'অত্যাশ্চর্য কৃত্রিম চক্ষু' তৈরি করে রবিঠাকুরকে যে চিঠি লিখেছিলেন জগদীশ চন্দ্র

Jagadish Chandra Bose Letters: "আমি সম্প্রতি একটি অত্যাশ্চর্য্য কৃত্রিম চক্ষু প্রস্তুত করিতে সমর্থ হইয়াছি। এই চক্ষে অনেক আলো দৃষ্ট হয় যাহা আমরা দেখিতে পাই না," রবিকে লিখেছিলেন জগদীশ

কলিকাতা

৬ ই মার্চ ১৯০০

সুহৃদ্বরেষু

এ কয়দিন বড় ব্যস্ত ছিলাম। এজন্য লিখিতে পারি নাই। আমি এ কয়দিন 'মেঘ ও রৌদ্রের' মধ্য দিয়া গিয়াছি। মেঘের মধ্যে রজতরেখা কখন কখন দেখা দিয়াছে। সেই যে চিঠি তলব হইয়াছিল, তাহার উত্তরে লিখিয়াছিলাম যে L.G. অনেককাল হইতে আমার কার্য্যে একটু একটু উৎসাহ দান করিয়াছেন। এজন্য আমার কার্য্য যাহাতে সুসম্পন্ন হইতে পারে তাহার জন্য আমার নিবেদন জানাইয়াছি। ইতিমধ্যে Sir J. Woodburn আমার Laboratory-তে আমার experiment দেখিতে আসিয়াছিলেন। কি কারণে জানি না, বাজারে রাষ্ট্র যে তিনি অতিশয় সন্তষ্ট হইয়াছেন। আমার নিকটও বিশেষ সন্তোষ ও Experiment দেখিয়া আশ্চর্য্যভাব প্রকাশ করিলেন; এবং বলিলেন যে আমার ছাত্রদিগকে উৎসাহিত করিবার জন্যই তিনি কতকগুলি Scholarship সৃষ্টি করিতে ইচ্ছুক হইয়াছেন। আরও বলিলেন আমি যাহাকে মনোনীত করিব তাহাকে ১০০ টাকা করিয়া ৩ বৎসর বৃত্তি দিবেন। আমাদের Principal এসব দেখিয়া একটু আশ্চর্য হইয়াছেন এবং আমার উপর একটু ভাল ভাব দেখাইয়াছেন। আর Director লিখিয়া পাঠাইয়াছেন যে 'তুমি আমার চিঠি ভুল বুঝিয়াছ'!! 'Governor তোমাকে পারিস পাঠাইতে চান। এ বিষয় report চাহিয়াছেন, এ সম্বন্ধে তোমার সহিত আলাপ করিতে চাহি।' আজ গিয়াছিলাম। প্রথম প্রথম বড় Stiff এবং formal; তারপর excited হইয়া বলিলেন, যে 'এসব অতি আশ্চর্য্য, আমি আমার বন্ধু দু'একজনকে এসব দেখাইতে চাহি, কবে Laboratory-তে আসিলে সুবিধা হইবে,' ইত্যাদি!

বড় উৎসাহিত দেখিলাম, আর এসব যে অতি important একথাও বলিলেন। তবে পারিস যাইবার কথা উঠিলে দেখিলাম পূর্ব ভাব অল্প অল্প ফিরিয়া আসিতেছে। বলিলেন যে ইহার পরে গেলে হয় না? 'The only difficulty is that there is no one who can take up your work during your absence, the college will suffer,' etc. আমি যে ইতিপূর্ব্বে গিয়াছিলাম এবং তখনও কলেজ এক প্রকার চলিয়াছিল, একথা জানা থাকিতেও যখন আপত্তি করিলেন, তখন আমি আর কি করিব? তারপর বলিলেন যে, Send me your letter of invitation from Paris and I will send a repot। বলিতে লজ্জিত হইতেছি যে সেই নিমন্ত্রণ-পত্র অনেকদিন আমার পকেটে থাকিয়া সম্ভবত হয়ত ধোপাবাড়ী গিয়াছে- অন্ততঃ আমি খুজিয়া পাইতেছি না। এরূপ অবস্থা কিরূপ শোচনীয় মনে করিতে পারেন। আমি বলিলাম, 'যদি পাঁচ সপ্তাহ অপেক্ষা করিতে পারেন, তবে নূতন একখানা নিমন্ত্রণ-পত্র হাজির করিতে পারি।' কিন্তু সেই চিঠি এখন না হইলে নাকি চলিবে না। যাওয়ার কোন সম্ভব দেখিতেছি না। গত Mail-এ আমার Royal Societyর এক Paper ছাপা হইয়া আসিয়াছে Electrician কে সেই কাগজের একখানা copy পাঠাইয়াছিলাম এবং তাহার কাগজে লিখিতে পারিলাম না বলিয়া দুঃখ জানাইয়াছিলাম। ভয় ছিল যে ইহাতে editor দুঃখিত হইবেন। নিম্নলিখিত extract হইতে বুঝিবেন যে তাহারা generous হইতে পারে।

'I am delighted with the most interesting and lucid abstract of your royal Society Paper. The Subject is of such extreme interest, both scientifically and practically, at the present time, that I Hope to be able to give prominence to the abstract at an early issue. I am writing to the Secretaries of the Royal Society to obtain their sanction to the publication of your abstract.

'I sincerely trust that your energetic effort to improve the physical department of the Presidency College is meetig with great success. I hope that the authories are more favourable disposed than heretofore, to the extension of higher Science teaching. Should there be any matter which it would be of utility to publish in the 'Electrician', I should be very pleased if you will let me have early information about it.'

আমি সম্প্রতি একটি অত্যাশ্চর্য্য কৃত্রিম চক্ষু প্রস্তুত করিতে সমর্থ হইয়াছি। এই চক্ষে অনেক আলো দৃষ্ট হয় যাহা আমরা দেখিতে পাই না। তা ছাড়া ইহা রক্তিম ও নীল আলো অতি পরিষ্কাররূপে দেখিতে পায়। আশ্চর্য্যের বিষয় এই যে, ইহা Slightly green-bling| আপনার চক্ষু ইহা কি করিয়া অনুকরণ করিল বুঝিতে পারি না।

আমার দৃষ্টি সম্বন্ধে theory-র যাহা একটু অসম্পূর্ণতা ছিল এই কৃত্রিম চক্ষু তাহা সম্পূর্ণ করিতে পারিবে। ইহার আশ্চর্য্য development হইতে অনেক নূতন তথ্য আবিষ্কৃত হইতে পারিবে। তবে তাহা সম্পূর্ণ করিতে সময় পাইব কিনা জানি না।

আমার শরীর মন একটু অবসন্ন আছে। আপনার আতিথ্য গ্রহণ করিয়া সুখী হইব। আপনি যদি শিলাইদহে থাকেন তবে শুক্রবার দিন রাত্রে এখান হইতে রওয়ানা হইব। শনিবার দিন সকালে পৌঁছিব। রবিবার দিন বৈকালে ফিরিয়া আসিব। সোমবার দিন ছুটী পাই তাহা হইলে আর একদিন থাকিব। যা যা করিয়াছি, আপনাদের ওখানকার শান্তির মধ্যে থাকিয়া লিখিয়া লইব।

যদি শুক্রবার দিন না আসিতে পারি তবে Telegram করিব। নতুবা শুক্রবার দিন আসাই স্থির। যদি পারেন তবে এক লাইন লিখিবেন।

আপনার

শ্রীজগদীশচন্দ্র বসু

পুঃ দুজন Scholar নিযুক্ত করিয়াছি।

More Articles