আজ 'অজাচার', কাল মেয়েদের কটূক্তি! রণবীরদের সব 'ডার্ক কমেডি' আমাদের নজরে আসে?

Ranveer Allahbadia India Got Latent: সময় রায়নাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে মহিলা, ট্রান্সজেন্ডার, মুসলিম এবং যৌন নির্যাতনের শিকার মানুষদের নিয়ে মজা করা নেহাতই 'জোকস'! এ তো করাই যায়!

সময় রায়নার শো ইন্ডিয়া গট ল্যাটেন্টে রণবীর এলাহাবাদিয়ার সাম্প্রতিক মন্তব্য নিয়ে সারা ভারতের নেট নাগরিকরা নড়েচড়ে বসেছেন। ওই শোতে একজন প্রতিযোগীকে রণবীর জিজ্ঞেস করেছিলেন, "আপনি কি আপনার বাবা-মায়ের যৌন মিলন দেখতে চান, নাকি আপনি একবার তাঁদের সঙ্গে যোগও দিতে চান?” ওই শোয়ের এই অংশটুকু ভাইরাল হতেই রিল-জগতে তোলপাড় পড়ে যায়। এত ধিকৃত হন রণবীর যে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক এফআইআরও দায়ের করা হয়। খোদ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন পদক্ষেপ করে এই ঘটনায়। দুইজন মুখ্যমন্ত্রী রণবীরের বিষয়ে বিবৃতি জারি করে দেন। বিষয়টি সংসদের বাজেট অধিবেশনেও উঠে আসে। রণবীর বিয়ার-বাইসেপস নামে একটি চ্যানেলে পডকাস্ট করেন। বেশ জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর তিনি। একটু তলিয়ে দেখেন যাঁরা, তাঁরা বলেন রণবীরের কাজকর্ম খানিক দক্ষিণপন্থা ঘেঁষা, একটু নরম চালেই আদতে গেরুয়া মতামতকেই প্রশ্রয় দেন তিনি। রণবীর যা মন্তব্য করেছেন, এমন কাছাকাছি 'জোকস' হালফিলে অধিকাংশ কমেডিয়ানই করে থাকেন। ডার্ক কমেডির নামে আদতে অশ্লীলতা, নোংরামিকে তোল্লাই দেওয়ার অভিযোগ আছে তাদের বিরুদ্ধে। তবে, অধিকাংশ দর্শকই তাতে হয় আমল দেন না, না হয় দন্ত বিকশিত করেন, হাততালি দেন। রণবীর এলাহাবাদিয়াকে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্য কান্ত প্রশ্ন তুলেছেন “এটা যদি অশ্লীলতা না হয়, তাহলে অশ্লীলতা কী?” বিচারপতি বলছেন, “তাঁর (রণবীরের) মনে খুব নোংরা কিছু আছে বলেই অনুষ্ঠানে গিয়ে সেই ভাবনাগুলো বমি করে ফেলেছে… সে বাবা-মাকেও অপমান করছে। কেন আদালত তাকে সমর্থন করবে?” রণবীর এলাহাবাদিয়ার মন্তব্য নিয়ে সরকার থেকে শুরু করে বিরোধী, এমনকী দেশের শীর্ষ আদালতও এত উত্তেজিত হয়ে পড়ল কেন? 

