ভারত ছাড়াও এই পাঁচটি দেশে ১৫ অগাস্ট পালিত হয় স্বাধীনতা দিবস
বিশ্বে ভারত ছাড়া আরও বহু দেশে ১৫ অগাস্ট স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয়। একনজরে দেখে নেওয়া যাক।
পলাশির প্রান্তরে স্বাধীনতার সূর্য অস্ত যাওয়ার পর পুনরায় সূর্যোদয় হতে লেগেছিল প্রায় ২০০ বছর। ১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধের পর বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদ্দৌলার পতনের পর থেকেই দেশে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজত্ব শুরু হয়। ১৮৫৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির থেকে ক্ষমতা হস্তান্তরিত হয় ব্রিটিশ রাজের হাতে। সেই সময় ব্রিটিশদের অত্যাচারে নাজেহাল অবস্থা হয়েছিল ভারতবাসীর। অবশেষে ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট ২০০ বছরের ব্রিটিশ রাজের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে স্বাধীনতা পায় ভারত। ভারত ছাড়ার আগে ব্রিটিশরা ভারতকে দু’টি স্বাধীন রাষ্ট্রে ভাগ করে দিয়ে যায়। একটি হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ভারত ও একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ পাকিস্তান। পাকিস্তানে ১৪ অগাস্ট স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয়। ভারত স্বাধীনতা দিবস পালন করে ১৫ অগাস্ট। গোটা বিশ্বে ভারত ছাড়া আরও বহু দেশে ১৫ অগাস্ট স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয়।
• বাহরিন
ভারতের পাশাপাশি ব্রিটিশ শাসন ছিল মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশেও। ভারতের স্বাধীনতা লাভের প্রায় দু'দশক পর এই দেশ ব্রিটিশ শাসনমুক্ত হয়ে স্বাধীনতার মুখ দেখেছিল। ১৯৭১ সালের ১৫ অগাস্ট স্বাধীন হয় বাহরিন। ১৯৭১ সালের ১৫ অগাস্ট বাহরিন থেকে ব্রিটিশরা নিজেদের সাম্রাজ্য গুটিয়ে নিয়ে নিজেদের দেশে ফিরে যায় এবং স্বাধীন দেশ হিসেবে বাহরিন পরিচিতি পায়। ব্রিটেন ও বাহরিনের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার মাধ্যমেই সেই দেশের স্বাধীনতাকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। আর সেই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ১৫ অগাস্ট। কিন্তু, ওই দিন এই দেশে স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয় না। তার পরিবর্তে ১৬ অগাস্ট তারা স্বাধীনতা দিবস পালন করে। কারণ প্রাক্তন সুলতান ইসা বিন সলমন আল খালিফা ওই দিন সিংহাসনে বসেছিলেন।
• উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া
প্রতি বছর ১৫ অগাস্ট ন্যাশনাল লিবারেশন ডে পালন করে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া। কারণ ওই দিনই শেষ হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। ১৯৪৫ সালের ১৫ অগাস্ট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকা ও সোভিয়েত রাশিয়ার কাছে আত্মসমর্পণ করায় জাপানি উপনিবেশের পতন হয় কোরিয়ায়। ১৯৪৫ সালের ১৫ অগাস্ট মার্কিন ও সোভিয়েত বাহিনী কোরিয়ান পেনিনসুলা থেকে জাপানের দখলদারী হটায়। অবশেষে জাপান আত্মসমর্পণ করে। তাই ১৫ অগাস্ট কোরিয়ায় জাতীয় মুক্তি দিবস নামে পালিত হয়। দক্ষিণ কোরিয়ায় এই দিনটি ‘Gwangbokjeol’ (যার অর্থ আলোকিত হওয়ার দিন) ও উত্তর কোরিয়ায় এই দিনটি 'Chogukhaebangŭi nal’ (যার অর্থ পিতৃভূমি মুক্তির দিন) নামে পরিচিত। তিন বছর পর, অর্থাৎ ১৯৪৮ সালে স্বাধীন কোরিয়ান সরকার গঠন করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: তিরঙ্গা নয়, তার নাম ছিল ‘কলকাতা পতাকা’, জাতীয় পতাকার যে ইতিহাস রয়ে গেছে আড়ালে
