৬ গ্রহ এক সারিতে! ২৫ জানুয়ারি খালি চোখে সত্যিই দেখা যাবে পৃথিবীর পড়শিদের?

Planetary Parade: বিজ্ঞানীরা বলছেন, জানুয়ারি মাসে, ছয়টি গ্রহ — মঙ্গল, বৃহস্পতি, শুক্র, শনি, ইউরেনাস (দৃশ্যমান নয়) এবং নেপচুন (দৃশ্যমান নয়) রাতের আকাশে দেখা যাবে।

সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে হইচই মহাকাশের একটি বিশেষ মহাজাগতিক ঘটনা নিয়ে। নানাবিধ পোস্টে জানা যাচ্ছে, ৩৯৬ বিলিয়ন বছরে একবার এমন মহাজাগতিক ঘটনা ঘটে। ২৫ জানুয়ারি নাকি ৬ টি গ্রহকেই দেখা যাবে একইসঙ্গে, তাও আবার খালি চোখে! সত্যিই কি এমন অভূতপূর্ব ঘটনার সাক্ষী হতে চলেছে মানুষ? মহাকাশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ মাসে খালি চোখে চারটি গ্রহ সহজেই দেখা যাবে। পরের মাসে, খুব স্বল্প সময়ের জন্য পাঁচটি গ্রহকে দেখা যেতে পারে। এমনটা অনিয়মিত কোনও ঘটনা নয়, বিরল তো নয়ই। তবে হ্যাঁ, দর্শনীয় বটেই।

সমস্ত গ্রহের এক সারিতে আসার ঘটনাটিকে বলা হচ্ছে 'প্ল্যানেট প্যারেড'। সোশ্যাল মিডিয়াতে ছেয়ে যাওয়া নানা রিলস, নানা পোস্টে এমনকী এও বলা হচ্ছে যে ইউরেনাস এবং নেপচুনের মতো গ্রহকেও নাকি দেখা যাবে। অথচ এই গ্রহগুলি খালি চোখে দেখাই যায় না। তাহলে কেন ২০২৫ সালে 'প্ল্যানেট প্যারেড' নিয়ে এত হইচই? এর প্রধান কারণ হচ্ছে, বৃহস্পতি গ্রহটি আরও উজ্জ্বল হয়ে দেখা দেবে এবার। শুক্র এবং মঙ্গল তো আমরা মাঝেসাঝেই দেখি সূর্যাস্ত-পরবর্তী আকাশে জ্বলজ্বল করতে। শনিও থাকে কাছাকাছিই এবং বুধ মাঝেমাঝেই নিজের উপস্থিতি জানান দেয়। ফলে চার থেকে পাঁচটি গ্রহ খালি চোখে দেখা যায়।

আরও পড়ুন- মহাকাশ দখলের লড়াইয়ে বিপদ পৃথিবীরই? পরিবেশের যে ক্ষতি ডেকে আনছে রাশি রাশি উৎক্ষেপণ

গ্রহগুলি সবসময়ই একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। গ্রহগুলি এমনিই যেমন তেমন নিয়মে কিন্তু সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে না। সৌরজগৎ খানিকটা অমলেটের মতো। গ্রহগুলি সূর্যের চারপাশে কাছাকাছি বৃত্তগুলিতে প্রদক্ষিণ করে। প্রত্যেকটিই নির্দিষ্ট দূরত্বে থাকে, তাই প্রদক্ষিণ করতে কম বা বেশি সময় নেয়। রাতের আকাশে কতগুলি গ্রহ দৃশ্যমান তা নির্ভর করে তারা সূর্যের চারপাশে তাদের যাত্রাপথে ঠিক কোথায় আছে, বিশেষ করে পৃথিবী কোথায় রয়েছে তার উপর। কিছু গ্রহ সূর্যের কাছাকাছি থাকে বলে দেখা যাবে— কিন্তু সূর্যের আলোতেই তারা হারিয়ে যায়। সাধারণত শুক্র এবং বুধ এই দু'টি গ্রহের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটে। অন্যরা সূর্য থেকে দূরে থাকে, তাই পৃথিবী থেকে রাতে দৃশ্যমান হয় এই গ্রহরা।

