শাহজাহান কোথায়? 'ওঁরাই' সবটা জানেন!
Abhishek Banerjee on Sheikh Shahjahan : অভিষেকের দাবি, বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন না হলে ১০ দিনের মধ্যে শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে পারত রাজ্য পুলিশ।
শিবু হাজরা গ্রেফতার, উত্তম সর্দার গ্রেফতার, শাহজাহানের ভাই শেখ সিরাজুদ্দিনকেও তৃণমূলের সব প্রশাসনিক পদ থেকে সরানো হয়েছে। শেখ শাহজাহানকে ধরতে পারলেই সন্দেশখালি শান্ত হবে। তৃণমূলের বুকের উপর চাপানো প্রাক নির্বাচনী শঙ্কার জগদ্দল নেমে যাবে। কিন্তু কিছুতেই গ্রেফতার করা যাচ্ছে না শাহজাহানকে। নিন্দুকেরা অবশ্য বলছেন, করা যাচ্ছে না নয়, করা হচ্ছে না। স্থানীয় বাসিন্দাদের কেউ কেউ বলছেন শাহজাহান রয়েছেন সন্দেশখালিতেই। সিপিআইএম নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ও বলছেন নিজের ডেরাতেই আছেন শাহজাহান। সবটাই জানে পুলিশ, অথচ! তবে কুণাল ঘোষ বলছেন, সাত দিনেই গ্রেফতার হবে শাহজাহান। ক'দিন আগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন ১০ দিনেই শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে পারত রাজ্য পুলিশ! যেভাবে এত নির্দিষ্ট করে সাত দিনে, দশ দিনের কথা বলছেন অভিষেক-কুণালরা, তাতে প্রশ্ন উঠছে, এত নিশ্চিত হচ্ছেন কী করে অভিষেক, কুণালরা? তারা কি রাজ্যের পুলিশ মন্ত্রী?
অভিষেক দিন কয়েক আগেই বলেছেন হাইকোর্টের স্থগিতাদেশই শাহজাহানকে গ্রেফতার না করতে পারার পিছনে মূল কারণ। হাইকোর্ট রাজ্য পুলিশের হাত-পা বেঁধে দিয়েছে। হাইকোর্ট পুলিশকে ক্ষমতা দিলেই এমনটা হতো না। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘গত ৭ ফেব্রুয়ারি সন্দেশখালি নিয়ে পুলিশের তদন্তে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছিল। ঠিক তার পরের দিন অর্থাৎ ৮ ফেব্রুয়ারি থেকেই হিংসা এবং বিক্ষোভ শুরু হয় সন্দেশখালিতে।’’ অভিষেক জানাচ্ছেন, শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল রাজ্য সরকার। ইডি শাহজাহানকে ধরতে পারেনি কিন্তু কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা গিয়ে রাজ্য পুলিশের ওই এফআইআরের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ পেয়েছে। আর স্টে অর্ডার বা স্থগিতাদেশ জারি করা হলে তো কাউকেই গ্রেফতার করা যাবে না বা কাউকে ডেকেও পাঠানো যাবে না। শাহজাহানকে কেন গ্রেফতার করছে না পুলিশ বলে প্রশ্ন তুলছে যারা, তাঁদের উদ্দেশ্যে সরাসরি অভিষেক বলছেন, পুলিশের উপর জারি হওয়া স্থগিতাদেশেরই সদ্ব্যবহার করেছে বিজেপি।
শেখ শাজাহান গ্রেপ্তার নিয়ে .@abhishekaitc সঠিক বলেছিলেন। আদালতের আইনি জটেই বিষয়টা আটকে ছিল। তার সুযোগে রাজনীতি করছিল বিরোধীরা। আজ হাইকোর্ট সেই জট খুলে পুলিশকে পদক্ষেপে অনুমোদন দেওয়ায় ধন্যবাদ। সাত দিনের মধ্যে শাজাহান গ্রেপ্তার হবে।
— Kunal Ghosh (@KunalGhoshAgain) February 26, 2024
আরও পড়ুন- সন্দেশখালি কি আজকের নন্দীগ্রাম?