এলাহাবাদিয়ার মন্তব্যের প্রধান তিনটি দিক আছে। এক, ওই মন্তব্য কুরুচিকর। ওই মন্তব্য অশ্লীল এবং ওই মন্তব্যের বিষয় যৌনতাপূর্ণ। জনসমক্ষে কাকে নিয়ে কী বলা যায়, কতটা বলা যায়, কী বলা কাম্য নয় সেই সীমা রণবীর ঘষে উড়িয়ে দিয়েছেন। অর্থাৎ জনগণের সমষ্টিগত নৈতিকতায় আঘাত লেগেছে। কারণ, এই যৌনগন্ধী মন্তব্যের নেপথ্যে আছে অজাচার বা ইনসেস্ট সম্পর্কের কথা। অর্থাৎ রক্তের সম্পর্কের মধ্যে যৌনতা, যা ভারতীয়দের এবং অবশ্যই হিন্দুধর্মের মূল্যবোধে 'অনাচার'। এখানে প্রশ্ন উঠছে, অজাচার নিয়ে ভারতীয় জনসাধারণের নৈতিকতায় এত আঘাত লেগে গেল, অথচ নিরন্তর যখন মহিলাদের বিরুদ্ধে, LGBTQIA+ মানুষদের নিয়ে, অন্যান্য সংখ্যালঘুদের নিয়ে অপমান করে নিকৃষ্ট মানসিকতা 'জোকস'-এর নামে বাজারে চালিয়ে দেওয়া হয়, তখন কেন তা নিয়ে এত ঝড় ওঠে না? কেন তা স্বাভাবিক হিসেবে দেখা হয়? ৯০ শতাংশ কমেডিয়ান প্রতি জোকসের অজস্রবার বোন বা মা বা পুরুষের লিঙ্গ নিয়ে খিস্তির প্রয়োগ করেন। তা নিয়ে কথা হয় না। লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য এবং পুরুষতান্ত্রিক শিকল আমাদের কোথায় বেঁধে রেখেছে, সেখানেই লুকিয়ে আছে এই প্রশ্নের উত্তর।

আরও পড়ুন- উৎসবের নামে কতদিন চলবে নিগ্রহ — রংখেলার সিনেমা ও বাস্তব

সময় রায়নার আরেকটি ভিডিও সম্প্রতি ভাইরাল হয় যেখানে একটি একরত্তি শিশুর চিকিৎসায় ১৬ কোটি টাকার ইঞ্জেকশনের ব্যবহার নিয়ে তিনি 'মজা' করেছেন। অনেকে বলছেন, এটি আসলে 'ডার্ক হিউমার'। অনেকে বলছেন, ডার্ক হিউমারের নামে অসংবেদনশীল, বিষাক্ত মানসিকতার প্রচার করছেন এই কমেডিয়ানরা। ডার্ক কমেডি ভারতের এই কমেডিয়ানদের হাত ধরে তার মূল উদ্দেশ্য থেকে যোজন দূরে সরে গেছে। ডার্ক কমেডির উদ্দেশ্য ছিল প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে দীর্ঘদিন ধরে হয়ে আসা বঞ্চনার, অত্যাচারের বিরুদ্ধে কথা বলার সুযোগ দেওয়া, অসাম্য মোকাবিলায় সহায়তা করা। উল্টে এখন, এই প্রান্তিক ও 'অপর' সম্প্রদায়গুলিকে উপহাস করার একটি হাতিয়ার হয়ে উঠেছে 'ডার্ক কমেডি'। সময় রায়নার যুক্তি, হাস্যরসের কোনও বাধানিষেধ থাকার কথা না। কমেডি হচ্ছে মুক্ত এবং প্রত্যেকেরই যে কোনও বিষয়ে রসিকতা করার অধিকার থাকা উচিত, এমনকী সেই রসিকতা যদি অন্যকে আঘাত করে, তা সত্ত্বেও। সময় রায়নাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে মহিলা, ট্রান্সজেন্ডার, মুসলিম এবং যৌন নির্যাতনের শিকার মানুষদের নিয়ে মজা করা নেহাতই 'জোকস'! এ তো করাই যায়!

রণবীর এলাহাবাদিয়া, আগেই উল্লিখিত বিয়ার বাইসেপস নামে চ্যানেলে পডকাস্ট করেন। বেশ পরিচিত মুখ। নিজের শোয়ে বিতর্কিত অতিথিদের আমন্ত্রণ জানান তিনি, যার মধ্যে রয়েছেন ডানপন্থী রাজনীতিবিদরা, সন্দেহজনক আধ্যাত্মিক গুরুরা এবং সেই মানুষগুলি যারা সুদৃশ্য মোড়কে, অবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার করেন। ফলে মোটামুটি সকলেই জানেন, রণবীর আসলে সরকারপন্থী। তবে তাঁর সাম্প্রতিক মন্তব্যের জেরে বিজেপির নেতারাই এখন তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, রণবীরের মন্তব্য সত্যিই এত বিতর্কিত ছিল কি যে যাঁরা রণবীরের সঙ্গে যুক্ত তাঁরাও নিজেদের দূরে সরিয়ে নিচ্ছেন?

