নির্বাচন নেই, হিংসা আছে! অন্তর্বর্তী সরকার আদৌ শান্তি চায়? যে প্রশ্ন তুলছে বিএনপি

Bangladesh BNP: দেশে নৈরাজ্যের প্রসার ঘটাতে তাহলে বিচ্ছিন্ন মদত থেকে যাচ্ছে ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের?

গণ অভ্যুত্থানের জেরে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ঠিক ৬ মাসের মাথায় আবারও শেখ হাসিনা প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠলেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক মানচিত্রে। সৌজন্যে তাঁর একটি ভাষণ এবং ভাষণকালীন হামলা, মুজিবের বাড়িতে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি হাসিনা বিদ্বেষী জনতা ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িটি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়। হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হয়ে ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়িটিকে সংগ্রহশালা হিসেবে তৈরি করে দেন। এই বাড়িতেই ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট হত্যা করা হয় শেখ মুজিবকে, তাঁর পরিবারকে। হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে আসেন। তারপর বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হন নোবেলজয়ী মহম্মদ ইউনূস, যাঁকে হাসিনা তাঁর শাসনামলে গ্রেফতার করেছিলেন দুর্নীতির অভিযোগে। ইউনূস বলেছিলেন, নতুন বাংলাদেশ গঠনের কাজ চলছে, রাষ্ট্র সংস্কার চলছে। এই রাষ্ট্র মেরামতির সময়, হঠাৎ ৬ মাস পরে কেন আবার মুজিবের বাড়িতে হামলা?

এই মুহূর্তে বাংলাদেশে নির্বাচন ও স্থায়ী সরকার গঠন সবচেয়ে জরুরি। যদিও অন্তর্বর্তী সরকার সেই নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তেই আসতে পারছে না। ধানমন্ডির ওই বাড়িতে হামলার পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলছেন, "ফ্যাসিবাদের চিহ্ন বিলোপের সাথে সাথে খুনী হাসিনাসহ গণহত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত এবং আওয়ামীলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।" নতুন বাংলাদেশে বিশ্বকে এই বার্তা দিতে সক্ষম হয়েছে যে 'পরিবারকেন্দ্রিক মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে' তারা মানে না। হাসিনাও দেশে নেই। ভারত থেকে তিনি ছাত্রলীগের সমাজমাধ্যমে কিছু বক্তব্য পেশ করেছেন। তাতে গুরুত্ব দিয়ে আবারও হিংসা ডেকে আনার পথে কেন গেল বাংলাদেশ? হাসিনার আওয়ামী লীগের প্রধান বিরোধী বিএনপিও এই হিংসার জন্য মূলত হাসিনাকেই দায়ী করেছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকার সমালোচনাও করেছে।

আরও পড়ুন- ৬ মাসেই ফের তোলপাড় বাংলাদেশ! ভাষণে ঠিক কী বলেছেন শেখ হাসিনা?

বিএনপি একটি বিবৃতিতে লিখেছে, “আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, হাজারও শহিদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বিতাড়িত, পতিত, পরাজিত, পলাতক স্বৈরাচারী এবং তাঁর দোসরদের উস্কানিমূলক আচরণ, জুলাই-অগাস্টের রক্তক্ষয়ী ছাত্র গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে অশালীন এবং আপত্তিকর বক্তব্য মন্তব্য দেশের জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ এবং ক্রোধের জন্ম দিয়েছে। এরই ফলশ্রুতিতে গতকাল, বুধবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পতিত স্বৈরাচারীর স্মৃতি, মূর্তি, স্থাপনা ও নামফলকসমূহ ভেঙে ফেলার মতো জনস্পৃহা দৃশ্যমান হয়েছে।" হাসিনা ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে বিপুল টাকার দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে। তাহলে গত ৬ মাসে তা নিয়ে কেন কোনও সদর্থক ভূমিকাই পালন করতে পারল না ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার?

