বাংলাদেশের প্রভাব ভারতেও! চাকরি সংরক্ষণ নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত এই রাজ্যের
Karnataka Job Reservation Bill: মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, তাঁর 'কন্নড়পন্থী সরকার' নিশ্চিত করবে যাতে সমস্ত কন্নড়ভাষী নিজের মাতৃভূমিতেই আরামদায়ক জীবনযাপন করার সুযোগ পায়।
কোটা সংশোধন আন্দোলনে উত্তাল বাংলাদেশ। সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশে ব্যাপক আন্দোলনে ৬ জনের প্রাণ গিয়েছে। পড়শি দেশের উত্তাল আন্দোলন ও হিংসার প্রভাব এসে পড়ল এদেশেও। বেসরকারি সংস্থাতে চাকরি সংরক্ষণ নিয়ে বিল আনতে চলেছিল কর্ণাটক সরকার। আপাতত সেই বিল নিয়ে এগোচ্ছে না সরকার। বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনা চলবে বলে জানিয়েছে সেই রাজ্যের সরকার। রাজ্যের বেসরকারি সংস্থাগুলিকে কন্নড়দের জন্য চাকরি সংরক্ষণ করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছিল ওই বিলে। গত সোমবার পাস হওয়া বিলটিতে বলা হয়, ভারতের আইটি মূলধনের সংস্থাগুলিকে ৭০ শতাংশ নন-ম্যানেজমেন্ট পদে এবং ৫০ শতাংশ ম্যানেজমেন্ট স্তরের চাকরির জন্য স্থানীয়দের নিয়োগকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
মঙ্গলবার সন্ধেয় কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া প্রথম কোটার ঘোষণা করেন। পরে, বাংলাদেশের এই ঘটনা ব্যাপক ছড়িয়ে পড়ার আবহেই সিদ্দারামাইয়া নিজের এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, "বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠান, শিল্প এবং উদ্যোগগুলিতে কন্নড়দের জন্য সংরক্ষণ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিলটি এখনও প্রস্তুতির পর্যায়ে রয়েছে। পরবর্তী মন্ত্রিসভার বৈঠকে ব্যাপক আলোচনার পরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।"
আরও পড়ুন- বাংলাদেশের কোটা ব্যবস্থা ঠিক কী? কেন এর বিরোধিতায় প্রাণ হারালেন পড়ুয়ারা?
মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, তাঁর 'কন্নড়পন্থী সরকার' নিশ্চিত করবে যাতে সমস্ত কন্নড়ভাষী নিজের মাতৃভূমিতেই আরামদায়ক জীবনযাপন করার সুযোগ পায়। কন্নড় দেশে চাকরি পাওয়া থেকে যেন কোনও কন্নড় বঞ্চিত না হন তা নিশ্চিত করবে তাঁর সরকার। নিজের এক্স পোস্টে তিনি জানিয়েছিলেন, এই সংরক্ষণ বিলটি নির্দিষ্ট স্তরে ১০০ শতাংশ সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করেছে।
বায়োকনের কিরণ মজুমদার-শ-এর মতো ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বিজেপির নেতৃত্বে বিরোধীরা কংগ্রেস সরকারকে লক্ষ্য করে সিদ্দারামাইয়ার এই পোস্ট নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। যদিও সামাজিক ন্যায়বিচার ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামদাস আঠাওয়ালে আবার বলেছেন, ওবিসি, এসসি, বা এসটি সম্প্রদায়ের মতো যে কোনও অনগ্রসর শ্রেণিদেরকে উপকৃত করবে এমন সমস্ত পদক্ষেপকেই সমর্থন করেছেন তিনি। মন্ত্রীর বক্তব্য, "আমার দল ভারত সরকার এবং রাজ্যগুলিকে বেসরকারি খাতে ওবিসিদের সংরক্ষণের দাবি জানায়। আমরা সাধারণ বিভাগের প্রার্থীদের বিরোধিতা করছি না।"
কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী পরে তাঁর ওই পোস্ট ডিলিট করে দেন। মুখ্যমন্ত্রী পোস্টে জানিয়েছিলেন, "ব্যবস্থাপনা স্তরে ৫০ শতাংশ চাকরি সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অ-ব্যবস্থাপনা স্তরে ৭০ শতাংশ সংরক্ষিত পদ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।" সিদ্দারামাইয়া জোর দিয়ে বলেছিলেন, রাজ্যে প্রতিভার কোনও অভাব নেই। তিনি আরও বলেছিলেন, সংস্থাগুলি যদি এই অংশের থেকে উপযুক্ত দক্ষ প্রার্থী নিয়োগ করতে না পারে তবে তারা রাজ্যের বাইরের লোক নিয়োগের দিকে নজর দিতে পারে। তবে সরকার স্থানীয়দের অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্যই আইন আনার চেষ্টা করছে।
তবে এই কোটা ব্যবস্থা সকলে সমর্থন করছেন না তা স্পষ্ট হয়ে যায়। অনেক ব্যবসায়ীই এই সংরক্ষণকে 'বৈষম্যমূলক' বলেই মনে করছেন। অনেকে আবার স্থানীয়দের জন্য চাকরি নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেছেন ঠিকই তবে কিছু সতর্কতাও যোগ করেছেন।
আরও পড়ুন- ডেলিভারি কর্মীদের জন্য বড় খবর! চাকরি-নিরাপত্তা রক্ষায় যে বিল আনছে এই রাজ্য
ভারতের ২০০ বিলিয়ন ডলারের প্রযুক্তি শিল্পের মাথা সফ্টওয়্যার শিল্প সংস্থা নাসকম মনে করছে, এই বিল 'কোম্পানিগুলিকে তাড়িয়ে দেওয়ার হুমকি'। এই জাতীয় সংরক্ষণ চাপিয়ে দেওয়া হলে কোম্পানিগুলি পাততাড়ি গোটাতে বাধ্য হবে বলেই মনে করছেন তিনি কারণ স্থানীয় দক্ষ প্রতিভা সত্যিই মাঝেসাঝে দুষ্প্রাপ্য হয়ে যায়! তাহলে চাকরিও দেওয়া যাবে না, পদও খালি থাকবে আর ভুগতে হবে সংস্থাকে।
শ্রম বিভাগের ওই প্রস্তাবিত বিলে দাবি করা হয়েছে, রাজ্যের চাকরিগুলি মূলত উত্তরভারতের রাজ্যের লোকদের দেওয়া হচ্ছে যারা তখন কর্ণাটকে এসে থাকছেন। ফলে রাজ্যের মানুষ রাজ্যে চাকরি পাচ্ছেন না। প্রস্তাবিত এই বিলে সরোজিনী মহিষী কমিটির সুপারিশগুলি মানা হয়েছে। ওই কমিটি সুপারিশে বলেছিল, ৫০জনেরও বেশি কর্মী সহ বৃহৎ, মাঝারি এবং ছোট শিল্পগুলিকে কন্নড়দের জন্য গ্রুপ এ এবং গ্রুপ বি চাকরিতে ৬৫ এবং ৮০ শতাংশ সংরক্ষণ করতে হবে। সমস্ত গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি চাকরি কন্নড়দের জন্যই সংরক্ষিত রাখা হবে বলেও বলা হয়েছিল ওই রিপোর্টে।