তবে মোটেও ৩৯৬ বিলিয়ন বছরে একবার ঘটা মহাজাগতিক ঘটনা এটি নয়। মহাবিশ্ব রয়েছে ১৩.৭ বিলিয়ন বছর ধরে। তাহলে হঠাৎ ৩৯৬ বিলিয়ন বছরের প্রসঙ্গ আসছে কেন? জিন মিউস ১৯৯৭ সালে তাঁর বই ম্যাথেমেটিকাল অ্যাস্ট্রোনমি মোর্সেলস-এ একটি তাত্ত্বিক বিষয়ে ভুল করেছিলেন। সেই থেকেই এই গণ্ডগোলের জন্ম। স্কাই অ্যান্ড টেলিস্কোপ অনুসারে, পৃথিবীর আকাশে আটটি গ্রহ কোনওদিন দৃশ্যমান হতে পারে কিনা এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তিনি ৩৯৬ বিলিয়ন বছরের পরিসংখ্যান নিয়ে এসেছিলেন। তিনি গ্রহগুলি একে অপরের ১.৮ ডিগ্রির মধ্যে রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। এই মাসে 'প্ল্যানেট প্যারেড' হবে ঠিকই তবে কোনওভাবেই গ্রহগুলি একে অপরের কাছাকাছি নেই, কোনওভাবেই ১.৮ ডিগ্রির মধ্যে তো নেইই!

বিজ্ঞানীরা বলছেন, জানুয়ারি মাসে, ছয়টি গ্রহ — মঙ্গল, বৃহস্পতি, শুক্র, শনি, ইউরেনাস (দৃশ্যমান নয়) এবং নেপচুন (দৃশ্যমান নয়) রাতের আকাশে দেখা যাবে। শুক্র এবং শনি দেখতে সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পরে পশ্চিমদিকে তাকাতে হবে। বৃহস্পতি এবং মঙ্গল দেখা যাবে পূর্বদিকে। আবার মার্চ মাসের গোড়ার দিকে, বুধও দেখা যাবে অল্প সময়ের জন্য। ৮ মার্চে সূর্যাস্তের ঠিক পরে পশ্চিম দিকে তাকালে শনি এবং শুক্রের মাঝে বুধকে দেখা যাবে।

আরও পড়ুন- লালগ্রহে এবার আশ্চর্য সবুজের খোঁজ! ভিনগ্রহীদের উপস্থিতি নিয়ে উস্কে দিল যে জল্পনা

২৫ জানুয়ারি সূর্য অস্ত যাওয়ার পর খালি চোখে চারটি গ্রহ - শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি এবং শনি দৃশ্যমান হবে। ইউরেনাস এবং নেপচুন দেখতে হলে টেলিস্কোপ প্রয়োজন। এই প্ল্যানেট প্যারেড দেখার সর্বোত্তম সময় হলো সূর্যাস্তের ৪৫ মিনিট পর। শুক্র এবং শনির অবস্থান দক্ষিণ-পশ্চিমে হবে। বৃহস্পতি দক্ষিণ-পূর্বে এবং মঙ্গল গ্রহ পূর্বে দেখা যাবে। প্রায় তিন ঘণ্টা স্থায়ী হবে এই প্যারেড। শুক্র এবং শনি পশ্চিমে অস্তমিত হবে। দেখার অভিজ্ঞতা সর্বোত্তম করতে হলে শহরের আলো থেকে দূরে অন্ধকার কোনও জায়গায় গিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম দিগন্তের দিকে তাকালেই চক্ষু সার্থক!

শুক্র এই গ্রহগুলির মধ্যে সবচেয়ে দৃশ্যমান এবং উজ্জ্বল হবে। মঙ্গল গ্রহটি লাল রঙের বলে এটি উজ্জ্বল বাল্বের মতো দেখাবে। শনিকে পশ্চিম আকাশে একটি ক্ষুদ্র বিন্দু হিসাবে দেখা যাবে। বৃহস্পতিকেও দক্ষিণ আকাশে এরকম বিন্দুই মনে হবে।

More Articles