বিএনপি বিবৃতিতে বলছে, "বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত ৬ মাসেও পলাতক স্বৈরাচারী এবং তাদের দোসরদেরকে আইনের আওতায় আনতে যথেষ্ট কার্যকর পদক্ষেপ জনসম্মুখে দৃশ্যমান করতে সফল হয়নি বলে জনমনে প্রতিভাত হয়েছে, ফলে জনগণ আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার মতো বেআইনি কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত হচ্ছে। একটি সরকার বহাল থাকা অবস্থায় জনগণ এভাবে নিজের হাতে আইন তুলে নিলে দেশে-বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হতে পারে। অথচ জুলাইয়ের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্খা অনুযায়ী জনগণের প্রত্যাশা ছিল, দেশে আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে, যা বর্তমান সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। বর্তমানে দেশে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নানা ধরনের দাবিদাওয়া নিয়ে যখন তখন সড়কে ‘মব কালচারের’ মাধ্যমে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি করছে যা সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে মুন্সিয়ানা দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছে"।

বিএনপি এই ব্যর্থতার দায় সরাসরি চাপাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপরেই। তাদের অভিযোগ, জুলাই-অগাস্টের ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের শহিদদের পরিবারদের রাষ্ট্র সেভাবে সহযোগিতা করতে ব্যর্থ হয়েছে। আহতদের যথাযথ চিকিৎসা ও পুনর্বাসনও সম্পূর্ণ সম্ভব হয়নি। পাশাপাশি, শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের অন্য নেতাদের বিচারও নিশ্চিত করতে পারেনি ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। বিএনপি বলছে, এখনও প্রশাসনে আওয়ামী লীগের নেতারা থেকে গেছেন। পুলিশ প্রশাসনে গণঅভ্যুত্থানবিরোধী সক্রিয় সদস্যরা এখনও কর্মরত। ফলে এই অবস্থায় সরকার জনআকাঙ্খা পূরণে কতখানি সফল হবে তা যথেষ্ট সন্দেহের।

আরও পড়ুন- নতুন করে হিংসা বাংলাদেশে! মুজিবের ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি গুঁড়িয়ে দিল কারা?

বিএনপির অভিযোগ, বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে জনগণের নিত্যদিনের দুর্দশা লাঘব করা এই মুহূর্তে জরুরি। অথ বাজারে দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি লাগামহীন। ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত দরিদ্রদের বিড়ম্বনায় ফেলেছে। এমনকী হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সকল শ্রেণি, সকল পেশার মানুষদের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলাগুলি দায়ের করা হয়েছিল তারও কোনও সুরাহা এখনও হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকার এই নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপই করেনি।

নির্বাচন প্রসঙ্গ বিএনপি বলছে, নির্বাচনমুখী জরুরি সংস্কার সাধন করে দ্রুত নির্বাচনের আয়োজন করাই বর্তমান সরকারের প্রধানতম কাজ হওয়া উচিত। অথচ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনকে প্রাধান্য না দিয়ে অন্যান্য বিষয়ে অধিক মনোযোগী। বিএনপি-র উদ্বেগ, অন্তর্বর্তী অস্থায়ী সরকার উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে রাষ্ট্র ও সরকারের স্থিতিশীলতাই হুমকির মুখে পড়বে।

দেশে নৈরাজ্যের প্রসার ঘটাতে তাহলে বিচ্ছিন্ন মদত থেকে যাচ্ছে ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের? হিংসাকে কোনওভাবেই সহ্য করা হবে না বার্তা দিয়েছিলেন ইউনূস। তাহলে ধানমন্ডিতে যারা ভাঙচুর চালাল প্রকাশ্যে তাঁদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে? সেই সময় কোথায় ছিল পুলিশ প্রশাসন? বাংলাদেশকে আদৌ স্থিতিশীল করতে চায় তো এই সরকার? প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

More Articles