নলি কাটা, মুখ পোড়া তরুণীর দেহ! বসিরহাট নিয়ে অমিত মালব্য যা লিখলেন, কতটুকু সত্য?

Amit Malviya on Basirhat Border Murder: গলার নলি কেটে খুন করা হয় সুমাইয়াকে। যাতে কোনওভাবেই চেনা না যায় তাই মুখে ওড়না বেঁধে আগুন লাগিয়ে মুখ পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

"এই হল পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। উত্তর ২৪পরগনার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে একটি বাগান থেকে রক্তে ভেসে যাওয়া গলা কাটা, মুখ পুড়িয়ে দেওয়া এক যুবতীর দড়ি দিয়ে বাঁধা দেহ মিলল, দেহ শনাক্ত করা যাচ্ছে না। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি শব্দও উচ্চারণ করবেন না।" জ্বালাময়ী এক টুইট লিখলেন বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য। পশ্চিমবঙ্গে ভারত ও বাংলাদেশ সীমান্তে এক তরুণীর দেহ মেলে তা সত্য, দেহ শনাক্ত করার অবস্থাতেও ছিল না তাও সত্য। তবে সত্যের ঊর্ধ্বে আরেক সত্য রয়েছে। তার সন্ধান অমিত মালব্য দেননি স্বাভাবিকভাবেই। অর্ধসত্য মিথ্যার চেয়েও ভয়ঙ্কর। ভারতীয় সীমান্তে যে মহিলার দেহ মিলেছে তিনি একজন বাংলাদেশি তরুণী! স্বরূপ নগর সীমান্ত লাগোয়া গুনরাজপুর গ্রামে ঘটে এই ঘটনাটি।

পুলিশ তদন্তে নেমে জানাচ্ছে, তরুণীর নাম সুমাইয়া আখতার বৃষ্টি। তিনি বাংলাদেশের ঢাকার শ্যামপুরের বাসিন্দা। বাংলাদেশি এই তরুণী বেশ কিছুকাল আগে দালাল মারফৎ ভারতে এসে পড়েন, যেমন হাজারও মানুষ এসে থাকেন কাজের সন্ধানে। তারপর অধিকাংশ মেয়ের যা হয়, তাই ঘটে। মুম্বইয়ের যৌনপল্লীতে পাচার করে দেওয়া হয় সুমাইয়াকে। তবে সেখান থেকে পালান সুমাইয়া আখতার বৃষ্টি। বাংলাদেশ ফেরার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। গভীর রাতে সীমান্তের নিরাপত্তা বাহিনীকে এড়িয়ে বাংলাদেশে ফেরার চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন তিনি কারণ ওঁৎ পেতেছিল সেই দালাল চক্র, যে চক্রই তাঁকে বিক্রি করে দেয় মুম্বইয়ে। পুলিশের অনুমান, দালাল ও তরুণীর মধ্যেকার বনিবনার সমস্যার জেরেই নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় বাংলাদেশের তরুণী সুমাইয়াকে।

অমিত মালব্য লিখলেন, "তৃণমূলের পৃষ্ঠপোষকতায় নারী পাচারে জড়িত অপরাধীরা এই হত্যার পিছনে থাকলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।" অমিত মালব্য এর সঙ্গে জুড়ে দিলেন বিজেপি বিরোধী ইন্ডিয়া জোটকেও। বললেন কুম্ভীরাশ্রুর জন্য 'সুপরিচিত' রাহুল গান্ধী কি পশ্চিমবঙ্গের মহিলাদের সুরক্ষায় ব্যর্থতার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তিরস্কার করবেন? নাকি জোট বাঁচাতে মুখে কুলুপ আঁটবেন?

আরও পড়ুন- ডাইনোসর সীমান্ত! ওরা ঠাণ্ডা চোখে পরস্পরকে মেপে চলেছে

 

অথচ পুলিশ তদন্তে জানাচ্ছে বাংলার মেয়েকে পুড়িয়ে মারা হয়নি। গল্প একেবারেই অন্য। গলার নলি কেটে খুন করা হয় সুমাইয়াকে। যাতে কোনওভাবেই চেনা না যায় তাই তাঁর মুখে ওড়না বেঁধে তাতে আগুন লাগিয়ে মুখ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ছোট ছোট বাঁশ দিয়ে হাত-পা একসঙ্গে বেঁধে ফেলে রেখে দেওয়া হয়। যেখানে তাঁর লাশ পড়েছিল, সেখানেই পুলিশ তরুণীর বাংলাদেশি পরিচয় পত্র ও ফোন নম্বর লেখা একটি ডায়রি পায়। সেই সব নম্বরের সূত্র ধরে সুমাইয়ার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালানো হয়।

বসিরহাট জেলা পুলিশ বলছে, সুমাইয়া আখতার বৃষ্টির সঙ্গে থাকা টাকা এবং সোনাদানার লোভেই তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। কারণ দেহের আশপাশ থেকে এই ধরনের কোনও জিনিসপত্রই মেলেনি। এই ঘটনায় নিছর আলি মোল্লা নামে এক ভারতীয় দালালকে আটকও করা হয়।

এই গোটা ঘটনাটির সঙ্গে ইন্ডিয়া জোটের সম্পর্ক অমিত মালব্য খুঁজে পেলেও আসলে তা আছে কিনা এই হিসেব সামান্য সচেতন নাগরিকই করতে পারবেন। এর আগেও মণিপুরের ঘটনার সঙ্গে বাংলার ঘটনাকে মেলানোর চেষ্টা হয়েছে। নানা উপায়ে নানা উদাহরণ তৈরির চেষ্টা সবসময়ই সব পক্ষ করে। কিন্তু বাংলাদেশের সীমান্তে এমন ঘটনা নতুন নয়। বাংলাদেশের মেয়েদের খুন হয়ে যাওয়া ও পাচার হয়ে যাওয়াও নতুন না। সুমাইয়া আখতারের ঘটনা মনে করিয়ে দিচ্ছে ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারির ঘটনা। ফুলবাড়ি উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে বিএসএফ ১৮১ ব্যাটালিয়নের চৌধুরীহাট ক্যাম্পের সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে মারা যায় বাংলাদেশের কিশোরী ফেলানি খাতুন। বেআইনিভাবে সীমান্ত ডিঙোনোর শাস্তি। শুধু খুন না, সমস্ত অনুপ্রবেশকারীদের 'সবক' শেখাতে সীমান্তের কাঁটাতারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেলানির প্রাণহীন দেহ ঝুলিয়ে রেখে দেওয়া হয়।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের ক্রমাগত বিচারের দাবির প্রেক্ষিতে কোচবিহারের একটি বিএসএফ বিশেষ আদালত ২০১৩ সালের ১৩ অমিয়র বিচার শুরু করে। কিন্তু ৬ সেপ্টেম্বর ওই আদালত বিএসএফ সেনার উপর থেকে হত্যার সব অভিযোগ সরিয়ে নেয়।

সুতরাং মিথ্যা ভয়ঙ্কর, কিন্তু অর্ধসত্য আরও ভয়ঙ্কর। গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে অমিত মালব্যরা কতদূর যাবেন?

More Articles