রণবীর বাবা-মা-সন্তানের যৌনতা নিয়ে কথা বলেছেন। এদেশের জনসাধারণের ভাবগত নৈতিকতায় ঘাত লেগেছে তাতে। জনসাধারণ বললে ভুল, সেই জনসাধারণ যাঁদের জীবনে রিলস, কমেডি শো, পডকাস্ট এগুলির গুরুত্ব আছে এবং সর্বোপরি এগুলির 'অ্যাক্সেস' আছে। জনসাধারণের নৈতিকতা বলতে এখানে মূল্যবোধ এবং কিছু সামাজিক মাপকাঠিকে বোঝানো হচ্ছে যা বৃহত্তর সমাজে গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত। মজার বিষয় হচ্ছে, এই মূল্যবোধ, এই মাপকাঠিগুলি ভারতীয় সমাজে বিষম-পিতৃতন্ত্র দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত। অর্থাৎ এটি একটি এমন ব্যবস্থা যেখানে পুরুষের আধিপত্য রয়েছে এবং বিষমকামী, একক বৈবাহিক পারিবারিক কাঠামোর আতসকাঁচের মাধ্যমেই সেই আচরণ ও নৈতিকতাগুলিকে মান্যতা দেওয়া হয়, সমাজের ভিত্তি হিসাবে দেখা হয়।

আরও পড়ুন-ভালোবাসা প্রিজমের মতো, অন্যজনের অন্তরে আলো ফেলা যায়

এই বিষম-পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থায়, বিষমকামী একক বৈবাহিক পিতৃতান্ত্রিক পরিবারের 'পবিত্রতা' হচ্ছে প্রধান ইস্যু। এটিই 'আদর্শ' ভারতীয় পরিবার। এইখানে সামান্য অন্য কিছু ঘটলেই রে-রে করে ওঠে বিশাল বৃহত্তর সমাজ। জনসাধারণের নৈতিকতা কীভাবে শতাব্দীর পর শরাব্দী ধরে গড়ে উঠেছে, পাল্টেছে তা বোঝার জন্য, ১৯ শতকের শেষের দিকে এবং ২০ শতকের গোড়ার দিকে ফিরে তাকাতে হবে। ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সময়, মহিলাদের বিষয়গুলি চর্চায় উঠে আসে। ভারতীয় মহিলাদের অসহায় এবং নিপীড়িত হিসাবে দেখানো ব্রিটিশ পর্বে একটু বেশিই মনোযোগ পায়। মেয়েদের দুর্বল করে দেখানো, প্রচার করা আদতে ইংল্যান্ডের সমাজের রক্ষণশীলতারই পরিচায়ক ছিল। তবে, ভারতীয় সংস্কারকদের একাংশ, বিশেষত উচ্চবর্ণের পুরুষরা, মহিলাদের এক নৈতিক চিত্র তৈরি করেন যার মূলে রয়েছে, ভালো কন্যা, ভালো স্ত্রী, ভালো মা হয়ে ওঠার নিদান। মহিলারা ঘর সামলাবেন, সন্তান লালন পালন করবেন। পরিবারের নিয়ন্ত্রণ ছিল পুরুষদের হাতেই, বরাবরই। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং শাসনের ক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণ ছিল না কারণ বৃহত্তর পুরুষ সমাজ কর্তৃক চাপিয়ে দেওয়া নৈতিক মূল্যবোধ এবং সভ্যতাগত নীতিকে মহিলাদের চরিত্রের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে, আদর্শ নারী চরিত্র নির্মিত হয়েছে।

মহিলাদের এই চরিত্র নির্মাণের সঙ্গেই একক বিবাহ, বিষমকামীতার বিষয়গুলোও জুড়ে দেওয়া হয়। সপক্ষে খাড়া করা হয় নানা মহাকাব্য এবং পুরাণের ঘটনাবলী। এমনকী জাতি যাতে জনক হিসেবে দেখেছে, সেই গান্ধীজিও মনে করতেন, একজন মহিলার ভূমিকা হচ্ছে 'গৃহের পবিত্রতা' বজায় রাখা। এই আদর্শ ধারণা থেকে সামান্য বিচ্যুতি ঘটলেই সে 'কুলটা', ‘কুমাতা', 'চরিত্রহীনা', এবং তাঁকে তুলনা করা হবে 'নিম্ন' বর্ণ এবং 'নিম্ন' শ্রেণির মহিলাদের সঙ্গে। তাই 'রাস্তার মেয়েছেলে', ‘বেশ্যা' বলে অপমান করা 'জায়েজ'।

