নেই ক্রিকেট খেলার ঘরের মাঠ! তালিবানি শাসন সামলে যেভাবে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে আফগানিস্তান
T20 World Cup: গত ২৫ জুন টি-২০ বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টের সুপার এইটের ম্যাচে বাংলাদেশকে ডাকওয়ার্থ লুইস মেথডে আট রানে হারিয়ে জয় পায় আফগানিস্তান। এমনকী অস্ট্রেলিয়াকে পর্যন্ত ২৩ জুন গো হারান হারিয়ে দেয় আফগানিস্তান
প্রথম বার আইসিসি টি-২০ বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে আফগানিস্তান। প্রথমবার বড় কোনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইভেন্টে এমন একটা জায়গায় উঠে আসতে চলেছে তারা। দেশ জুড়ে তালিবানি শাসন। যা মানুষকে তাদের অধিকাংশ অধিকার থেকেই বঞ্চিত করে রেখেছে। বেধে রেখেছে তালিবানি শাসনের কড়া নিগড়ে। তেমন একটা সময় ক্রিকেট বিশ্বকাপের মঞ্চে সেমিফাইনালে ওঠা কম বড় কথা নয় আফগানিস্তানের জন্য। অথচ তাদের কাছে আছেই বা কি! ভাবতে পারেন নিজের দেশে খেলার মতো একটা মাঠ পর্যন্ত নেই তাদের কাছে।
গত ২৫ জুন টি-২০ বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টের সুপার এইটের ম্যাচে বাংলাদেশকে ডাকওয়ার্থ লুইস মেথডে আট রানে হারিয়ে জয় পায় আফগানিস্তান। এমনকী অস্ট্রেলিয়াকে পর্যন্ত ২৩ জুন গো হারান হারিয়ে দেয় আফগানিস্তান। যার ফলে ৫০ ওভার বিশ্বকাপের বিজয়ী অজিরা ছিটকে যায় টুর্নামেন্ট থেকেই। বাংলাদেশ যদি কোনও ভাবে আফগানিস্তানকে হারিয়ে দিত, তাহলে অস্ট্রেলিয়ার কাছে একটা সুযোগ থাকত সেমিফাইনালে যাওয়ার। কিন্তু তেমনটা হয়নি। আগামী ২৭ জুন আফগানিস্তান সেমিফাইনাল ম্যাচে মুখোমুখি হবে সাউথ আফ্রিকার সঙ্গে। সেই ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে থাইল্যান্ডে। ওই দিনই ভারত মুখোমুখি হবে ইংল্যান্ডের।
আরও পড়ুন: ক্রিকেট-দুনিয়ায় আজও বিতর্কিত ‘মানকরিং’ আউট! কোন ইতিহাস রয়েছে আড়ালে
খুব বড় রানের লক্ষ্যমাত্রা বাংলাদেশের সামনে না রাখতে পারলেও দুর্দান্ত বোলিংয়ের মুখে টিকতে পারেনি বাংলাদেশ। ফলে ৫ উইকেটে ১১৫ রানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে মুখ থুবড়ে পড়ে টাইগার্সরা। আফগানিস্তানের খেলোয়ার রশিদ খান চার ওভারেই চারটি উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশের মিডল অর্ডারকে ধ্বসিয়ে দিয়েছিল তাসের ঘরের মতোই। বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান লিটন দাস শেষপর্যন্ত অপরাজিত থাকলেও কাজে আসেনি বাংলাদেশের কোনও টেকনিকই। কার্যত জয় ছিনিয়ে নিয়ে সেমি ফাইনালে পৌঁছে গিয়েছে আফগানিস্তান। আফগান পেসার নবীন উল হকও তুলে নেন চারটি উইকেট। এই প্রথম বার সেমিফাইনালে পৌঁছে স্বভাবতই খুশি আফগানিস্তান।
২০১৬ সালের আগে কোনওদিনও আইসিসি বিশ্বকাপে খেলার সুযোগটাও পায়নি আফগানিস্তান। সেই অবস্থাটা বদলালো ২০১৬ সালের মার্চ মাসে। প্রথম বার আইসিসি বিশ্বকাপে মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হল আফগান দল। তাদের সামনে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২১০ রানের। সেই লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে পারেনি তারা। কিন্তু যে ১৭২ রান করেছিল আফগান ক্রিকেট দল, তা-ও কার্যত ছিল অপ্রত্যাশিতই। তার পর থেকে নানা উত্থান-পতন দেখেছে আফগানিস্তান ক্রিকেট টিম। তা সত্ত্বেও আট বছরের মধ্যেই সেমিফাইনাল পর্যন্ত যাওয়ার দমটুকু নিজের ক্ষমতায় জোগাড় করে নিয়েছে তারা। ২০০৭ সাল থেকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলছে বাংলাদেশ। অথচ এখনও পর্যন্ত একবারও সেমিফাইনালে উঠতে পারেনি তাদের দল।
𝐓𝐡𝐢𝐬 𝐕𝐈𝐂𝐓𝐎𝐑𝐘 𝐦𝐞𝐚𝐧𝐬 𝐭𝐡𝐞 𝐰𝐨𝐫𝐥𝐝 𝐭𝐨 𝐮𝐬! 🤩👏
— Afghanistan Cricket Board (@ACBofficials) June 25, 2024
Congratulations to the entire nation! 🙌#AfghanAtalan | #T20WorldCup | #AFGvBAN | #GloriousNationVictoriousTeam pic.twitter.com/R2vJKNiAHG
তালিবান শাসনে বেঁচে থাকা আফগানিস্তানে কোনও হোম ক্রিকেট গ্রাউন্ট নেই। বোর্ড অফ কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (BCCI) গ্রেটার নয়ডা ও কানপুরকে আফগানিস্তান ক্রিকেট দলের হোম ভেন্যু হিসেবে বেছে দিয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে আফগানিস্তান তাদের সবকটি হোম ম্য়াচ খেলেছে দেহরাদূন, লখনউয়ের একনা স্টেডিয়াম কিংবা গ্রেটার নয়ডায়।
আরও পড়ুন: পাক ক্রিকেটারের হারিয়ে যাওয়া ভাইকে খুঁজে দিয়েছিল বিশ্বকাপই
সেই সব প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেই ক্রিকেটের ইতিহাসে নতুন দিন নিয়ে এসেছে আফগান ক্রিকেট দল। অধিনায়ক রশিদ খানের গলায় শোনা গেল জয়ের সেই আত্মবিশ্বাস। দেশে ফিরে তাঁদের জন্য অপেক্ষা করছে বিরাট উদযাপন। আজ আফগানিস্তানের প্রতিটা নাগরিক গর্বিত। এই সেমিফাইনালে পৌঁছনো অন্য রকম এক আত্মবিশ্বাস উস্কে দিয়েছে দেশের প্রতিটা নাগরিকের বুকে। এই পথেই কি একদিন মিলবে জয়? এমনকী তালিবানি শাসনের কঠিন-কঠোর বেড়ি থেকেও কি একদিন ঠিক মিলবে মুক্তি। আশায় বুক বাঁধে আফগানিস্তান।