শনির মতোই পৃথিবীকেও ঘিরে ছিল আশ্চর্য বলয়! বিজ্ঞানীদের চমকে দিয়েছে যে রহস্য

Saturn-Like Rings: লক্ষ লক্ষ বছর আগে পৃথিবীকে ঘিরে থাকত এমনই বেশ কিছু রিং বা বলয়, যা পৃথিবীর জলবায়ু ও আবহাওয়াকে যথেষ্ট প্রভাবিত করত।

ছোটবেলায় গ্রহদের চেনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ ছিল শনি গ্রহটিকে চেনা। কারণ তাকে বেষ্টন করে থাকে একটি বলয়। বাকি গ্রহদের থেকে যা তাকে বানিয়ে তোলে একেবারে আলাদা। তবে শুধু শনিই নয়, এককালে পৃথিবীরও ছিল সেই মুকুট থুড়ি বলয়। তেমনটাই বলছে গবেষণা।

সম্প্রতি মেলবোর্নের মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের গবেষণায় ধরা পড়েছে তেমনই তথ্য। লক্ষ লক্ষ বছর আগে পৃথিবীকে ঘিরে থাকত এমনই বেশ কিছু রিং বা বলয়, যা পৃথিবীর জলবায়ু ও আবহাওয়াকে যথেষ্ট প্রভাবিত করত। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রহবিজ্ঞানী অ্যান্ডি টমকিন্স জানিয়েছেন, প্রায় ৪৬৬ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবী গ্রহটিকেও ঘিরে থাকত শনির মতোই অমন সুন্দর বলয়। তার পর কী হতে কী হইয়া গেল। পৃথিবীর শরীর থেকে হারিয়ে গেল ওই সব বলয়। মনে করা হয়, পৃথিবী নিজেই নিজের দিকে সেগুলিকে আকর্ষণ করে নিয়েছিল, যার ফলে সেগুলো ভেঙেচুরে আছড়ে পড়ে পৃথিবীর মাটিতে। তা অবশ্য রাতারাতি একদিনে হয়েছে, তেমন ভাবলে ভুল হবে। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে ওই বলয়ের উপাদান ধীরে ধীরে পৃথিবীর মাটিতে পড়েছে সকলের চোখের আড়ালে।

আরও পড়ুন: আর কয়েক বছরেই ভ্যানিশ হবে পুরুষ? যে ভয়ঙ্কর কথা শোনালেন বিজ্ঞানীরা

তবে অনেকেই হয়তো জানেন, শুধু শনিই নয়। বৃহস্পতি, নেপচুন এবং ইউরেনাস গ্রহের চারপাশেও আলাদা আলাদা বলয় রয়েছে। তবে সেগুলি শনির মতো স্পষ্ট ও দৃশ্যমান নয় বলে দেখা যায় না। তেমনই পৃথিবীতেও এককালে ছিল তেমনই বলয়। তবে তা মোটেও বৃহস্পতি বা ইউরেনাসের মতো তেমন অস্পষ্ট ছিল না। অর্ডোভিসিয়ান ইমপ্যাক্ট স্পাইকের সময় পৃথিবীতে প্রায় ২১টির কাছাকাছি গ্রহাণু গর্তের খোঁজ মিলেছিল। সাম্প্রতিক এই গবেষণা মনে করছে ওই ক্রেটারগুলি তৈরি হতে পারে ওই বলয়ে থাকা বৃহত্তর বস্তুগুলিকে কক্ষপথ থেকে টেনে নামিয়ে পৃথিবীতে আছড়ে ফেলার ফলেই।

আর্থ অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্স লেটার্সে প্রকাশিত ওই গবেষণায় এ-ও বলা হয়েছে, দেখা গিয়েছে ওই ক্রেটারগুলি বিষুবরেখার কাছাকাছি জমিতে তৈরি হয়েছিল। এমনটাও মনে করা হচ্ছে, লক্ষ লক্ষ বছর আগে বড় কোনও গ্রহাণুর মুখোমুখি হয়ে থাকতে পারে পৃথিবী। তার ফলেই এই ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছিল। এই সময়কার পাললিক শিলাগুলির নমুনা খুঁটিয়ে দেখে বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন, তার স্তরগুলিতে উল্কাপিণ্ডের ধ্বংসাবশেষ রয়ে গিয়েছে। তবে কি পৃথিবীর চারপাশে থাকা বলয়ের সেই সব টুকরো পতনের ফলেই তৈরি হয়েছে পৃথিবীর বেশ কিছু পাহাড়-পর্বত? তেমন সম্ভাবনাও যে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে, তা নয়।

আরও পড়ুন: নদী-উপত্যকায় ছিল প্রাচীন সভ্যতা? লালগ্রহের যে আশ্চর্য খোঁজ চমকে দিয়েছে বিজ্ঞানীদের

কার্যত পৃথিবী নিজেই নিজের দিকে এমন ভাবে সেই বলয়কে আকৃষ্ট করেছে, তা পৃথিবীর মধ্যেই হারিয়ে যায় ক্রমশ। নাহলে শনির মতো পৃথিবীর চারপাশেও দেখা যেত অমনই বলয়। জানা গিয়েছে, সেসময় অর্থাৎ ৪৬৬ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীর আবহাওয়া নাকি ছিল খুব ঠান্ডা। আর তার জন্য দায়ী ছিল পৃথিবীকে ঘিরে থাকা সেই বলয়ই। তবে এ নিয়ে এখনও বিস্তর গবেষণা বাকি। কীভাবে ওই বলয় তৈরি হয়েছিল, উপগ্রহ চাঁদের প্রভাব তার উপর কী ছিল, সে সব নিয়ে এখনও বহু খোঁজ বাকি বলেই জানিয়েছেন গবেষকেরা।

 

More Articles