• লিচেনস্টাইন
বিশ্বের অন্যতম ক্ষুদ্র দেশ এটি। অস্ট্রিয়া ও সুইৎজারল্যান্ডের মাঝে অবস্থিত এই দেশ। বিশ্বের ষষ্ঠ ক্ষুদ্রতম দেশ হিসেবে পরিচিত লিচেনস্টাইন ১৮৬৬ সালের ১৫ অগাস্ট জার্মানির শাসন থেকে মুক্তি পায়। তারপর ১৯৪০ সাল থেকে ১৫ আগস্ট দিনটি জাতীয় দিবস হিসাবে পালন করে তারা। ওই বছরই ৫ আগস্ট লিচেনস্টাইন সরকার সরকারিভাবে ১৫ আগস্ট দিনটি জাতীয় দিবস হিসাবে ঘোষণা করে। এছাড়াও ১৬ অগাস্ট জন্ম হয়েছিল দেশের তৎকালীন রাজকুমার প্রিন্স দ্বিতীয় ফ্রাঞ্জ জোসেফের। আর সেই কারণে ১৫ অগাস্ট ও ১৬ অগাস্ট এই দিনদু'টিকে মিলিয়ে সেদেশে উৎসব পালন করা হয়। ১৯৩৮ থেকে ১৯৮৯ সালে মৃত্যু পর্যন্ত লিচেনস্টাইনের রাজকুমার ছিলেন তিনি।
• রিপাবলিক অফ কঙ্গো
১৫ অগাস্ট স্বাধীন হয় মধ্য আফ্রিকার এই দেশও। ১৮৮০ সালে এই দেশে ফরাসি শাসন শুরু হয়েছিল। আর ১৯৬০ সালে ৮০ বছরের ফরাসি শাসনের পতন হয়। এর আগে এই দেশের নাম ছিল ফ্রেঞ্চ কঙ্গো। ১৯০৩ সালে নাম হয় মধ্য কঙ্গো। ১৯৬০ সালে ফরাসি অধীনতা থেকে পূর্ণ স্বাধীনতা পেয়ে কঙ্গোর নাম হয় রিপাবলিক অফ কঙ্গো বা প্রজাতন্ত্রী কঙ্গো। ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত ফুলবার্ট ইউলৌ রাষ্ট্রপতি হিসেব শাসন করেন দেশ। এরপর ১৯৬৯ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত একটি মার্কসবাদী-লেনিনবাদী কমিউনিস্ট পার্টি শাসন করে এখানে। ১৯৯২ সাল থেকে সার্বভৌম রাষ্ট্রটিতে বহুদলীয় নির্বাচন হয়েছে। যদিও ১৯৯৭ সালের কঙ্গো গৃহযুদ্ধে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করা হয়েছিল। রাষ্ট্রপতি ডেনিস সাসও এনগুয়েসো ১৯৭৯ সালে প্রথমবারের জন্য ওই দেশের রাষ্ট্রপতি হন। ১৯৯২ সালে তার সরকার পরে যায়। এরপর সেনাবাহিনীর সাহায্যে ১৯৯৭ সালে ফের ক্ষমতা দখল করেন এনগুয়েসো। সেই থেকে আজ পর্যন্ত তিনিই দেশটি শাসন করে আসছেন।
১৫ অগাস্ট ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে দেশবাসীর নজর ছিল প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের ওপর। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লালকেল্লায় ভাষণ দিলেন এবং ঐতিহাসিক লালকেল্লায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করলেন। এই অনুষ্ঠানটি দূরদর্শন এবং অন্যান্য টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে সারা দেশে সম্প্রচারিত হবে। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য ও রাজ্যগুলির বিভিন্ন শহরেও পতাকা উত্তোলন-সহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। অন্যান্য শহরে রাজনৈতিক নেতৃবর্গ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সকলে নিজ নিজ এলাকায় পতাকা উত্তোলন করেন। নানা বেসরকারি সংস্থাও পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। স্কুল-কলেজেও পতাকা উত্তোলন ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। এভাবেই আমরা প্রতি বছর ১৫ অগাস্ট স্বাধীনতা দিবস পালন করে থাকি।