হুইলচেয়ার দেওয়া হলো না! পড়ে গিয়ে আহত ৮২-র বৃদ্ধা! যা ঘটেছে এয়ার ইন্ডিয়ায়
Air India Wheelchair: অভিযোগ, বিমানবন্দরে হুইলচেয়ার আগে থেকেই বুক করা হয়েছিল। তবে বিমানবন্দরে পৌঁছনোর পরে, এয়ার ইন্ডিয়ার কর্মীরা কোনও হুইলচেয়ার দেয়নি বৃদ্ধাকে।
বয়স ৮২। চলচ্ছক্তিহীন! বিমানবন্দরে ঠায় বসিয়ে রাখা হয়েছে তাঁকে। হুইলচেয়ার চাওয়া হয়েছে, কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই কর্তৃপক্ষের। বয়স, অসুস্থতা, হয়রানিতে নাস্তানাবুদ হয়ে অবশেষে পড়ে যান ওই অশীতিপর! গত ৪ মার্চ ঘটেছে এই ঘটনাটি। অভিযোগ, এয়ার ইন্ডিয়ার কর্মীরা দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রায় এক ঘণ্টা হুইলচেয়ার ছাড়াই ওই বৃদ্ধাকে বসিয়ে রেখেছিলেন। পড়ে যাওয়ার পরে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মহিলার নাতনি পারুল কানওয়ার জানিয়েছেন, মস্তিষ্কে সম্ভাব্য রক্তক্ষরণের জন্য পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে বৃদ্ধাকে। আর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়, এমন মর্মান্তিক ঘটনার পরেও পরিবারের তরফে আনা গাফিলতির সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে ওই বিমান সংস্থা।
জানা গিয়েছে, গত ৪ মার্চ, ওই বৃদ্ধাকে দিল্লি থেকে বেঙ্গালুরুতে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। বিমানবন্দরে হুইলচেয়ার আগে থেকেই বুক করা হয়েছিল। তবে বিমানবন্দরে পৌঁছনোর পরে, এয়ার ইন্ডিয়ার কর্মীরা কোনও হুইলচেয়ার দেয়নি বৃদ্ধাকে। অভিযোগ, বিমান সংস্থার কর্মীদের এবং বিমানবন্দরের হেল্পডেস্কের কাছে বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও, প্রায় এক ঘণ্টা ধরে কোনও সাহায্যই করা হয়নি।
আরও পড়ুন- খারিজ করেন বিমানকর্মী হওয়ার প্রস্তাব, যেভাবে প্রথম মহিলা বাণিজ্যিক পাইলট হলেন দুর্বা
এক বিবৃতিতে, এয়ার ইন্ডিয়া দাবি করেছে, বিমান ছাড়ার দুই ঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে আসা জরুরি। ওই যাত্রী প্রস্তাবিত সময়ের চেয়ে অনেক দেরিতে টার্মিনালে পৌঁছেছিলেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "যাত্রীর সঙ্গে থাকা পরিবারের সদস্যরা/স্বজনরা এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিট অফিসের কাছে অবস্থিত PRM (পার্সন উইথ রিডিউসড মোবিলিটি) ডেস্কে হুইলচেয়ারের জন্য অনুরোধ করার জন্য বিমান ছাড়ার নির্ধারিত সময়ের ৯০ মিনিটেরও কম সময় আগে জানান...”।
এয়ার ইন্ডিয়ার আরও দাবি, “সেই সময়ে চাহিদা সর্বোচ্চ থাকার কারণে, যাত্রীর আত্মীয়রা অপেক্ষার ১৫ মিনিটের মধ্যে কোনও হুইলচেয়ার ফাঁকা পাননি। তবে হুইলচেয়ারের জন্য এক ঘণ্টা অপেক্ষা করার দাবি ভিত্তিহীন।”
অন্যদিকে, বৃদ্ধার নাতনি পারুল কানওয়ার সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে দাবি করেছেন, হুইলচেয়ারের অপেক্ষায় থেকে তা না পেয়ে কোনও উপায় না দেখে আশি বছরের ওই বৃদ্ধা পরিবারের একজনের সাহায্যেই টার্মিনাল ৩-এর পার্কিং লেন ধরে হাঁটার চেষ্টা করেছিলেন। বিমানবন্দরে ঢোকার পরেও তিনি সাহয্য পাননি। অবশেষে, পা জবাব দিয়ে দেয় এবং তিনি এয়ার ইন্ডিয়ার প্রিমিয়াম ইকোনমি কাউন্টারের সামনে পড়ে যান।
পারুল পোস্টে আরও লিখেছেন, “আমরা প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য অনুরোধ করেছি, কিন্তু কেউ সাহায্য করেনি। উল্টে, আমাদের সাহায্য পেতে মেডিকেল ইন্সপেকশন (MI) রুমে যেতে বলা হয়েছিল। অবশেষে, হুইলচেয়ার এসে পৌঁছয়। ততক্ষণে বৃদ্ধার মাথায় ও নাকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে এবং ঠোঁটে আঘাত লেগেছে। তবে সঠিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই তাঁকে দ্রুত বিমানে তুলে দেওয়া হয়। বিমানে, ক্রুরা বরফ দিয়ে সাহায্য করেছিল এবং চিকিৎসা সহায়তার জন্য বেঙ্গালুরু বিমানবন্দরে খবর দেন। সেখানে একজন ডাক্তার তাঁকে দেখেন এবং দু'টি সেলাই পড়ে।”
আরও পড়ুন- বিমানবন্দরে লাইনে দাঁড়ানোর দিন শেষ! কীভাবে ব্যবহার করবেন DigiYatra অ্যাপ?
পরিবারের অভিযোগ, ওই বৃদ্ধা পড়ে যাওয়ার পরে এয়ার ইন্ডিয়ার কোনও কর্মীই সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেননি। আর বিমান সংস্থা নিজের বিবৃতিতে বলেছে, "বৃদ্ধা স্বেচ্ছায় তাঁর সঙ্গীদের সঙ্গে হেঁটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি দুর্ভাগ্যবশত বিমানবন্দর চত্বরে পড়ে গিয়েছিলেন। ঘটনাটি লক্ষ্য করার পরে, দিল্লি বিমানবন্দরের আধিকারিকরা, সেই সঙ্গে বিমানবন্দরে কর্তব্যরত চিকিৎসক অবিলম্বে তাঁর কাছে উপস্থিত হন এবং প্রাথমিক চিকিত্সা করেন। আমরা জানতে পারি যে অতিরিক্ত চিকিত্সার জন্য চিকিৎসক প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তবে তা গ্রহণ করা হয়নি এবং অতিথির পরিবারের সদস্যরা বেঙ্গালুরুতে যাওয়ার উপরেই জোর দিয়েছিলেন।"
ওই বৃদ্ধা এখন বিপদপমুক্ত ঠিকই, তবে সুস্থ হতে তিন মাস সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছে তাঁর পরিবার। এই হয়রানির জবাবদিহি চেয়ে ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল এভিয়েশন এবং এয়ার ইন্ডিয়ার কাছে অভিযোগ দায়ের করেছে ওই পরিবার।