বিদায় ঘণ্টা ট্রামের! শহরে আর চলবে না ঐতিহ্যবাহী ট্রাম, শেষ কথা রাজ্যের
Kolkata Tram: শহরের মেজাজ পাল্টাচ্ছে। মানুষের হাতে সময় কমছে। বুলেট ট্রেনের যুগে তাই দূষণহীন এই যানটি ক্রমে বড় অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছিল ট্রাম। তাই বুঝি ফুরালো সফর।
দার্জিলিং মানে যদি টয়ট্রেন হয়, কলকাতা মানে কোথাও ছিল ট্রাম। কলকাতার শরীরের সঙ্গে ট্রামের দৃশ্যকল্প অঙ্গাঙ্গি ভাবে মিশেছিল এতদিন। কিন্তু সেই নস্টালজিয়া সফরে ছেদ পড়ল শেষমেশ। কলকাতায় আর চলবে না ট্রাম। শ্লথ গতি, টুংটাং বেল, ঘটাং ঘটাং করতে করতে ধীরে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া এই বাহনটি কি গতির এই যুগে বড্ড বেমানান? তাই বুঝি ফুরালো সফর। প্রায় দেড় শতক ধরে শহরের নস্টালজিয়া বয়ে চলা সেই ট্রামকে এবার বিদায় জানাল রাজ্য পরিবহন দফতর।
শহরের মেজাজ পাল্টাচ্ছে। মানুষের হাতে সময় কমছে। বুলেট ট্রেনের যুগে তাই দূষণহীন এই যানটি ক্রমে বড় অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছিল। কমছিল যাত্রী সংখ্য়া। শহরের বুক চিরে বিরাট বপু নিয়ে ধীরে সুস্থে এগিয়ে যাওয়া এই বাহনে চড়ে সময় নষ্ট করার সময় কই আজকের মানুষের হাতে। অগত্যা তার নামও উঠল ইতিহাসের পাতাতেই। সম্প্রতি শহরে ট্রাম পরিষেবা চালু রাখার দাবিতে হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা করেছিল ক্যালকাটা ট্রাম ইউজার্স অ্যাসোসিয়েশন। সেই মামলার প্রেক্ষিতেই সরকারের ট্রাম-নীতির ব্যাপারে জানতে চায় উচ্চ আদালত।
আরও পড়ুন: ভারতের দুই রাজার নামে পোল্যান্ডে চলে ট্রাম! নেপথ্য কাহিনি আজও অজানা
সেই নিয়ে বিস্তর আলাপ-আলোচনা করে প্রশাসন। নবান্ন সূত্রের খবর, শীর্ষ পর্যায়ের আলোচনার পর শেষমেশ শহর থেকে ট্রাম তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তই নেওয়া হল। এমনিতেই শহরে ট্রাম-রুট কমতে কমতে এসে ঠেকেছিল মাত্র দু'টিতে। বালিগঞ্জ-ধর্মতলা ও শ্যামবাজার-ধর্মতলা। শেষমেশ সেই দুই রুটেও ট্রাম পরিষেবা বন্ধ করে দিল রাজ্য় সরকার।
দেশের একমাত্র শহর কলকাতা, যেখানে এই ট্রাম চলত। করোনার পর থেকে একের পর একের রুট বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এবার বাজল একেবারে শেষের ঘণ্টাও। মানুষ প্রয়োজনে আর ট্রাম চড়তে পারবে না। তবে ট্রাম দেখতে হলে যে এবার জাদুঘরই ভরসা, তেমনটা অবশ্য নয়। শহরের নস্টালজিয়াকে বাঁচিয়ে রাখতে রাখা হচ্ছে জয়রাইডের ব্যবস্থা। ধর্মতলা ও ময়দানের মধ্যের দূরত্বটুকুতে মডেল স্বরূপ একটি রুটে জয়রাইড হিসেবে এখনও চলবে ট্রাম।
ট্রাম থাকবে না, শহরের বুক থেকে উপড়ে ফেলা হবে প্রাগৈতিহাসিক এই ট্রামের লাইনও। পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, “কোর্ট এই নিয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত জানতে চেয়েছিল। আমরা বলেছি, ময়দান-ধর্মতলা ছাড়া বাকি কোনও রুটে ট্রাম চলবে না। লাইনও তুলে ফেলব। রাস্তা বাড়েনি। যান বেড়েছে। তাই যানজট হচ্ছে। এভাবে ট্রাম চালানো অসম্ভব।” যানজট এবং দুর্ঘটনা এড়াতেই ট্রাম পরিষেবা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বলে সোমবার জানিয়েছেন রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী। তিনি আরও জানান, “এসপ্লানেড থেকে ময়দান পর্যন্ত হেরিটেজ আকারে একটি সুসজ্জিত ট্রাম থাকবে। যাঁরা কলকাতায় আসবেন তাঁরা চাপবেন।”
আরও পড়ুন:কলকাতার গর্ব ট্রাম এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে? মুছে যাচ্ছে যে স্মৃতিগুলো
ইতিহাস সাক্ষী, একসময় কলকাতায় গমগম করে ট্রাম চলত ২৭-২৮টি রুটে। বছর পনেরো আগে কম করে হলেও এক ডজন রুটে সচল ছিল ট্রাম। ট্রামের টিংটিং ঘণ্টি, কাঠের সিট, শেষ সিটে বসে ছাড়ানো বাদামভাজার খোসায় শহরের কত মানুষের কত স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে, তার হিসেব কষা বোধহয় কঠিন। সেই কলকাতার গর্বের ঐতিহ্য, নস্টালজিয়া আজ নাম লেখালো অবসরের খাতায়। দেড়শো বছর ধরে শহরের ‘ঐতিহ্য’ হয়ে থাকলেও ‘হেরিটেজ’ তকমা কোনওদিনই জোটেনি তার। শহর থেকে একের পর এক নস্টালজিয়া হারিয়ে গিয়েছে। গিয়েছে হলুদ-কালো ট্যাক্সি, টানা রিকশা, দোতলা বাস, গ্যাসবেলুন, টেলিগ্রামের মতো কত কিছুই। এবার সেই ফুরানোর খাতায় নাম লিখিয়ে ফেলল এ শহরের ট্রামও।