ্ছে, এক ধরনের কমপালশান নিয়ে চালাতে হচ্ছে, এ কথা কি আপনি মানবেন?
নাহিদ:আমি এখনও সরকারের অবস্থানকে নিরপেক্ষ মনে করি। সবাই সুযোগ পাচ্ছে। সরকার সবার কথা শুনছে। জনগণ অনেক বেশি ক্ষমতায়িত এখন। জামাতকে বেশি স্পেস দেওয়া হচ্ছে, এ কথা বলা ভুল। বিএনপি-ও আছে। আমাদের সমাজে মানুষ ধর্মপ্রাণ, ইসলাম ধর্মের প্রতি সংবেদনশীলতা আছে। আবার সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবনে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনুশীলন এ দেশে দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য। সব মিলিয়েই বাংলাদেশ।
অর্ক: তাহলে যারা মাজার ভাঙল এখনও তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া গেল না কেন?
নাহিদ: এই ঘটনা আমাদের আদর্শিক কারণে ঘটেনি। নারীদের খেলায় বাধার ঘটনার কথাও হয়তো আপনি বলবেন। সরকার এগুলির পক্ষে না কোনওমতেই। এটাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অসক্রিয়তা হিসেবে দেখতে হবে।
অর্ক: কবে সক্রিয় হবে বাহিনী? ভোট হলে?
নাহিদ: এখন যা পরিস্থিতি এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন করা সম্ভব নয়।
অর্ক: তাহলে পুলিশ ব্যবস্থার সংস্কার কতদিনে হবে? নির্বাচন কতদিনে হবে?
নাহিদ: প্রফেসর ইউনূস বলছেন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে। রাজনৈতিক দলগুলি সহযোগিতা করলে এর মধ্যে ভোট করা সম্ভব।
অর্ক: ডিসেম্বরে ভোট হলে জামাত, হেফাজত, চরমোনাইপন্থীরা কত ভোট পাবে?
নাহিদ: আগের হিসেব এবার মিলবে না। কেননা দীর্ঘদিন মানুষ ভোটই দিতে পারেনি। প্রচুর নতুন ভোটার এবার। তবে আমার ধারণা, জামাতের নেতৃত্বে মানুষ আস্থা রাখবে না। তাদের ঐতিহাসিক ভুলগুলো জনগণ মনে রেখেছে। তাছাড়া ইসলামিস্ট রাজনীতিতে মানুষের সমর্থন নেই। এই রাজনীতির ভবিষ্যতও নেই বাংলাদেশে। বরং তরুণদের দ্বারা পরিচালিত মূলধারার সার্বজনীন ও গণতান্ত্রিক চরিত্রের দলকে মানুষ সমর্থন জানাবে বলেই মনে করি।
অর্ক: তাহলে কবে পদত্যাগ করছেন?
নাহিদ: এখনই বলতে পারছি না।
অর্ক: নতুন দলে আপনার ভূমিকা কী হবে?
নাহিদ:সেটা তো দলে না যাওয়া পর্যন্ত বলতে পারছি না। তবে আমাদের শক্তিশালী সংগঠন গড়া উচিত। তৃণমূলে যাওয়া উচিত। শ্রমিকদের সঙ্গে কাজ করা উচিত। ছাত্রদের গ্রামে গ্রামে গিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।
আরও পড়ুন- ৬ মাসেই ফের তোলপাড় বাংলাদেশ! ভাষণে ঠিক কী বলেছেন শেখ হাসিনা?
