AI-ই বিজ্ঞানীদের শেষ ভরসা? কী বলছেন রসায়নে নোবেলজয়ী হ্যাসাবিস?

Nobel Prize in Chemistry 2024: কম্পিউটারকে ব্যবহার করে প্রকৃতিতে অনুপস্থিত এমন কিছু নতুন ধরনের প্রোটিন তৈরির প্রক্রিয়াকেই বলে কম্পিউটেশনাল প্রোটিন ডিজাইন।

২০২৪-এ রসায়নে নোবেল পেলেন ৩ বিজ্ঞানী, ব্রিটেনের ডেমিস হ্যাসাবিস ও জন এম জাম্পার এবং আমেরিকার ডেভিড বেকার। ৯ তারিখ এই ঘোষণা করেছে সুইডেনের রয়্যাল সুইডিশ আকাডেমি অফ সায়েন্সস নোবেল কমিটি। 'কম্পিউটেশনাল প্রোটিন ডিজাইন'-এর জন্য তাঁদের পুরস্কৃত করা হচ্ছে। 'কম্পিউটেশনাল প্রোটিন ডিজাইন' কী? কম্পিউটারকে ব্যবহার করে প্রকৃতিতে অনুপস্থিত এমন কিছু নতুন ধরনের প্রোটিন তৈরির প্রক্রিয়াকেই বলে কম্পিউটেশনাল প্রোটিন ডিজাইন। যৌথভাবে পাওয়া নোবেল পুরস্কারের অর্ধেক পাবেন হ্যাসাবিস ও জাম্পার। বাকি অর্ধেক পাবেন 'ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন'-এর অধ্যাপক ডেভিড বেকার। কম্পিউটেশনাল রিসার্চের সাহায্যে ডেভিড সম্পূর্ণ নতুন প্রোটিন তৈরি করেছেন। এই প্রোটিন প্রতিষেধক ছাড়াও বিভিন্ন কাজে লাগবে। এ বছর নোবেল জয়ী বিজ্ঞানীদের মধ্যে ডেমিস হ্যাসাবিস হলেন, গুগলের সহায়ক এআই গবেষণা সংস্থা 'ডিপমাইন্ডের' স্রষ্টা। হ্যাসাবিস-এর সঙ্গে নোবেল পুরস্কারের ওয়েবসাইট থেকে কথা বলেছেন অ্যাডাম স্মিথ। হ্যাসাবিসের অনুভূতি, ডিপমাইন্ডের উদ্দেশ্যে সহ নানা বিষয় নিয়েই তাঁদের কথা হয়েছে। সেই সাক্ষাৎকারের অনূদিত পাঠ রইল ইনস্ক্রিপ্টের পাঠকদের জন্য।

আরও পড়ুন- মেশিন লার্নিং! কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ধারালো করার যে আবিষ্কারে নোবেল জয় বিজ্ঞানীদের

ডেমিস হ্যাসাবিস : নমস্কার, ডেমিস বলছি।

অ্যাডাম স্মিথ : নমস্কার, ডেমিস। আমি নোবেল পুরস্কারের ওয়েবসাইট থেকে অ্যাডাম স্মিথ বলছি।

ডেমিস হ্যাসাবিস : খুব ভালো লাগল শুনে।

অ্যাডাম স্মিথ : অনেক শুভেচ্ছা আপনাকে।

ডেমিস হ্যাসাবিস : ধন্যবাদ।

অ্যাডাম স্মিথ : আপনি এত ছোট বয়সেই অনেক প্রশংসা এবং সাফল্য পেয়েছেন। এখন এই বিশেষ পুরস্কারও অর্জন করলেন। আপনার কাছে এর মূল্য কতটা?

ডেমিস হ্যাসাবিস : খুবই স্পেশাল। সত্যি কথা বলতে, ভাবতেই পারছি না! আমি এখনও ভাবতে পারছি না যে, এত বড় সম্মান আমাকে দেওয়া হয়েছে। সকলেই তো জানেন, এই সম্মান সবচেয়ে বড় সম্মান।

অ্যাডাম স্মিথ : যখন আপনি শুনলেন আপনাকে পুরস্কৃত করা হবে, আপনার মাথায় প্রথম কী ভাবনা এসেছিল?

ডেমিস হ্যাসাবিস : আমি কিছু ভাবতেই পারছিলাম না। এ অবিশ্বাস্য! অসাধারণ একটা অভিজ্ঞতা।

অ্যাডাম স্মিথ : আমি ভাবলাম, গুগল ডিপমাইন্ড-এ একটা পার্টি করবেন, সেখানেই সবাইকে জানাবেন।

ডেমিস হ্যাসাবিস : হতেও পারে, আমি এখনও ভাবিনি এই নিয়ে। আমি প্রতিদিন যে কাজ করে থাকি সেগুলোই করার কথা ছিল। তবে আমার মনে হয় এখন পরিকল্পনা বদলাতে হবে।

অ্যাডাম স্মিথ : আমার এটা বলতে খানিক ভয় লাগছে, আবার একই সঙ্গে ভালোও লাগছে যে আলফাফ্লোড, আলফাফ্লোড২, আলফাফ্লোড৩ এগুলো বিজ্ঞানের জগতে নতুন। একজন বিজ্ঞানী হিসাবে এই টুলগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ককে কীভাবে দেখছেন?

