সাইকেলের থেকেও আস্তে চলে একটা ট্রেন! অবাক করবে ভারতের সবচেয়ে ধীর গতির এই ট্রেন
India’s slowest train : বন্দে ভারতের যুগেও দেশে দিব্যি রোজ চাকা গড়াচ্ছে ধীর গতির এই ট্রেনটির। কোথায় চলে? কতটা সময় নেয় জানেন?
মানুষ এখন ছুটছে। যান্ত্রিক যুগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতি নিয়ত বশ মানাচ্ছে সময়কে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার দিন আর নেই। এখন সময় বাঁচাতে একটা বাসের পরিবর্তে প্রয়োজনে তিনটে অটো বদলে হলেও চলে যেতে হচ্ছে। সুযোগ থাকলে ট্রেনের বদলে আজকাল বেশিরভাগ মানুষই সময় বাঁচাতে প্লেনে যাতায়াতকেই বিকল্প হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। আর এই অভ্যাসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তাই রেল কর্তৃপক্ষও এনেছে নয়া প্রযুক্তি। রাজধানী, শতাব্দী অথবা দুরন্ত এক্সপ্রেসের গতিকে ছাপিয়ে বাজারে এসেছে বুলেট ট্রেন। কিন্তু এই সব কিছুর পাশাপাশি আমাদের দেশেই রয়েছে এমন একটি ট্রেন, যা কিনা তার ধীর গতির জন্যই পরিচিত। ফাস্ট ফরোয়ার্ড এই যুগেও দিব্যি টিকে রয়েছে ট্রেনটি। শুধু তাই নয়, যাত্রী পরিষেবাও বহাল রেখেছে। এমনকী আস্তে চলার নিরিখেই দেশের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করেছে এই ট্রেন।
লোকাল অথবা এক্সপ্রেস ট্রেন নয়, এটি একটি প্যাসেঞ্জার ট্রেন। অথচ গতি এত কম। নাম নীলগিরি প্যাসেঞ্জার ট্রেন। ট্রেনটির গতি শুনলে অনেকেই অবাক হবেন। মোটামুটি ঘণ্টায় মাত্র ৯ কিলোমিটার বেগে চলে এই ট্রেনটি। তবে দর্জিংয়ের টয় ট্রেন ভেবে একে গুলিয়ে ফেললে ভুল হবে। ভারতের সবচেয়ে আস্তে চলা ট্রেনটি চলে তামিলনাড়ুর মেত্তুপালায়াম থেকে উটি পর্যন্ত। আবার ফেরে উটি থেকে মেত্তুপালায়ামে। মাত্র ৪৬ কিলোমিটার রুট অতিক্রম করে এই ট্রেনটি। আর তাতেই সময় লাগে ৫ ঘণ্টা। তবে সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হল এটাই যে, এই ট্রেনে সব সময়ই যাত্রীদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। এমনকী ট্রেনের এই এত ধীর গতি নিয়ে কোনও অভিযোগও করে না কেউই।
আরও পড়ুন - ট্রেন তো নয়, নরক! ভারতীয় রেলের সবচেয়ে নোংরা ট্রেন কোনগুলি?
ভাবা যায়, বন্দে ভারতের যুগেও দেশে দিব্যি রোজ চাকা গড়াচ্ছে ধীর গতির এই নীলগিরি প্যাসেঞ্জার ট্রেনের। এমনকী এই গতির জন্যই এই ট্রেন ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের মর্যাদা পেয়েছে। যদিও এটি দার্জিলিংয়েরটয় ট্রেন নয় তবুও আসতে চলার কারণ হল দুর্গম পাহাড়ি এলাকা। এইরকম পথ দিয়ে চলে বলেই ট্রেনটি এতটা ধীর গতিতে যায়। দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের সম্প্রসারণ হিসাবে তামিলনাড়ু থেকে উটি গামী এই ট্রেনের পরিচিতিও দেশজোড়া।
ইউনেস্কোর ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৮৫৪ সাল নাগাদ প্রথম নীলগিরির পাহাড়ি পথে রেলওয়ে নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। যদিও পাহাড়ি এলাকায় ট্রেন চলাচল নিয়ে ধোঁয়াশা কাটতে অনেকটাই সময় কেটে যায়। অবশেষে কাজ শুরু হয় ১৮৯১ সালে। তারপর টানা সতেরো বছর কাজ চলে। ১৯০৮ সালে শেষ হয় এই রেলপথ নির্মাণের কাজ। সেই সময়ের নিরিখে একেবারে সর্বশেষ আধুনিক সমস্ত প্রযুক্তিই ব্যবহার করা হয়েছিল এই কাজে।
৩২৬ মিটার উচ্চতা থেকে শুরু হয়ে ২২০৩ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা হয় এই রেলপথটি। পাহাড়ি এলাকা মানেই অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। চারপাশে সবুজে ঘেরা পরিবেশ, ঘন জঙ্গল, চা বাগান, আর এগুলোকে ঠিক পাশে রেখেই চলে নীলগিরি প্যাসেঞ্জার ট্রেন। ৪৬ কিলোমিটারের এই যাত্রাপথে পড়ে অনেকগুলি সুড়ঙ্গ। রয়েছে ১০০টিরও বেশি রেল সেতু। আজকের যুগে যেখানে সবাই ছুটছে সেই সময়ে দাঁড়িয়েও সাইকেলের থেকেও কম গতির একটি ট্রেন, ভাবতে অবাক লাগে ঠিকই তবে একবার চড়লে মন ভরে যাবে নিশ্চিত।