সমুদ্রের জলে হু হু করে বাড়ছে অ্যাসিডের মাত্রা! কোন বিপদ অপেক্ষায়
Global Warming: দ্রুত বরফ গলার সঙ্গে সমুদ্রের জল আস্তে আস্তে আম্লিক হয়ে পড়ছে। অর্থাৎ, জলে অ্যাসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
With every drop of water you drink, every breath you take, you're connected to the sea. No matter where on Earth you live, most of the oxygen in the atmosphere is generated by the sea.
আমাদের গ্রহ পৃথিবীতে প্রথম প্রাণের সঞ্চার ঘটেছিল সমুদ্রেই। তার পর কোটি কোটি বছরের বিবর্তন, এবং আজ আমরা এমন একটি পর্যায়ে এসে পৌঁছেছি, যেখানে এই গতিতে আমাদের আধুনিক সভ্যতা এগোলে আর কিছুদিন পরেই সমুদ্রে সামুদ্রিক প্রাণীর চেয়ে বেশি থাকবে প্লাস্টিক। এই প্রতিবেদন যদিও প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে নয়। এই প্রতিবেদন তার চেয়েও গুরুতর বিষয় নিয়ে।
বিষয়টি নিয়ে বিজ্ঞানীরা অনেকদিন ধরেই চর্চা করছেন, সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর 'The Science' পত্রিকার গবেষণাও তাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। কী সেই বিষয়? আমরা জানি যে, বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে পৃথিবীর দুই গোলার্ধ থেকে শুরু করে সমস্ত হিমবাহেরই বরফ দ্রুত গতিতে গলছে। আস্তে আস্তে সমুদ্রের জলস্তর একটু একটু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, বিপদ শুধুমাত্র বরফের দ্রুত গলে যাওয়াতেই সীমাবদ্ধ নেই। এই দ্রুত বরফ গলার সঙ্গে সমুদ্রের জল আস্তে আস্তে আম্লিক হয়ে পড়ছে। অর্থাৎ, জলে অ্যাসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কীভাবে?
আরও পড়ুন: সম্পূর্ণ নতুন মানুষ প্রজাতির সন্ধান এনে দিল নোবেল! যে রহস্যর সমাধান করল বিজ্ঞান
প্রথমেই উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, সমুদ্রের জলের প্রকৃতি কিন্তু ক্ষারীয়। সাধারণত সমুদ্রের জলের PH মূল্য 8.1। যদি শুধুমাত্র আর্কটিক অঞ্চলের উদাহরণই দেওয়া যায়, তাহলে দেখা যাবে, সেখানে বরফের দ্রুত গলে যাওয়ার ফলে সরাসরি সূর্যের আলোর প্রভাবে চলে আসছে অনেকটা পরিমাণ জল। সামুদ্রিক উদ্ভিদ সাধারণত বাতাস থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড শুষে থাকে। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন সূর্যের আলো। সমুদ্রের যে অংশ বরফের তলায় চাপা থাকে, সেখানে সূর্যের আলো পৌঁছয় না। স্বাভাবিকভাবেই সেখানে সালোকসংশ্লেষও হয় না। কিন্তু আর্কটিক অঞ্চলে বরফ দ্রুত গতিতে গলছে। সেই সঙ্গে সমুদ্রের অনেকটা অংশে সূর্যের আলোর প্রভাবে সালোকসংশ্লেষ হচ্ছে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষিত হচ্ছে। সেই কারণে সেখানকার জল পৃথিবীর অন্যান্য স্থানের তুলনায় ৩-৪ গুণ দ্রুত হারে আম্লিক হয়ে পড়ছে।
এর প্রভাব হতে পারে সুদূরপ্রসারী। এমনিতেই বাতাসে যত কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বাড়বে, তত জলে অ্যাসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রর জন্য তা যে কতটা ক্ষতিকারক, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বেশিরভাগ সামুদ্রিক প্রাণীই এই বদলে যাওয়া জলের প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে না। জলে যত অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়বে, ততই সম্ভাবনা বাড়বে অনেক প্রাণীর মৃত্যুর, অনেক সামুদ্রিক প্রজাতির বিলুপ্তির। সবার আগে চরম বিপদের সম্মুখীন হবে সেই সমস্ত সামুদ্রিক প্রাণীরা, যাদের শরীরে বিশেষ খোলস রয়েছে। যা তৈরিতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় ক্যালশিয়াম কার্বনেট। জলে যত অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়বে, তত কার্বনেটের পরিমাণ কমবে। সমস্ত সামুদ্রিক প্রাণীর খোলসের ক্ষয় হওয়া শুরু হবে। চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে প্রবাল প্রাচীর এবং প্যাঙ্কটনের বসতিরও। মৃত্যু হবে অনেক ধরণের মাছের প্রজাতিরও। এই সমস্ত ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে আমাদের মানবজাতির অস্তিত্বরক্ষার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু কীভাবে?