কিন্তু আদালত বলছে উল্টো কথা! কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, শাহজাহান শেখকে গ্রেফতার করায় কোনও বাধা ছিল না পুলিশের। পুলিশকে এমন কোনও নির্দেশও দেওয়া হয়নি। ইডির মামলায় সিট গঠনের উপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছিল। শাহজাহানকে গ্রেফতার করা যাবে না এমন কথা কোথাও বলা হয়নি। পাল্টা জবাব দিতে অভিষেক আদালতের নির্দেশনামাটিই সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করে দিয়েছেন। তাতে নির্দিষ্ট অংশ চিহ্নিত করে দেখিয়েছেন, রাজ্য পুলিশকে ইডির আবেদন সংক্রান্ত মামলায় কোনও রকম পদক্ষেপ এবং তদন্ত না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আদালতের তরফে। তৃণমূল এখন বলছে, আদালত বিষয়টি স্পষ্ট করে দেওয়াতে শাহজাহানের গ্রেফতারিতে কোনও বাধা নেই।
তাই শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে দিচ্ছেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এই রটনা সত্য নয়, দাবি অভিষেকের। অভিষেক বলছেন, সুদীপ্ত সেন থেকে শুরু করে পার্থ চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিরুদ্ধেও তৃণমূল ব্যবস্থা নিয়েছে। তাহলে শাহজাহান এমন কে যে তাকে গ্রেফতার করা যাবে না? অভিষেকের দাবি, বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন না হলে ১০ দিনের মধ্যে শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে পারত রাজ্য পুলিশ। কীভাবে এত নিশ্চিত করে বলছেন তিনি? তাহলে কি তৃণমূল জানে কীভাবে কোথায় শাহজাহানকে পাওয়া যাবে? বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজ্য পুলিশকে সময় দিচ্ছিল তৃণমূল।
BJP & ANTI BENGAL Media reaped the benefits of this EMBARGO like true opportunists!
— Abhishek Banerjee (@abhishekaitc) February 27, 2024
CHRONOLOGY:
⏸️ STAY given on 7th.
▶️ VIOLENCE and VILIFICATION began the following day, on the 8th.
With yesterday's clarifications from Calcutta HC, I'm confident justice will soon prevail. pic.twitter.com/S5bukTPO6x
আরও পড়ুন- বাংলায় সন্দেশখালির জন্য কতটা আসন কমবে তৃণমূলের? প্রশান্ত কিশোর যা বলছেন
তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ তো বলেই ফেলেছেন আদালতের আইনি জটেই বিষয়টা আটকে ছিল। আদালত যখন বলেছে শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে বাধা নেই তাহলে "সাত দিনের মধ্যে শাজাহান গ্রেপ্তার হবে।" কী করে ৭ দিনের টার্গেট রাখতে পারছেন কুণাল? তৃণমূল জানে ভোট করাতে শাহজাহানকে দরকার ওই অঞ্চলে, তাই কি এতদিন লুকিয়ে রাখা হচ্ছে? সন্দেশখালি যেভাবে রাজ্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে দেশের রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে উঠেছে তাতে সিঁদুরে মেঘ দেখছে শাসকদল। বিজেপি এবং অন্য বিরোধীদের চাপে, সর্বোপরি সন্দেশখালির মানুষের চাপে পরস্থিতি লাগামছাড়া হতে দেখেই এবার খাঁচা থেকে শাহজাহানকে বের করে আনার পালা? প্রশ্ন উঠছে, সন্দেশখালিকে শান্ত করতে, বিজেপির মুখে ঝামা ঘষে শাহজাহানকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে তৃণমূল যদি ভোটের আগে মোক্ষম অস্ত্রটি প্রয়োগ করেও, শাহজাহান পরবর্তী কোনও দাপুটে স্থানীয় নেতাকে তৈরি হয়ে গিয়েছে? এমন এলাকাতে ভোট করাতে, সাম্রাজ্য অটুট রাখতে বহু বহু শাহজাহানকে দরকার পড়ে শাসকের। সন্দেশখালির জ্বালা কি জুড়োবে শাহজাহানের গ্রেফতারিতে? নাকি তা আরও এক উত্থানের ভূমি তৈরি করবে?