স্বপ্নের মধ্যে দুই মানুষের কথোপকথন সম্ভব!? চাঞ্চল্যকর যে দাবি বদলে দিতে পারে সব বোঝাপড়া

Lucid Dreamer Communication: দুই মানুষের মধ্যে কোনও কথোপকথ নেই, শারীরিক যোগ নেই। তবু তারা কথা বলছেন, স্বপ্নে! আসলে

স্বপ্ন দেখছেন দু’জন। সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বপ্ন, ভিন্ন আবহে। এই দুই মানুষের মধ্যে কোনও কথোপকথ নেই, শারীরিক যোগ নেই। তবু তারা কথা বলছেন, স্বপ্নে! আসলে তাঁদের নয়, তাঁদের স্বপ্নের কথোপকথন হচ্ছে! হলিউডি সাই-ফাই নয়। বাস্তবে নাকি এমনটা ঘটানো সম্ভব! ক্যালিফোর্নিয়ার REMspace নামের এক স্টার্টআপ দাবি করেছে যে, স্বপ্ন দেখার সময় মানুষকে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে এমন এক উপায় খুঁজে পেয়েছে তারা। যদিও এখনও এই কোম্পানি তাদের দাবির সমর্থনে কোনও তথ্য বা বৈজ্ঞানিক ভিত্তি প্রকাশ করেনি।

সোশ্যাল মিডিয়াতে, REMspace-এর প্রতিষ্ঠাতা মাইকেল রাডুগা দাবি করেছেন, এই বিষয়ে বিশদে তথ্য প্রকাশ করতে বছর খানেক সময় লাগতে পারে। এই মুহূর্তে একটি সাংবাদিকদের জন্য তারা একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছেন যাতে গত ২৪ সেপ্টেম্বর প্রথম দুই স্বপ্নদর্শীর মধ্যে সফল কথোপকথন সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করেছেন তারা।

রাডুগা বলছেন, ২৪ তারিখের পর আবার ৮ অক্টোবর এই পরীক্ষাটি করা হয়। দুই স্বপ্নদর্শীর মধ্যে কথোপকথনে প্রাথমিকভাবে একটি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ দুই ঘুমন্ত মানুষের মধ্যে কোনও একটি নির্দিষ্ট শব্দের আদানপ্রদান হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, এই আদানপ্রদান, কথোপকথন আরও জটিল হতে পারে। অর্থাৎ স্বপ্ন থেকে স্বপ্নের যোগাযোগে আরও বড় শব্দ, বাক্যের চলাফেরা সম্ভব। তবে এই বিষয়টি ঘটে একমাত্র লুসিড ড্রিমিংয়ের সময়।

আরও পড়ুন- জম্বিদের মস্তিষ্ক কেমন? তিন ‘মৃতের’ মাথা পরীক্ষা করে শিউরে ওঠা তথ্য জানালেন গবেষকরা

লুসিড ড্রিমিং কী? এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে একজন ব্যক্তি সম্পূর্ণরূপে সচেতন যে তারা স্বপ্ন দেখছেন এবং কিছু ক্ষেত্রে কিছু মানুষের সেই স্বপ্নলোকের কিছু দিক নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতাও থাকে। বিগত কয়েক বছর ধরে, রাডুগা এবং তার কোম্পানি সুস্পষ্ট স্বপ্নের সম্ভাবনাকে বোঝার প্রচেষ্টায় বেশ কয়েকটি পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছে। বিজ্ঞানীদের একাংশের বিশ্বাস, এই বিষয়টি মানুষকে মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা সমাধান করতে বা নতুন দক্ষতা শিখতে সাহায্য করতে পারে।

রাডুগা দাবি করেছেন তাঁর নিজের মস্তিষ্কে একটি চিপ ঢোকানো হয়েছে। এই চিপ ঢোকানোর পদ্ধতিতে নাকি তিনি প্রায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জাও লড়েছেন। তবে এমন বিচিত্র পদক্ষেপ করে আসলে তিনি কী অর্জন করতে চেয়েছিলেন বা চিপটির কাজ আসলে কী সেই সম্পর্কে কিছুই প্রাআয় জানা যায়নি। REMspace বিগত কয়েক বছরে কিছু অদ্ভুত পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছে। একটি এমন পরীক্ষার বর্ণনা দিয়েছে সংস্থা যাতে নাকি ঘুমন্ত অবস্থায়, লুসিড ড্রিমিংয়ের সময় মানুষ ভার্চুয়াল গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে।

আরও পড়ুন- হুইলচেয়ার চলবে রোগীর মস্তিষ্কের জোরে! আশ্চর্য আবিষ্কারে তোলপাড় বিশ্ব

কোম্পানির দাবি, তারা স্বপ্নদর্শীদের জন্য একটি বিশেষ ভাষায় কাজ করছে। রেমিও নামে পরিচিত এই সহজ উপভাষাটি ইলেক্ট্রোমায়োগ্রাফি ব্যবহার করে বোঝা সম্ভব বলে মনে করা হয়। ইলেক্ট্রোমায়োগ্রাফিতে ঘুমন্ত মানুষদের মুখের পেশিতে ক্ষুদ্রতম নড়াচড়াও শনাক্ত করা যায়। যদিও এই পদ্ধতিটি এখনও পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোনও ফলাফল দিতে পারেনি।

নতুন পরীক্ষাটি বিষয়ে বলতে গিয়ে সংস্থাটি বলেছে, গবেষকরা ঘুমানোর সময় দু'জন ব্যক্তির মস্তিষ্কের কার্যকলাপ দূর থেকে ট্র্যাক করেছেন। যখন প্রথম অংশগ্রহণকারীর রিডিং থেকে ইঙ্গিত পাওয়া গেছিল যে তিনি স্বপ্নের মধ্যে ঢুকছেন, গবেষকরা সেই ব্যক্তির ইয়ারবাডের মাধ্যমে একটি একক রেমিও শব্দ পাঠিয়েছিলেন। তারপরে ঘুমন্ত ব্যক্তিরা তাদের স্পষ্ট স্বপ্নে শব্দটির পুনরাবৃত্তি করেন, এই প্রতিক্রিয়াটি একটি সার্ভারে ক্যাপচারে সংরক্ষণ করা হয়। এই রেকর্ডিংটি পরবর্তীতে দ্বিতীয় অংশগ্রহণকারীর কাছে পাঠানো হয় যখন তিনি স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। এই ব্যক্তি ঘুম থেকে উঠে জানিয়েছিলেন যে শব্দটি তিনি পেয়েছিলেন।

তবে এই ফলাফলগুলি এখনও পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে যায়নি। তাই বিজ্ঞানীরা এই পদ্ধতিকে বৈধ না বলা পর্যন্ত, মান্যতা না দেওয়া পর্যন্ত, স্বপ্নের মধ্যে যোগাযোগের বিষয়টি কাল্পনিকই থেকে যাচ্ছে।

More Articles