লেখার শুরুতেই একটি উক্তির ব্যবহার করা হয়েছে। আমাদের বায়ুমণ্ডলে যে পরিমাণ অক্সিজেন আছে, তার সত্তর শতাংশেরও বেশি আসে সমুদ্র থেকে। সেই অক্সিজেন প্রস্তুত হয় সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রের কারণেই। প্রত্যেকটি প্রাণীর এই কর্মকাণ্ডে বিরাট ভূমিকা রয়েছে। একটি প্রাণী বা কোনও এক ধরনের প্রজাতিও যদি এই কর্মকাণ্ডে অনুপস্থিত হয়ে পড়ে, তাহলে তার প্রভাব গোটা প্রক্রিয়াতে পড়তে বাধ্য। যদি কোটি কোটি সামুদ্রিক প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যায়, তাহলে মানবজাতির জন্য ঠিক কত বড় বিপদ অপেক্ষা করছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ইতিমধ্যেই মানুষের সীমাহীন সমুদ্রমন্থনের কারণে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে অনেক সামুদ্রিক প্রজাতি। মৎস্যচাষের গতি এতটাই বাড়াবাড়ি রকমের বৃদ্ধি পেয়েছে যে, অনেক মাছ স্বাভাবিকভাবে প্রজনন করারও সুযোগ পাচ্ছে না। সেই সঙ্গে গভীর সমুদ্রে তেল উত্তোলন, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জাহাজ থেকে সমুদ্রে লক্ষ লক্ষ লিটার তেল পড়ে যাওয়া তো আছেই।
এই বিপদ থেকে মুক্তির উপায় তাহলে কী? উপায় একটাই। মানুষের সচেতন হওয়া। সমুদ্রের অপরিসীম গুরুত্বকে বুঝে তাকে সর্বশক্তি দিয়ে রক্ষা করা। বিশ্ব উষ্ণায়নকে রোধ করা। পৃথিবীর বরফের সম্ভার যাতে গলে না যায়, তা নিশ্চিত করা।
এই গ্রহের ৪.৫ বিলিয়ন বছরের ইতিহাসে সমুদ্রের এত ক্ষতি হয়নি, যা গত দুশো বছরে হয়েছে। সেই অন্যায়ের সংশোধন করা। এ এক ভয়ংকর কঠিন লড়াই ঠিকই, কিন্তু অসম্ভব তো নয়। আজকের এই পরিস্থিতি মানুষেরই সৃষ্টি করা। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে মানুষই কিন্তু পারবে এই বিপর্যয় থেকে নিজেদের রক্ষা করতে। যদিও তার জন্য যে পরিমাণ রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন, তার বিন্দুমাত্রও দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু দেওয়ালে পিঠ যে ঠেকে গেছে। আর সদিচ্ছা না দেখিয়ে উপায় আছে কি? মনে হয় না। আগামী মাসে COP 27 আসছে। দেখা যাক, সমস্ত রাষ্ট্রনেতা ঠিক কী নিদান দেন।