চাঁদের মাটিতে এবার প্রথম একজন মহিলা! তৈরি হলো যে বিশেষ স্পেসস্যুট...
First woman on Moon Spacesuit: সম্প্রতি Axiom এবং Prada নতুন একটি স্পেসস্যুট তৈরি করেছে।
মহাকাশে প্রথম যে নভোশ্চররা গিয়েছিলেন, সেই সময়ের থেকে এই মুহূর্তের মহাকাশযাত্রা একেবারেই ভিন্ন। মহাকাশ নিয়ে গবেষণা যত এগিয়েছে, ততই উন্নততর প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে মহাকাশযান থেকে শুরু করে নভোশচরদের ব্যবহার্য নানা কিছুরই আমূল বদল ঘটে গেছে। অ্যাপোলো মিশনের সময়ে নভোশ্চররা মহাকাশে যাওয়ার সময় এক্সট্রাভেহিকুলার মোবিলিটি ইউনিট (ইএমইউ) স্পেসস্যুট পরতেন কিন্তু গত ৫০ বছরে বিশ্ব যেভাবে পরিবর্তিত হয়েছে তা নতুন প্রজন্মের নভোশ্চরদের চাঁদে যাওয়ার জন্য নতুন পোশাক বা স্পেস স্যুটের প্রয়োজনও দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি Axiom এবং Prada নতুন একটি স্পেসস্যুট তৈরি করেছে। একটি স্পেসস্যুটই যেন আস্ত এক মহাকাশযান।
Axiom Extravehicular Mobility Unit (AxEMU) নামের এই স্পেসস্যুট কাস্টমাইজড স্পেসক্রাফটের মতো। স্পেসএক্স এক্সট্রাভেহিকুলার অ্যাক্টিভিটি স্যুটের মতো লাইফ সাপোর্ট নেই এতে। এই স্যুটে অন্তর্নির্মিত নিউট্রিশিন, CO2 স্ক্রাবিং, যোগাযোগ এবং বায়োমেট্রিক মনিটরিং রয়েছে। এই স্পেসস্যুট এবং বুট এমনভাবেই তৈরি যা চাঁদের তাপমাত্রা এবং চাঁদের মাটিতে পরার জন্য আদর্শ। এই স্পেসস্যুটটি নভোশ্চরদের যোগাযোগ, আলো এবং বৈজ্ঞানিক কাজের ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তিতে মোড়া। এটি পরে আট ঘণ্টা পর্যন্ত স্পেসওয়াক করা সম্ভব। এই মিশনে প্রথম একজন মহিলা এবং প্রথম একজন কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি চাঁদে যাচ্ছেন। তারা এই নতুন স্পেসস্যুট পরেই নামবেন চাঁদের মাটিতে। ক্রিস্টিনা কোচ প্রথম মহিলা হিসেবে চাঁদে যাবেন। ২০১৯-এর শুরুতে, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে জীবনের প্রথম মিশনে, NASA-র এই মহাকাশচারী ৩২৮ দিন মহাকাশে কাটিয়ে এসেছেন। কোনও মহিলা হিসেবে তিনিই প্রথম সবচেয়ে দীর্ঘ সময় মহাকাশে কাটিয়েছেন।
আশা ছিল ২০২৬ সালে চাঁদের মাটি ছোঁবেন এই মহাকাশচারীরা। তবে স্পেসএক্সের স্টারশিপের কাজের অগ্রগতি বেশ ঢিলে। ফলে ২০২৬ সালের মধ্যে চাঁদে যাওয়ার সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে। স্টারশিপ নভোশ্চরদের চন্দ্রের কক্ষপথ থেকে চাঁদের মাটিতে নিয়ে যাবে এবং ফিরিয়েও আনবে। এই স্পেসস্যুটটি বেশিরভাগটাই সাদা রঙের। হাতের দিকে কিছুটা লাল রঙের ছোঁয়া রয়েছে।
আরও পড়ুন- চাঁদে বা মহাকাশে কীভাবে অন্তর্বাস কাচেন মহাকাশচারীরা? অবাক করবে যে তথ্য
এই স্পেসস্যুটটি তৈরির নেপথ্যেও অবশ্য দীর্ঘসূত্রিতা রয়েছে। মূলত, আর্টেমিস ৩ অভিযান এই বছরই ঘটার কথা। ২০২১ সালে বলা হয়, নাসার স্পেসস্যুটগুলি ২০২৫ সালের এপ্রিলের আগে তৈরি হবে না। অন্তত 'ট্রায়াল' তো সম্ভবই নয়। ২০২২ সালে, নাসা Axiom Space এবং Collins Aerospace-কে নির্বাচন করে নতুন ধরনের স্পেসস্যুট এবং স্পেসওয়াক সিস্টেম তৈরির জন্য, যা কক্ষপথে এবং চাঁদে দুই ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হবে।
এরই সঙ্গে জুড়ে যায় ইতালিয় ফ্যাশন হাউজ প্রাডা। প্রাডার প্রযুক্তিগত প্রকৌশল সমস্যা নিয়ে প্রচুর অভিজ্ঞতা রয়েছে। ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে একটি সেইল বোট রেসিং সিন্ডিকেট তৈরি করেছিল তারা যা আজও চলতে চলেছে। Axiom Extravehicular Mobility Unit (AxEMU) স্যুটটির উন্মোচন হয়েছে মিলানে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনটিক্যাল কংগ্রেসে। উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালে অ্যাপোলো ১৭-র পর প্রথম চাঁদে অবতরণকারী স্পেসস্যুট হতে চলেছে এটিই। আর্টেমিস ৩-এর লক্ষ্য কেবল চাঁদে লোক পাঠানো নয় বরং দীর্ঘস্থায়ী উপস্থিতি তৈরি করাও। এই মিশনটি চাঁদের দক্ষিণ মেরু নিয়েই কাজ করবে মূলত। মঙ্গল গ্রহে ভবিষ্যতের মিশনের জন্যও এটি প্রয়োজনীয় হতে চলেছে।