স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতে, পরিবারের এই ধারণাটিই প্রাধান্য পেতে থাকে। সদ্য স্বাধীন হওয়া একটি রাষ্ট্র সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য বলে পিতৃতান্ত্রিক পরিবারের পবিত্রতার ওপর জোর দিয়েছিল। এই 'পবিত্রতা' বজায় রাখার জন্য সিভিল কোড তৈরি হয়েছিল। একজন বিষমকামী পুরুষ এবং একজন বিষমকামী মহিলার বিবাহ এবং পরিবার গঠনকেই মান্যতা দেওয়া হয়েছিল। এখানেই সমকামীতা বা অজাচারকে 'অনাচার' হিসেবে দেখা, এগুলির বিরুদ্ধে শাস্তি প্রদানের কথা উঠে আসে।

তবে এদেশের রাজনৈতিক অর্থনীতিতে উদারীকরণ-পরবর্তী সময়ে পরিবর্তন আসে। LGBTQIA+ গোষ্ঠী এবং নারী অধিকার কর্মীরা প্রবল বেগে কাজ করতে থাকেন। আইনকে প্রশ্ন করতে থাকেন। অর্থনীতি যত বিকশিত হয়েছে, মধ্যবিত্ত 'ঘরোয়া' মেয়েরাও কাজ করতে শুরু করেন। ফলে 'আদর্শ' নারী, আদর্শ পরিবার ধারণাগুলি তার মাপকাঠি থেকে বিচ্যুত হতে শুরু করেছে। 'সনাতনী' মূল্যবোধ ঘেঁটে যেতে থেকেছে। যত প্রথাকে চ্যালেঞ্জ করে অগ্রসর হতে থাকে সমাজ, ততই পাল্টা আঘাত আসতে থাকে নানা পোশাক পরে। কখনও আইনের হাত ধরে, নীতি পুলিশির হাত ধরে, গজিয়ে ওঠা রক্ষণশীল গোষ্ঠীর ছায়া হয়ে বা পালিশ করা পডকাস্ট, সিনেমা, রিলসের হাত ধরে। তবে প্রশ্ন আবারও গোঁত্তা খাচ্ছে একটিই জায়গাতে। কেন ইনসেস্ট বা অজাচার নিয়ে 'মজা' করাতে এত ক্ষুব্ধ হলো মানুষ। জোকসের নামে নিরন্তর মিসোজিনি বা হোমোফোবিয়ার প্রচারের সময় আমাদের ক্ষোভ কোথায় থাকে?

আরও পড়ুন- মোদির নিজ রাজ্য এত উন্নত হলে কেন আমেরিকায় পালাচ্ছেন গুজরাতিরা?

উদারীকরণ পরবর্তী ভারতের থেকে এই আজকের ভারতের চিত্র বদলাচ্ছে। হিন্দুত্ববাদীদের, সনাতনপন্থীদের মতবাদ স্বাভাবিকভাবেই রাষ্ট্র অগ্রাধিকার দিচ্ছে। সরকার সমকামী বিবাহকে 'শহুরে অভিজাত সমস্যা' হিসাবে অভিহিত করছে। বৈবাহিক ধর্ষণের ক্ষেত্রে বিজেপি বিবাহের পবিত্রতাকে নষ্ট করার যুক্তি এনে বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে দেখার তীব্র বিরোধিতা করেছে। এলাহাবাদিয়ার সমালোচনাকেও এই বিস্তৃত প্রেক্ষাপটে এবং জনসাধারণের নৈতিকতার ইতিহাস দিয়েই বিচার করতে হবে। আজকের ভারতবর্ষে বিষমকামী একক বৈবাহিক পিতৃতান্ত্রিক পরিবারের পবিত্রতার ধারণাটিকেই রক্ষা করার তোড়জোড় চলছে। বাক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কঠোর আইন আনা হচ্ছে। লাভ-জিহাদের মতো বিষয়কে প্রচারে আনা হচ্ছে, নীতি পুলিশিকে মান্যতা দেওয়া হচ্ছে। এই একই কারণে রণবীর এলাহাবাদিয়া, সময় রায়নাদের মতো কমেডিয়ানদের বিরুদ্ধে বিজেপি এত সরব হচ্ছে। কারণ, নারী, অন্যলিঙ্গ নিয়ে 'মজা' করা যায়, তবে জনসাধারণের নৈতিকতার রক্ষণশীলতাকে ভাঙা যায় না। আর এই রক্ষণশীলতাকে প্রতিরক্ষা করার ভার বিজেপির।

বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং এন. কোটিশ্বর সিং-এর একটি বেঞ্চ রণবীরের মামলায় বলেছে, “আপনি যে শব্দ ব্যবহার করেছেন, বাবা-মা লজ্জা পাবেন। বোন-মেয়েরা লজ্জা পাবে। গোটা সমাজ লজ্জিত বোধ করবে। এটি একটি বিকৃত মানসিকতা।" শব্দগুলি লক্ষ্যণীয়, বোন-মেয়েরা, সমাজের লজ্জা! আর মেয়েদের অপমানের বেলা সমাজের লজ্জা কোথায় থাকে?

ইন্ডিয়া গট ল্যাটেন্টে, সময় রায়না এবং অন্যান্য প্যানেলিস্টরা হামেশাই মহিলাদের এবং LGBTQIA+ ব্যক্তিদের প্রতি অবমাননাকর, আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। একটি পর্বে সময় রায়না একজন অংশগ্রহণকারীকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, মহিলা নিরাপত্তারক্ষীরা বিমানবন্দরে যখন তাঁকে পরীক্ষা করেন তখন তিনি 'বিশেষ কিছু অনুভব করেন কিনা'। কেন এমন প্রশ্ন? কারণ ওই অংশগ্রহণকারী জানিয়েছিলেন তিনি 'বাইসেক্সুয়াল'। সময় রায়না তাঁর শোতে যৌনগন্ধী অজস্র মন্তব্য করেন। মহিলাদের যথেচ্ছ 'নীচ' করে দেখান। তা নিয়ে কোনও শোরগোল হয় না কারণ এটি বিজেপির এজেন্ডাই নয়! অজাচার যেহেতু সরাসরি 'পবিত্র ভারতীয় পরিবার' ধারণার উপর আঘাত করছে, তখনই এটি গুরুত্ব পাচ্ছে। সারা দেশে এত দুষ্কর্মের বিরুদ্ধে সরকার টুঁ শব্দ করে না, অথচ রণবীরের বক্তব্য নিয়ে নড়েচড়ে বসে। আসলে মিসোজিনি বা হোমোফোবিয়া বিজেপির প্রচারিত নৈতিকতার বিরোধী নয়। এগুলি পরিবারের পবিত্রতাকে নষ্ট করে না। ধর্ষণ নিয়ে 'জোকস', স্ত্রীদের নিয়ে 'জোকস', সমকামী এবং রূপান্তরকামীদের নিয়ে 'জোকস' আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে গেছে। আমরা একে সাধারণ ভাবি, কারণ এই গোষ্ঠীগুলি সংখ্যালঘু। তাঁদের নিয়ে সংগখ্যাগরিষ্ঠের কিচ্ছু যায়-আসে না। আজ যাকে সময় রায়নারা 'ডার্ক কমেডি' নামে চালাচ্ছেন, এককালে তা 'নন-ভেজ জোকস' নামে জনপ্রিয় হয়েছিল। ধীরে ধীরে সেই জোকসের আমিষ গন্ধ বেড়েছে। এখানে নারী এবং যৌন সংখ্যালঘুদের মাংসখণ্ড করে দিনের পর দিন প্রচার করা হচ্ছে। অজাচার নিয়ে মন্তব্য যেমন ক্ষুব্ধ করার মতো ঘটনা, তেমনই মেয়েদের নিয়ে নোংরামি, রূপান্তরকামীদের হেয় করাও সমান অপরাধের। অথচ আমাদের ভারতীয় সংস্কৃতির নামে গেলানো পথ্যে অজাচার ধিকৃত, মেয়েদের নিয়ে, সমকামীদের নিয়ে তো নোংরামি 'জায়েজ'।

More Articles