অর্ক: পার্বত্য চট্টগ্রামে হিংসা থামাতে আপনার সরকার তো ব্যর্থ হয়েছে।
নাহিদ: পাহাড়ে বহুমাত্রিক জটিলতা আছে। ভূ-রাজনৈতিক জটিলতা আছে। পাহাড়ি জনগোষ্ঠী বঞ্চনার শিকার। এত অল্প সময়ে এই সমস্যা সমাধান কঠিন।
অর্ক: আপনাদের হাতে শ্রমিকের রক্তের দাগ লেগে রয়েছে।
নাহিদ: যে পরিমাণ শ্রমিক আন্দোলন হয়েছে, আমরা চেষ্টা করেছি ক্ষোভ প্রশমনের। এর ভিতর ষড়যন্ত্রও ছিল। এখন বহু গারমেন্টস মালিক পলাতক বা গ্রেফতার। শ্রমিকরা অনেকদিন বেতন পেয়েছেন। সরকার এখানে অপারগ। আমরা বহুবার শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আগে যেভাবে আন্দোলন দমন করা হতো, সেই ঘটনা এখানে ঘটেনি। আমরা এই ঘটনা এড়ানোর চেষ্টা করেছি, তারপরেও অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে, কয়েকজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। আমরা সেটার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
অর্ক: ধানমন্ডি ৩২-এ আমি নিজে ছবি তুলেছি কয়েকজনের, তাদের হাতে কলেমা আঁকা পতাকা ছিল। এই পতাকা আইসিস ব্যবহার করে। এই দৃশ্য শেখ হাসিনার 'দেশটা সন্ত্রাসীদের হাতে চলে গেছে' জাতীয় তত্ত্বে শিলমোহর দিচ্ছে না?
নাহিদ:শেখ হাসিনা জঙ্গিবাদ নিয়ে রাজনীতি করেছেন। একথা ঠিক আইনশৃঙ্খলা জাতীয় দুর্বলতা, সরকারের দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছে অনেকে। বিতর্ক সেখান থেকেই। হিজবুত তাহরিরের অনেকেই গ্রেফতার হয়েছে। আমি মনে করি না এটা আর বাড়বে। আওয়ামী একটা ন্যারেটিভ তৈরি করেছে যে, তারা চলে গেলে জঙ্গিবাদ আসবে কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ কখনই জঙ্গিবাদকে সমর্থন করেনি। আওয়ামী লীগের সংখ্যালঘুর প্রতি মনোভাবও আমাদের জানা আছে। তাদের আমলে সংখ্যালঘু প্রবলভাবে নির্যাতিত হয়েছে।
অর্ক: শ্রীলঙ্কা আদানি চুক্তি খতিয়ে দেখছে। আপনাদের এখানে এই চুক্তির বৈধতা প্রশ্নের মুখে। আপনারা এই চুক্তি নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তে আসতে পেরেছেন?
নাহিদ: ক্যাবিনেটে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের বরিষ্ঠ উপদেষ্টারা আরও তথ্য চাইছেন। আরেকটু সময় লাগবে।
অর্ক: তাহলে আগামী পাঁচ বছর বাংলাদেশের রাশ থাকছে বিএনপি-র হাতে?
নাহিদ:সে তো জনগণ ঠিক করবে। আমরা চাই সুষ্ঠ অবাধ নির্বাচন। সংসদে ভারসাম্য। তবে সামনের দিনগুলিতে তরুণরা রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর।
অর্ক: এই সরকারে মাত্র চারজন মহিলা! এই দৃশ্য তো বিসদৃশ?
নাহিদ: হ্যাঁ মহিলা প্রতিনিধিত্ব বেশি থাকাই উচিত, সেই সময় আমরা চারজনের সঙ্গেই যোগাযোগ করতে পেরেছিলাম।
অর্ক: ঢাকার রাস্তা জুড়ে সাইকেল-শ্রমিক। সাইকেলে করে খাবার নিয়ে ছুটছেন। এদের জন্য আপনারা কিছু ভেবেছেন? এদের সামাজিক সুরক্ষা আছে?
নাহিদ: এটা আমাদের বাস্তবতা। আমাদের বন্ধু, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেরাও এর সঙ্গে জড়িত। এদের কীভাবে শক্তিবৃদ্ধি করা যায়, সুরক্ষাবলয়ে আনা যায়, ভাবব নিশ্চয়ই।
অর্ক: আগামীর জন্য শুভেচ্ছা নাহিদ।
নাহিদ: আপনাকেও।