Vogue পত্রিকার প্রচ্ছদে ১০৬ বছর বয়সি 'মডেল'! সারা দেহে উল্কি আঁকা এই বৃদ্ধা আসলে কে?
Vogue 106 Year Old Cover Star: ১০৬ বছরের এই বৃদ্ধার সারা দেহে উল্কির গালিচা পাতা, এই বৃদ্ধাই বিশ্বের বিখ্যাত ফ্যাশন পত্রিকা ভোগের প্রচ্ছদের মুখ।
বয়স ১০৬। বলিরেখার নকশী কাঁথা শরীর জুড়ে বিছানো। সেই নকশার সুতোর কাজটি করেছে উল্কি। ইদানীংকালে সেসব ট্যাটু বলে জনপ্রিয়তা পেলেও, শিকড়ে সে উল্কি। সূঁচে রং ভরে চামড়ায় নকশা আঁকার প্রাচীন রীতি। ১০৬ বছরের এই বৃদ্ধার সারা দেহে উল্কির গালিচা পাতা, এই বৃদ্ধাই বিশ্বের বিখ্যাত ফ্যাশন পত্রিকা ভোগের প্রচ্ছদের মুখ। ফিলিপাইন্সের বিখ্যাত ট্যাটু শিল্পী হোয়াং ওড (Whang-Od) Vogue ফিলিপাইনের এপ্রিল সংখ্যার প্রচ্ছদ আলো করেছেন৷ ভোগের ইতিহাসে এই সম্মান পাওয়া সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি হোয়াং ওড। ২০২০ সালে, জুডি ডেঞ্চ ৮৫ বছর বয়সে ব্রিটিশ ভোগের সবচেয়ে বয়স্ক প্রচ্ছদ তারকা হয়েছিলেন। বহু প্রাচীনকাল থেকেই উল্কি আঁকছে মানুষ। শিকড় খুঁজতে গেলে হাজার হাজার বছর আগে ফিরে যেতেই হয়। হোয়াং ওড, মারিয়া ওগে নামেও পরিচিত। বিশ্বে উল্কি ঐতিহ্যের অন্যতম কাণ্ডারি তিনিই।
"মারিয়া 'ওয়াং-ওড' ওগে ফিলিপিনো চেতনার শক্তি এবং সৌন্দর্যের প্রতীক,” লিখেছে ভোগ ফিলিপাইন্স৷ "হোয়াং ওড তাঁর প্রজন্মের শেষ ব্যক্তি যিনি কলিঙ্গ উপজাতির প্রতীকগুলিকে দেহে উল্কির মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। শক্তি, সাহসিকতা এবং সৌন্দর্যের সেই সব প্রতীককে বুসকালানে তীর্থযাত্রায় আসা হাজার হাজার মানুষের ত্বকে এঁকে দিয়েছেন," লিখেছে ভোগ পত্রিকা।
উত্তর ফিলিপাইনের পার্বত্য অঞ্চলের কলিঙ্গ প্রদেশের বাসিন্দা হোয়াং ওড আসলে আদিবাসী বাটবুট উপজাতির সদস্য। ১৫ বছর বয়সে তিনি বাটোক বা উল্কি শিল্প অনুশীলনকারী প্রথম মহিলা হয়ে প্রথা ভেঙেছিলেন। শেখার শুরুটা বাবার হাত ধরেই। আগে এই উল্কি আঁকার অধিকার ছিল শুধুমাত্র উপজাতির পুরুষ সদস্যদেরই। তারপর থেকে এই দীর্ঘকাল বিলুপ্তি পথে থাকা ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রেখেছেন হোয়াং।
আরও পড়ুন- ২৫৬ বছরের জীবনে মোট ২৩ বার বিয়ে! চিনের এই ‘রহস্যময়’ বৃদ্ধ আসলে কে!
ভোগ জানিয়েছে, আগেকার দিনে, চিহ্নহীন অর্থাৎ দেহে উল্কি না আঁকা মহিলাদের অপূর্ণ, অবাঞ্ছিত বলে মনে করা হতো। কিন্তু ধারণাটি পালটে যায় যখন আমেরিকান ক্যাথলিক মিশনারিরা এসে কলিঙ্গে স্কুল তৈরি করে। তখন গ্রামের মেয়েদের লম্বা হাতা জামা দিয়ে তাদের বাহু ঢেকে রাখতে বলা হয়েছিল। মহিলারা যখন শহরে আসেন তখন দেহে উল্কি করাটা লজ্জার বিষয় হয়ে ওঠে এবং শেষ পর্যন্ত পরবর্তী প্রজন্মের খুব কম মহিলাই এই ঐতিহ্যকে অব্যাহত রাখেন। সৌন্দর্য এবং সম্মানের পশ্চিমি ধারণাগুলি তাঁদের নিজস্ব সংস্কৃতিতে প্রবেশ করতে শুরু করে।
View this post on Instagram
আরও পড়ুন- ট্যাটু বলে দেবে আপনার রক্তচাপ! অভাবনীয় আবিষ্কার এবার হাতের মুঠোয়
একজন মাম্বাবাটোক বা উল্কি শিল্পী হিসাবে, হোয়াং ওড রক্তের মধ্যে কালি দিয়ে অপূর্ব সব নকশা এঁকে দেন। তাঁর নিজের সন্তানরা না থাকায়, নাতনি গ্রেস পালিকাসকই তাঁর এই শিল্পের শিক্ষানবিশ হয়ে ওঠেন। বর্তমানে পালিকাস এবং তাঁর খুড়তুতো ভাই ইলিয়াং এই ঐতিহ্যকে অব্যাহত রেখেছেন। প্রতিদিন তাঁদের গ্রামে শত শত পর্যটকদের দেহে উল্কি এঁকে দেন তাঁরা। হোয়াং নিজে আর জটিল কোনও উল্কি করেন না। তাঁর শিক্ষানবিশরা উল্কি এঁকে দিলে 'ফিনিশিং টাচ' হিসেবে তিনটি বিন্দু এঁকে দিয়ে সই করে এই শিল্পকর্মটি সম্পন্ন করেন। হ্যাঁ, এই ১০৬ বছর বয়সী বৃদ্ধা তিনটি বিন্দু দিয়েই নিজের অস্তিত্বকে অন্যের চামড়াতে ফুটিয়ে তোলেন।
ফিলিপাইন্সের এই উল্কি আঁকা হয় একটি কাঁটা দিয়ে। প্রাকৃতিক রঙে সেই কাঁটা ডুবিয়ে চামড়ার উপর নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়। এই কাঁটাটি আবার একটি বাঁশের লাঠির সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। ঐতিহ্যগতভাবে, উল্কিগুলি পুরুষ যোদ্ধাদের সাহসিকতা বা মহিলাদের সৌন্দর্যেরই প্রতীক। শেষ ১৫ বছর ধরে হোয়াং ওডের শিল্পের জন্যই তাঁদের গ্রামে পর্যটকরা ভিড় জমাতে শুরু করেছেন। নতুন প্রজন্মের আরও কিছু তরুণ তরুণীরাও উল্কি আঁকার প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেছেন। হোয়াং জানিয়েছেন, যতদিন তাঁর দৃষ্টিশক্তি সচল রয়েছে, ততদিন উল্কি আঁকবেন। এই উল্কিই তাঁর পরিচয়, তাঁর গর্ব, তাঁর স্বাতন্ত্র্য।