অস্ত্রোপচারের জন্য অ্যানাস্থেসিয়া করতেই ম্যাজিক! ১০ মিনিটে অবিশ্বাস্য অভিজ্ঞতা অধ্যাপকের

Anesthesia Experience : স্বরণ সিংয়ের মতে, এই অদ্ভুত ঘটনাটি ১০ থেকে ১২ মিনিটের জন্য স্থায়ী হয়েছিল।

অস্ত্রোপচারের আগে অ্যানাস্থেসিয়া করা অত্যন্ত সাধারণ একটি ঘটনা। যন্ত্রণা থেকে, ভয় থেকে মুক্তি দিতে, অস্ত্রোপচারকে আরও মসৃণ করতে চিকিৎসকরা নানা সময়েই রোগীকে সার্বিক বা আংশিকভাবে অবশ, অচেতন করে থাকেন। কিন্তু এই সাধারণ অসাড় হওয়ার ঘটনাটিই অসাধারণ এক অভিজ্ঞতার জন্ম দিয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব ওয়ারউইকের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সাধারণ অ্যানেস্থেসিয়া থেকে বেরিয়ে আসার সময় এমন এক ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন যা ব্যাখ্যা করাই কঠিন। এ এক অতীন্দ্রিয় অভিজ্ঞতা! রহস্যময় এই অভিজ্ঞতার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা খোঁজার চেষ্টাও হয়েছে। জার্নাল অব নার্ভাস অ্যান্ড মেন্টাল ডিজিজে এমন অদ্ভুত ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন প্রফেসর স্বরণ সিং। সাধারণ একটি অ্যানাস্থেসিয়া তাঁর কাছে মহাজাগতিক সত্যকে নাকি তুলে ধরেছিল! এই অভিজ্ঞতা শব্দে প্রকাশ করা সত্যিই কঠিন।

ঘটনাটি ঘটেছিল প্রায় ৪০ বছর আগে। ১৯৮৪ সালের ৪ এপ্রিল। ভয়াবহ এক পথ দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হন স্বরণ সিং। অস্ত্রোপচারের পর এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা ঘটে তাঁর। তারপর থেকেই প্রফেসর স্বরণ সিং বস্তুনিষ্ঠ বিজ্ঞানের চর্চাই করে চলেছেন। স্বরণ সিংয়ের মতে, এই অভিজ্ঞতা তাঁর নিজের অনুভূতি এবং অতীন্দ্রিয় সম্পর্ককে বোঝার ক্ষেত্রে ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

এই অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে স্বরণ বলছেন, মহাজাগতিক রহস্য যেন এক সরলরৈখিক সারল্যে অথচ বহুমুখীভাবে তাঁর কাছে উদঘাটিত হয়ে যায়। যেন এই বিপুল রহস্য অত্যন্ত সহজেই বুঝে যান তিনি। স্বরণ সিংয়ের মতে, এই অদ্ভুত ঘটনাটি ১০ থেকে ১২ মিনিটের জন্য স্থায়ী হয়েছিল। এবং এই মিনিট দশেকের অভিজ্ঞতায় তিনি সম্পূর্ণভাবে এমন কিছু জেনে যান যা আগে কখনও জানতেনই না।

আরও পড়ুন- চাইলেও মৃত্যু হয় না কখনও, পৃথিবী হোক বা মহাকাশ, সর্বত্র কার্যত অমর এই আণুবীক্ষণিক জীব

স্বরণ লিখছেন, "আমি জানি না যে আমি কীভাবে জানি, কিন্তু আমি এটা জানি যে আমি জানি।" স্বরণের মতে, স্থান, সময়, শক্তি, পদার্থ এবং জীবনের মধ্যে পারস্পরিক ক্রিয়াকে সম্পূর্ণরূপে বুঝতে পেরেছিলেন তিনি, ওই দশ বা বারো মিনিটেই। জীবন এক রূপ থেকে অন্য রূপে পরিবর্তিত হয়, কিন্তু জীবনী শক্তির মোট পরিমাণ স্থির এবং তা স্থিরই থাকে। একটি রূপের বৃদ্ধি ঘটলে অন্যটি কমে, এবং জীবনের ক্ষেত্রে একটি জীবনরূপ গড়ে ওঠে অন্য রূপখানি বিলুপ্ত হলেই।

এই অপ্রত্যাশিত অভিজ্ঞতাকে বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে স্বরণ সিং জানাচ্ছেন, এই ঘটনার একটি স্নায়বিক ভিত্তি থাকতেই হবে। বিষয়টির আরও গভীরে গিয়ে তিনি বর্ণনা করেছেন, কীভাবে মস্তিষ্কের অঞ্চলগুলি যেমন ইনসুলা, প্রিমোটর কর্টেক্স এবং ইনফেরিয়র প্যারিটাল লোব- এসবের সক্রিয়তা সমস্তই ধ্যানের সময় যেভাবে কাজ করে বা সাইকেডেলিক ওষুধের প্রভাবে আমাদের যে রহস্যময় অভিজ্ঞতা হয়, তার সঙ্গেই জড়িত।

তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, তাঁর নিজের মস্তিষ্কের কার্যকলাপে এই ধরনের পরিবর্তন সম্ভবত কোনও বিষাক্ত বা মাদকদ্রব্যের ফলেই হয়েছে। তবে এই সামান্য সময়ে যে অভিজ্ঞতার সম্মুখীন তিনি হয়েছিলেন তা ছিল এক্কেবারে খাঁটি ছিল। স্বরণ সিংয়ের যুক্তি, স্নায়ুর ক্রিয়াকলাপ নিঃসন্দেহে আমাদের মানসিক প্রক্রিয়াগুলিকে নির্ধারণ করে, তবে কিছু নির্দিষ্ট স্তরের চেতনা নিছক মস্তিষ্কের কার্যকলাপের চেয়েও গভীর কোনও কিছু থেকে জন্মাতে পারে। স্বরণ সিংয়ের এই দশ মিনিটের এক মহাজাগতিক ভ্রমণ আমাদের চেতনা, অভিজ্ঞতা এবং বাস্তবতাকে অদ্ভুত প্রশ্নের সম্মুখীন করে। সত্যিই কি অ্যানাস্থেসিয়ার পরে অসাড় দেহ ও চেতন আমাদের অতীন্দ্রিয় কোনও অভিজ্ঞতা দিতে পারে? সেসব কি স্বপ্ন? নাকি আমাদের অবচেতনে, অচেতনে এমনই সুস্পষ্ট হয়ে ধরা দেয় মহাজাগতিক রহস্য বা আপাত দৃষ্টিতে দুর্বোধ্য কোনও বিষয়? গবেষকরা এখনও আমাদের চেতনের মাটি খুঁড়ে চলেছেন, প্রতিনিয়তই বেরোচ্ছে অজানা সত্য।

 

More Articles