২০২৫ সালে সবচেয়ে ভয়াবহ হয়ে দেখা দিতে চলেছে কোন রোগ?
Infectious Disease 2025: বার্ড ফ্লু এই বছর ইতিমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৬১জন মানুষকে সংক্রামিত করেছে।তাঁরা সংক্রামিত গবাদি পশুর সংস্পর্শে আসার ফলে এবং কাঁচা দুধ খাওয়ার ফলে আক্রান্ত হয়েছেন।
২০২০ সালে কোভিড হঠাৎ আবির্ভূত হয়। এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয় তাতে। তারপর থেকে প্রতিক্ষণই নতুন, আরও ভয়ানক কোনও রোগের প্রাদুর্ভবের আতঙ্কে ভুগেছে মানুষ। পরবর্তী বড় সংক্রামক রোগ কী হতে চলেছে এই নিয়ে বিজ্ঞানীমহলেও ব্যাপক গবেষণা চলেছে। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক বা পরজীবী ঘটিত কী হতে পারে সেই রোগ?
ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে কোভিডের প্রভাব কমে গিয়েছে। তবে এই মুহূর্তে তিনটি সংক্রামক রোগ বিশ্বে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে যা জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে মারাত্মক হতে পারে। আগামীতে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ হতে চলেছে ম্যালেরিয়া (পরজীবীঘটিত), এইচআইভি (ভাইরাসঘটিত) এবং যক্ষ্মা (ব্যাকটেরিয়াঘটিত)। প্রতি বছর প্রায় ২ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয় এই তিনটি রোগের কারণে। এরপরেই রয়েছে সেইসব প্যাথোজেনগুলি যেগুলির উপর সেগুলির নিরাময়ে ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক এবং অ্যান্টিভাইরাল ওষুধও আর কোনও কাজ করে না।
পরবর্তী কোন রোগ জটিল হয়ে দেখা দিতে পারে এই নিয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এটি যেকোন ধরনের প্যাথোজেনের মধ্যে আসতে পারে। অন্যদের তুলনায় দ্রুত প্রাদুর্ভাব ঘটাতে পারে এবং এই তালিকায় সবচেয়ে বিপজ্জনক ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস।
আরও পড়ুন- Climate Change: বিকল স্বাস্থ্য, ভয়ঙ্কর রোগের মুখে দেশ! যে আশঙ্কার কথা শোনাল ল্যান্সেটের রিপোর্ট
ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস এই মুহূর্তে ২০২৫ সালের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে চলেছে৷ মূলত ইনফ্লুয়েঞ্জা এ সাবটাইপ H5N1 হচ্ছে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। একে কখনও কখনও 'বার্ড ফ্লু' হিসাবেও উল্লেখ করা হয়৷ এই ভাইরাসটি বন্য এবং গৃহপালিত দুই ধরনের পাখির মধ্যেই ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে, যেমন মুরগি। সম্প্রতি, এই ভাইরাস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি রাজ্যে দুগ্ধ উৎপাদনকারী গবাদি পশুকেও সংক্রমিত করছে। মঙ্গোলিয়ায় ঘোড়ার দেহেও এই ভাইরাস পাওয়া গেছে।
যখন পাখির মতো প্রাণীদের মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জার ঘটনা বাড়তে শুরু করে, তখন সবসময়ই আশঙ্কা থাকে যে এটি মানুষের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। বার্ড ফ্লু এই বছর ইতিমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৬১জন মানুষকে সংক্রামিত করেছে। এই মানুষরা বেশিরভাগই পশুপালনকারী। তাঁরা সংক্রামিত গবাদি পশুর সংস্পর্শে আসার ফলে এবং কাঁচা দুধ খাওয়ার ফলে আক্রান্ত হয়েছেন।
এর আগের দুই বছরে আমেরিকায় মাত্র দু'টি বার্ড ফ্লু সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছিল। সেই তুলনায় এবার বেশ বড় সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। এই সংক্রমণের ফলে মানুষের মৃত্যুর হারও ৩০% প্রায়। ফলে বার্ড ফ্লু অচিরেই বিশ্বজুড়ে ভয়ের কারণ হয়ে উঠতে চলেছে। তবে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, H5N1 বার্ড ফ্লু এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে সংক্রামিত হয় বলে এখনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ফলে মানুষের মধ্যে মহামারী সৃষ্টি করার আশঙ্কা ব্যাপকভাবে কমে যাচ্ছে সেক্ষেত্রে। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসগুলিকে শরীরের ভিতরে ঢুকে বংশবৃদ্ধি করার জন্য কোশের বাইরের সিয়ালিক রিসেপ্টর নামক আণবিক কাঠামোর সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে হয়।
আরও পড়ুন- মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত কিনা বাড়িতে বসেই জানতে পারবেন! তাক লাগাচ্ছে নতুন যে প্রযুক্তি
যে ফ্লু ভাইরাসগুলি মানুষের জন্য অত্যন্ত অভিযোজিত হয় তারা এই সিয়ালিক রিসেপ্টরগুলিকে খুব ভালোভাবে চিনতে পারে।ফলে আমাদের কোশের ভিতরে প্রবেশ করা এদের জন্য অত্যন্ত সহজ। ফলে মানুষের মধ্যে এই ভাইরাসের বিস্তারও বিপুল। অন্যদিকে, বার্ড ফ্লু ভাইরাসা বার্ড সিয়ালিক রিসেপ্টরগুলির সঙ্গে অভিযোজিত হতে পারে। মানুষের কোশের সঙ্গে সংযুক্ত হয় না সহজে। সুতরাং, বর্তমান আকারে, H5N1 সহজেই মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারবে না।
সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ফ্লু জিনোমে একটি মিউটেশন H5N1-কে মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে পারদর্শী করে তুলতে পারে। ফলে মহামারী ঘটতেও পারে। যদি বার্ড ফ্লুর এই বিশেষ অভিযোজন ঘটিয়ে ফেলে এবং মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ঘটাতে শুরু করে তাহলে সরকারকে অবশ্যই এর বিস্তার নিয়ন্ত্রণে দ্রুত পদক্ষেপ করতে হবে। বিশ্বজুড়ে রোগ নিয়ন্ত্রণের কেন্দ্রগুলি বার্ড ফ্লু এবং অন্যান্য রোগের মহামারী রূপ মোকাবিলার প্রস্তুতির পরিকল্পনা ইতিমধ্যেই তৈরি করেছে। যেমন, ২০২৫ সালে এই ঝুঁকির প্রস্তুতির জন্য H5 ভ্যাকসিনের ৫ মিলিয়ন ডোজ কিনেছে যুক্তরাজ্য। এই ভ্যাকসিন বার্ড ফ্লু থেকে রক্ষা করতে পারে।
মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাব্য ক্ষমতা না থাকলেও, ২০২৫ সালে বার্ড ফ্লু প্রাণীদের স্বাস্থ্যকে আরও বেশি প্রভাবিত করতে পারে। এর ফলে গবাদি বা পোলট্রির মৃত্যু তো বটেই, বিশ্বজুড়ে খাদ্য সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার এবং ব্যাপক অর্থনৈতিক সঙ্কট দেখা দেওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। ফলে মানুষ, প্রাণী এবং পরিবেশগত স্বাস্থ্যকে অবিচ্ছিন্ন করেই ভাবতে হবে কারণ প্রত্যেকটির একে অপরের উপর সমান গুরুত্ব এবং প্রভাব রয়েছে।