দেওয়ালেরও 'কান' আছে কিন্তু পাখিদের?

Birds Ear: পাখির ডাকে মানুষের ঘুম ভাঙে, আর পাখিদের ঘুম ভাঙে কোন শব্দে? পাখিরা শব্দ শোনে কীভাবে? পাখিদের কান কই?

শহরের ক্যাকোফোনি থেকে বাঁচতে উইকেন্ড ভ্রমণবিলাসীরা সেই সব গন্তব্য বেছে নেন যেখানে ঘুম ভাঙায় না গাড়ির হর্ন। ঘুম থেকে তোলে পাখিদের কলতান। পাখির ডাকে মানুষের ঘুম ভাঙে, আর পাখিদের ঘুম ভাঙে কোন শব্দে? পাখিরা শব্দ শোনে কীভাবে? পাখিদের কান কই? দেওয়ালের মাঝেসাঝে কান আছে বলে শোনা যায়, পাখিদের ক্ষেত্রেও কি বিষয়টা এমন? সত্যিই তো বাআইরে থেকে পাখিদের কান তো দেখাই যায় না মোটে! অথচ পরিবেশে যাতায়াতের জন্য মূলত শব্দকেই ভীষণভাবে ব্যবহার করে পাখিরা। কিন্তু সেই শব্দ যায় কোথায়? কোথায় গৃহীত হয়? পাখিদের কি আদৌ কান আছে?

হ্যাঁ, পাখিদের কান আছে, কিন্তু বাইরের কোনও কান নেই। মানুষের মতো, অন্য পশুদের মতো বাইরে থেকে বড় বড় কান নেই পাখিদের। ওই স্থানে একটি গর্ত রয়েছে। এগুলি খালি চোখে দেখার নয়, কারণ তা পালক দ্বারা আবৃত থাকে। পালকগুলি ছিদ্রকে রক্ষা করে এবং কানের মধ্যে শব্দকে প্রবেশ করানোর মাধ্যমে শ্রবণশক্তি উন্নত করার কাজটিও করে।

পাখিদের কানের ছিদ্রের নীচে ফানেল-আকৃতির খোলা অংশ রয়েছে যা কানের বাইরের ছিদ্র থেকে শুরু করে ভিতরের কান অবধি যায়। বিষয়টা কিন্তু মানুষেরই মতো। তবে বড় পার্থক্য হচ্ছে বাইরে থেকে সেই কান দেখাউ যায় না। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ক্ষেত্রে শব্দের উৎস চিহ্নিত করার জন্য কিন্তু বাইরের কান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কুকুর বা বিড়াল বা অন্য চারপেয়েদের ক্ষেত্রে অনেকসময় কানের বাইরের অংশটি শব্দের উৎস সন্ধান করতে গিয়ে সেদিকে সজাগ হয়ে যায়। তাহলে পাখিরা কীভাবে বোঝে আওয়াজ কোথা থেকে আসছে? কোথায় লুকিয়ে আছে বিপদ?

আরও পড়ুন- মানুষের জীবনে টাকার মতোই গুরুত্বপূর্ণ পাখি! কেন এমন বলছেন বিজ্ঞানীরা?

পাখিরা কীভাবে শুনতে পায়?

শব্দ কোথা থেকে আসছে তা বুঝতে পারা, শনাক্ত করা পাখিদের বেঁচে থাকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পেঁচাদের কথাই ভাবা যাক! নীরবে অবিশ্বাস্য নির্ভুলভাবে ক্ষুদ্রতম স্তন্যপায়ী প্রাণীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে পেঁচা। শুধু শব্দের উৎস বুঝে।

বাঁদিক থেকে শব্দ আসছে না কি ডানদিক থেকে তা নির্ধারণ করতে পারে পাখিরা কারণ তাদের মাথার দুই পাশেই কানের ছিদ্র রয়েছে। তাহলে উপর থেকে বা নীচ থেকে শব্দ আসছে কিনা তা কীভাবে বোঝে পাখিরা? ২০১৪ সালের একটি সমীক্ষায় এই নিয়ে বিশদে কাজ হয়েছে। ওই সমীক্ষা-গবেষণায় আবিষ্কার করা গেছে যে, পাখির মাথার আকৃতি স্বাভাবিকভাবেই তাদের শব্দ গ্রহণের উপায়কে পরিবর্তন করে। উৎসের উচ্চতা সম্পর্কে মাথার আকৃতিই একটা দিশা দেখিয়ে দেয় পাখিদের। অর্থাৎ বড় কান না থাকলেও পাখিরা তাদের উপরে বা নীচে থেকে আসা শব্দগুলি শনাক্ত করতে পারে।

লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামে একটি সংরক্ষিত পেঁচার কানে পেন্সিল রেখে বোঝানো হয়েছে খুলির বাকি অংশের মধ্যে কানের অবস্থান কোথায়।

পাখির কান তাহলে ঠিক কোথায় থাকে?

সাধারণত, পাখির কান মাথার দু'পাশে, চোখের সামান্য নীচে অবস্থিত। তবে কিছু ব্যতিক্রমও রয়েছে। যেমন, পেঁচার কানের অবস্থান অপ্রতিসম। একটি কান অন্যটির চেয়ে উঁচুতে থাকে। এই অবস্থানের ফলেই পেঁচাদের পক্ষে আরও নির্ভুলভাবে কাজ করা সম্ভব। কোথা থেকে শব্দ আসছে তা আরও নিখুঁতভাবে বুঝেই পেঁচা অবিশ্বাস্য দক্ষতায় শিকার করে।

More Articles