সবই কর্মের ফল! দশ বছর আগের এই কাজের শাস্তিই এখন পাচ্ছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী?
Rahul Gandhi Jail 2013 Ordinance : নিজের কর্মের সাজাই এখন ব্যুমেরাং হয়ে তাঁর দিকে ফিরে এসেছে, কটাক্ষ গেরুয়া শিবিরের।
ইংরেজিতে একটা শব্দ আছে – ‘Karma’। বেশিরভাগ সময়ই অনেকে ব্যবহার করেন এটি। অবশ্য বাংলাতেও এর ভাবগত অর্থ মোটামুটি একই। মানে? ‘যেমন কর্ম, তেমন ফল’। এই প্রবাদটি নিশ্চয়ই শুনেছেন। বিজেপির সর্বভারতীয় নেতা, মন্ত্রীরা এখন এই প্রবাদই প্রতি মুহূর্তে উচ্চারণ করছেন। তাঁদের লক্ষ্য? কংগ্রেস নেতা ও সাংসদ রাহুল গান্ধী। নিজের কর্মের সাজাই এখন ব্যুমেরাং হয়ে তাঁর দিকে ফিরে এসেছে, কটাক্ষ গেরুয়া শিবিরের।
বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চই রাহুল গান্ধীকে দোষী সাব্যস্ত করেছে সুরাটের আদালত। কারণ? ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের প্রচারের সময় কর্ণাটকে একটি জনসভা করেছিলেন রাহুল। সেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে তীব্র আক্রমণ করেন তিনি। সেইসঙ্গে এও বলেন, “নীরব মোদি, ললিত মোদি, নরেন্দ্র মোদি। সব মোদিরাই এরকম চোর কেন?” আর এই কথাটাই আগুনে ঘি ফেলেছে। ভারতের রাজনৈতিক মহল উত্তপ্ত হয়েছিল শাসক-বিরোধী তরজায়। বিজেপির দাবি, একটা সম্প্রদায়কে এভাবে অযথা আক্রমণ করার কোনও অধিকার নেই রাহুল গান্ধীর। অন্যদিকে কংগ্রেসের বক্তব্য ছিল, তিনি কাউকে আঘাত দেওয়ার জন্য এমনটা বলেননি।
আরও পড়ুন : “সব মোদিই চোর!” দু’বছরের সাজা রাহুল গান্ধীর, জেলেই থাকতে হবে প্রধান বিরোধী নেতাকে?
কিন্তু সেই মন্তব্যের জেরেই মামলা দায়ের করা হয়। বিহার ও গুজরাতের সুরাটের বিজেপি নেতারা রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। চার বছর ধরে চলছিল শুনানি। অবশেষে সুরাটের আদালতের বিচারপতি রাহুল গান্ধীকে দোষী সাব্যস্ত করেন। সাজা হিসেবে দুই বছরের কারাবাসের শাস্তিও দেন। তবে এর সঙ্গে এক মাসের জামিনও দেওয়া হয়েছে তাঁকে। এই সময়ের মধ্যে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন রাহুল। তবে রাজনৈতিক মহলের একটাই প্রশ্ন, সাংসদ পদটা আদৌ টিকে থাকবে তো রাহুল গান্ধীর? ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের আগে কি চরম বিপদে পড়ল কংগ্রেস ও বিরোধীরা?
সেই বিষয়টা তো ক্রমশ প্রকাশ্য। আগামীদিনের কাজ, পরিস্থিতি তার উত্তর দেবে। তবে আপাতত বিজেপি নেতারা বলছেন, রাহুল গান্ধী নিজের পাতা ফাঁদেই পা দিয়েছেন। এক দশক আগে, অর্থাৎ ২০১৩ সালে এমন একটি কাজ করেছিলেন, যার ফল এখন ব্যুমেরাং হয়ে তাঁর কাছে ফিরে এসেছে। তার জেরে বিপদে পড়েছে কংগ্রেসও। কিন্তু কোন ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করছে গেরুয়া শিবির?
২০১৩ সাল। তখনও কেন্দ্রে রয়েছে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকার। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রয়েছেন ডঃ মনমোহন সিং। কংগ্রেস নেতাদের একের পর এক দুর্নীতি নিয়ে সরব তৎকালীন বিরোধী বিজেপিরা। তখনই সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ রায় দেওয়া হয়। লিলি থমাস বনাম সরকার মামলায় দেশের শীর্ষ আদালত বলে, যদি কোনও জনপ্রতিনিধি অপরাধ করেন এবং তাঁর অন্তত দুই বছরের কারাবাসের সাজা হয়, তবে তাঁর সেই পদটি সঙ্গে সঙ্গে খারিজ করা হবে। তিনি সেই পদটি হারাবেন। পূর্ববর্তী আইনে বলা হয়েছিল, উচ্চ আদালতে আবেদন ও নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার জন্য জনপ্রতিনিধিদের তিন মাসের ছাড় দেওয়া হতো। সেটা অসাংবিধানিক বলে সুপ্রিম কোর্ট।
আরও পড়ুন : বিজেপিকে রুখতে কেন কংগ্রেস ও কমিউনিস্টদের বাদ দিয়ে তৈরি হবে তৃতীয় ফ্রন্ট?
এরপরই নড়েচড়ে বসে ইউপিএ সরকার। শীর্ষ আদালতের এই নিরদেশ বাতিল করার জন্য বিশেষ অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়। কংগ্রেস নেতাদের গ্রেফতারের হাত থেকে বাঁচানোর জন্যই এই অর্ডিন্যান্স? রাজনৈতিক মহলের একাংশ তেমনটাই মনে করে। এর জেরে প্রবল বিরোধিতাও শুরু হয়। তার মাঝেই একটা কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেন রাহুল গান্ধী। অজয় মাকেনকে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক আয়োজন করে নিজেদেরই প্রশাসনের তীব্র সমালোচনা করেন। সেইসঙ্গে অর্ডিন্যান্সের কাগজটি ছিঁড়ে ফেলতেও বলেন।
তারপর ২৩ মার্চ, ২০২৩-র দিনটি। রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ এখন খারিজ হওয়ার মুখে। আপাতত সাময়িক রেহাই পেলেও পরে কী হবে, কেউ জানেন না। কিন্তু রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, এখন এই বিষয়টিকে কীভাবে রাজনীতির ময়দানে কাজে লাগাতে পারেন রাহুল গান্ধী, সেটাই দেখার। ভারত জোড়ো যাত্রায় এক অন্য রাহুল গান্ধীকে দেখা গিয়েছে বলে দাবি করেন অনেকেই। তাঁর জনপ্রিয়তাও তখন বেড়েছে। তিনি নিজে তো বটেই, বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও বারবার বলেছেন, রাহুল সবসময় সত্যের পথে চলেন। তখন যেটা ঠিক মনে হয়েছিল, করেছেন। এখনও সত্যের পথেই চলবেন। ঠিক যেমনভাবে নির্বাচনে হারের পর আবারো প্রবল বিক্রমে ফিরে এসেছিলেন রাহুল-প্রিয়াঙ্কার ঠাকুমা, প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। রাহুল কি সেই কাজটাই করবেন? ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের আগে একেই অস্ত্র বানাবেন নিজের? এবার কি আসরে নামবেন খোদ সনিয়া গান্ধীও? সেটাই এখন দেখার।