ডেমিস হ্যাসাবিস : আমার এআই নিয়ে কাজ করার কারণ হলো, আমি সারাজীবনই বিজ্ঞান নিয়ে আগ্রহী ছিলাম এবং আমার তথ্য খুঁজতেও ভালো লাগত। তাই আমি সবসময়ই ভাবতাম, আমরা যদি এআই-কে আরও উন্নত করতে পারি তাহলে আরও কাজ সম্ভব। এটা আমাদের, বিজ্ঞানীদের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী অস্ত্র হতে পারবে। এআই পুরো বিশ্বকে জানতে আমাদের সাহায্য করবে। আমি মনে করি, আলফাফ্লোড সেটার প্রথম উদাহরণ।

অ্যাডাম স্মিথ : যেহেতু এর বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে, এটা নির্দিষ্টভাবে কোন জায়গায় প্রভাব ফেলবে, বিভিন্ন বিজ্ঞানীরা তা জানতে চাইছেন। এটা বিজ্ঞানীদের কীভাবে সাহায্য করবে?

ডেমিস হ্যাসাবিস : আমার মনে হয়, অদূর ভবিষ্যতে একজন বিজ্ঞানীকে এটি অনেক কাজ করতে সাহায্য করবে। কারণ, এরা টুল হিসেবে কাজ করে যা তথ্য বিশ্লেষণ করতে, প্যাটার্ন খুঁজতে এবং তথ্য কাঠামো তৈরিতে সাহায্য করে। কিন্তু সঠিক প্রশ্ন করতে পারে না, আর হাইপোথিসিসের ক্ষেত্রেও এদের কাজ করার প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এই প্রতিবন্ধকতাগুলি থেকে বেরিয়ে আসতে একজন বিজ্ঞানীর প্রয়োজন এমন কিছুর, যা পথ দেখিয়ে দেবে। তবেই টুলগুলি বিজ্ঞানীদের সঙ্গে সঠিকভাবে কাজ করতে পারবে। আমার মনে হয়, সেরা বিজ্ঞানীরা এই টুলগুলিকে কাজে লাগিয়ে আরও উন্নতমানের কাজ করতে পারবেন। ছোট দলে কাজ করতে হলেও এই টুলগুলির উপর ভরসা করে ভালো কাজ করা সম্ভব।

আরও পড়ুন- নতুন প্রোটিনের ঠিকুজিকুষ্ঠি বাতলে দেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাই, রসায়নে নোবেল এনে দিল যে আবিষ্কার

অ্যাডাম স্মিথ : গুগল ডিপ মাইন্ড-এর পরিবেশ কেমন?

ডেমিস হ্যাসাবিস : আমরা প্রথম থেকেই যথাযথ পরিবেশে, অত্যাধুনিক গবেষণার জন্য বিশ্বের বিশেষজ্ঞরাও আসবেন এই সকল কিছু ভেবে ডিজাইন করার চেষ্টা করেছিলাম। অবশ্যই সেখানে মেশিন লার্নিং, এআই ছাড়াও ইঞ্জিনিয়ারিং, ফিজিক্স, বায়োলজি এবং দর্শনের মতো বিষয়গুলির বিশেষজ্ঞরা আসবেন। সব কিছু একসঙ্গে এনে একটি মেল্টিং পট তৈরি করার এবং তাদের কম্পিউটার রিসোর্স ছাড়াও প্রয়োজনীয় সকল সম্পদ দিয়ে ঠিকঠাক কাজের পরিবেশ তৈরি করতে চেয়েছি। এর থেকে অসাধারণ কিছু একটা ফল মিলবেই। আমরা আগে বেল ল্যাবের মতো জায়গায় দেখেছি, এরম অনেক কিছুই হয়েছে। সেই সময়ের গল্পগুলো আমি শুনেছি, ওগুলোই আমায় অনুপ্রাণিত করে। আমি ওখানকার মতো একটা জায়গা বানানোর চেষ্টা করেছি।

অ্যাডাম স্মিথ : এত ভালো বেল ল্যাবকে, কিং ক্রসে নতুন করে বানানো ভালোই আইডিয়া।

ডেমিস হ্যাসাবিস : হ্যাঁ। সেটাই।

অ্যাডাম স্মিথ : আমার শেষ প্রশ্ন, এটা কোনও ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত না হয়ে, গুগলমাইন্ডে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এর জন্য কি কোনও তফাৎ হতে পারে?

ডেমিস হ্যাসাবিস : আমার মনে হয় না। আমি যেখানে ইচ্ছা বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করতে পারি, শুধু সঠিক উপায়ে যোগাযোগ করা এবং গবেষণা করাটাই মূল। নতুন বিজ্ঞান, নতুন বিষয় এবং নতুন ক্ষেত্রে পড়াশোনা করার জন্য আর নতুন কিছু আবিষ্কারের জন্য অনেক রিসোর্স প্রয়োজন। এর জন্য আমাদের অনেকগুলি কম্পিউটার প্রয়োজন হয়। আর এসবের জন্য প্রচুর অর্থেরও প্রয়োজন। তাহলে, আমরা কেন বেসরকারি ক্ষেত্রে যাব না, যারা এই টাকার জোগান দেয়! বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রতি সৎ থেকে, প্রকৃত বৈজ্ঞানিক দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করা এবং মূল প্রশ্নগুলি নিয়ে কাজ করা দরকার। আমার মনে হয়, আমরা গুগল ডিপমাইন্ডে এটা করতে পারি।

অ্যাডাম স্মিথ : অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার দিন ভালো কাটুক।

ডেমিস হ্যাসাবিস : ধন্যবাদ। ধন্যবাদ সময় দেওয়ার জন্য।

অ্যাডাম স্মিথ : ধন্যবাদ ডেমিস।

More Articles