টিকটিকিদের একাধিক লেজ বিশেষ বিরল বা অস্বাভাবিক ঘটনা নয়।
আশ্চর্য বিস্ময়! জানেন, একবার খসে গেলে কতবার গজাতে পারে টিকটিকির লেজ?
Lizard Tail: মাঝে মাঝে একাধিক লেজ সহ টিকটিকি কি দেখতে পান?
রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, "আমি ছাড়া ঘরে থাকে আর একটি জীব এক ভাড়াতেই, সেটা টিকটিকি/ তফাত আমার সঙ্গে এই শুধু, নেই তার অন্নের অভাব।" নাহ, পার্থক্যের এখানেই ইতি নয়। টিকটিকিকে হিংসে করার যথেষ্ট কারণ মানুষের আছে। বাথরুমে সবার উপর মানুষ নয়, টিকটিকিই সত্য। যতই বিরক্তিকর হোক না কেন, কুকুর-বিড়াল, বাঘ, এমনকী ডায়নোসর তাড়ানোও সহজ, অথচ টিকটিকি দূর করা অসম্ভবপ্রায়। দিব্যি দেওয়ালে দেওয়ালে ঘুরে, লুকোচুরি খেলে জীবন কাটিয়ে দেয় পোকাদের ভরসায়। শুধু তাই নয়, দেহ থেকে অঙ্গ খসে গেলে আবার আপনা থেকেই গজিয়ে যায়! মানুষের এমন অঙ্গহানি হলে যদি আপনা থেকেই হাত পা, কিডনি, পাকস্থলী গজাতে পারত! টিকটিকিদের এই দক্ষতা সুপরিচিত, কিন্তু এই প্রতিরক্ষামূলক জাদু কৌশলটি কতবার ঘটতে পারে? লেজ খসলে আবারও লেজ গজাতে পারে ঠিক কতবার? মাঝে মাঝে একাধিক লেজ সহ টিকটিকি কি দেখতে পান?
কার্টিন ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ মলিকুলার অ্যান্ড লাইফ সায়েন্সেস-এর অ্যাডজেন্ট রিসার্চ ফেলো ডঃ ড্যামিয়ান লেটোফেরকে প্রশ্ন করা হয়েছিল এই নিয়েই। তিনি জানাচ্ছেন, যখন সেই প্রথম হাড়ের লেজটি খসে যায়, তখন নতুনটি আবার আগের মতোই হয় না। তবে এর জন্য টিকটিকিদের আরও, বা কখনও কখনও একাধিক লেজ গজাতে কিন্তু বাধা থাকে না। একটি লেজ থেকে কতগুলি অতিরিক্ত লেজ হতে পারে তার আসলে কোনও সীমা কিন্তু নেই।
ডঃ ড্যামিয়ান লেটুফ বলছেন, “টিকটিকির লেজগুলি এমনভাবেই তৈরি যাতে তারা আবার গজাতে পারে। যখন লেজের কশেরুকা একটি নির্দিষ্ট সমতল বরাবর ভেঙে যায়, তখন একটি অনমনীয় তরুণাস্থির প্রতিস্থাপন বৃদ্ধির সূত্রপাত ঘটায়৷ কীভাবে এটি ঘটে তার প্রক্রিয়া নিয়ে দীর্ঘদিনই তেমন গবেষণা হয়নি। তবে মেরুদণ্ডকে ঘিরে থাকা গ্লিয়াল মেমব্রেনের যখন ক্ষতি হয়, তখন পুনর্জন্ম প্রক্রিয়া যে শুরু হয়ে যায় এর প্রমাণ রয়েছে। যদিও এটি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম কারণ যখন কোনও টিকটিকি শিকারীর থেকে পালানোর চেষ্টা করে তখন কশেরুকা অনেক সহজেই ভেঙে যায়। এর অর্থ হচ্ছে, যদি আসল লেজটি আংশিকভাবে সংযুক্ত থাকে তবে অতিরিক্ত লেজ বাড়তেও পারে।”
আরও পড়ুন- কীভাবে বিলুপ্ত হয়েছিল ডাইনোসর? এতদিনে জানতে পারলেন বিজ্ঞানীরা
লেটুফ আরও জানাচ্ছেন, বেশিরভাগ টিকটিকিই যতদিন তাদের মূল কশেরুকা থেকে যায় ততদিনই অনেকবার নতুন লেজের বৃদ্ধি ঘটাতে পারে, তবে বিদ্যমান লেজ থেকে কতগুলি অতিরিক্ত লেজ গজাতে পারে তার কোনও সীমা নেই।
এই ঘটনা থেকেই টিকটিকিদের একটি অদ্ভুত বৈশিষ্ট্যও লক্ষ্য করা গেছে। তবে তা নিয়ে বিশদ চর্চা নেই কারণ এটি বেশ সাধারণ বলেই প্রমাণিত হয়েছে। ভিক্টর ভ্যালি কলেজের জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক ডঃ হিনরিক কায়সার একাধিক লেজ সহ টিকটিকিদের সম্পর্কে উপলব্ধ তথ্য পর্যালোচনা করতে গিয়ে বিষয়টি আবিষ্কার করেন। ফার্কেশন মানে শাখাযুক্ত। কখনও কখনও টিকটিকিদের অনেক সংখ্যক লেজ গজায়। এমনও টিকটিকি দেখা গেছে যাদের নয়টির লেজের 'অঙ্কুরোদ্গম' ঘটেছে।
অধ্যাপক হিনরিক কায়সার এবং টিমোথি বাউমের একটি গবেষণায় ২৫টি গোত্রের ২৫০টি টিকটিকির প্রজাতির মধ্যে এমন ফার্কেশন দেখা গিয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই ছিল জোড়া লেজযুক্ত কিন্তু ১৩ শতাংশ প্রজাতির মধ্যে বেশি সংখ্যক লেজ দেখা গেছে। ২০২০ সালে এই বিষয়ে দু'টি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হওয়ার পর গবেষকরা বলছেন, টিকটিকিদের একাধিক লেজ বিশেষ বিরল বা অস্বাভাবিক ঘটনা নয়।
"যখন আমরা টিম বাউমের বাড়ির উঠোন থেকে শুধু টিকটিকি দিয়ে কাজটা শুরু করেছিলাম, তখনও আমাদের এই ঘটনার বিস্তৃতি সম্পর্কে কোনও ধারণা ছিল না। বিষয়টি এতই সাধারণ যে তা নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদনও নেই। এই গবেষণাপত্রের প্রকাশনার ফলে নাগরিকদের মধ্যে থেকে বহু অভিজ্ঞতা উঠে এসেছে। সমস্ত ধরনের সহকর্মী এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মানুষও নিজস্ব পর্যবেক্ষণ আমাদেরকে জানাচ্ছেন," বলছেন বিজ্ঞানী হিনরিক কায়সার।