অর্ধেক নারী, অর্ধেক পুরুষ! কীভাবে জন্ম হয়েছিল এই বিরল ট্যারান্টুলার?

Half-Male Half-Female Tarantula: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ট্যারান্টুলার কিছু সমস্যা দেখা দিতে থাকে। যত বড় হতে থাকে, দেখা যায় এই ট্যারান্টুলার পুরুষ যৌন অঙ্গটিতে বিকৃতি ঘটছে।

একইদেহে পুরুষ ও নারীর সহাবস্থান পুরাণ আমাদের দেখিয়েছে অর্ধনারীশ্বর রূপে। দেহে পুরুষ, মননে নারী বা এর উল্টোটাও একইভাবে বাস্তব ও স্বাভাবিক। মানুষের জৈবিক লিঙ্গ ও সামাজিক লিঙ্গ পরিচয়ের মাঝে তাই 'অপ্রাকৃতিক' বলে কোনও বিষয় নেই। শুধু মানুষের ক্ষেত্রেই নয়, প্রাণীদের ক্ষেত্রেও এই ঘটনা অস্বাভাবিক না। বিজ্ঞানীরা বেশ কিছুকাল আগে গাইনান্ড্রোমরফিক বৈশিষ্ট্য সহ একটি ট্যারান্টুলা দেখতে পেয়েছিলেন প্রথম। এই মাকড়সার শরীরের একপাশ ছিল মহিলার, অন্য পাশটি পুরুষের।

২০১৪ সালে উরুগুয়ের ইউনিভার্সিটি অফ রিপাবলিকের একটি গবেষণাগারে বিশেষজ্ঞদের একটি দল একগুচ্ছ কমলারঙের বেবুন ট্যারান্টুলাদের (Pterinochilus murinus) পর্যবেক্ষণ করছিলেন। এই মাকড়সাগুলি তখন সদ্য প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছে। তখনই এই অদ্ভুত অর্ধেক নারী অর্ধেক পুরুষ মাকড়সার দেখা মেলে। এই ট্যারান্টুলাটি একেবারেই হাফ-হাফ! একেবারে মাঝখান থেকে নিচ পর্যন্ত বিভক্ত এই মাকড়সার ডান দিকটি লোমশ এবং একটু মোটা পা ছিল। আর বাম দিকটি ছিল লোমহীন এবং চর্মসার। খতিয়ে দেখে জানা যায়, ট্যারান্টুলার শরীরের ডান দিকটি মহিলা এবং বাম দিকটি পুরুষ।

আরও পড়ুন- দেহ থেকে আলাদা যৌনাঙ্গ, ৬ সেমি লম্বা শুক্রাণু! অবাক করবে পোকাদের যৌনজীবন

এই বিষয়টি gynandromorphism নামে পরিচিত। এটি আসলে এমন এক জেনেটিক অবস্থা যেখানে একটি জীব পুরুষ ও মহিলা দুই বৈশিষ্ট্য নিয়েই জন্মগ্রহণ করে। পোকামাকড়, মৌমাছি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের পাখির মধ্যেই এই বিষয়টি দেখা গেছে। তবে প্রথম বৈজ্ঞানিকভাবে মাইগালোমর্ফি ট্যারান্টুলায় এই বিষয়টি সেবারই দেখা গিয়েছিল।

গবেষকরা বলছেন, এই বিশেষ ট্যারান্টুলার এই শারীরিক অবস্থার জন্য আলাদা করে কোনও সমস্যা ছিল না। "গাইনান্ড্রোমরফিক ট্যারান্টুলার হাঁটাচলা এবং খাওয়া স্বাভাবিকই ছিল। অন্তত, আমরা এর দৈনন্দিন আচরণে কোনও অসুবিধা অনুভব করিনি,” বলেছেন রিপাবলিক ইউনিভার্সিটির গবেষক এবং কীটতত্ত্ববিদ ফের্নান্দো পেরেজ-মাইলসন। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ট্যারান্টুলার কিছু সমস্যা দেখা দিতে থাকে। যত বড় হতে থাকে, দেখা যায় এই ট্যারান্টুলার পুরুষ যৌন অঙ্গটিতে বিকৃতি ঘটছে।

ফার্নান্দো পেরেজ-মাইলস বলছেন, “গাইনান্ড্রোমর্ফের বেশ কিছু বিশেষত্ব রয়েছে। ট্যারান্টুলার ক্ষেত্রে, পুরুষরা বড় হওয়ার পরে, যখন তাদের যৌন অঙ্গ প্যালপাল বাল্ব আবির্ভূত হয় তখন মর্ফোলজিক্যাল সংকোচনের কারণে সেই অঙ্গগুলির আকৃতি বিকৃত হতে থাকে। স্ত্রী ট্যারান্টুলার ক্ষেত্রেও এটা ঘটে। গাইনান্ড্রোমর্ফের ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে এর পুরুষ যৌন অঙ্গ বিকৃতির শিকার হয়।" গবেষকরা আরও উল্লেখ করেছেন, গাইনান্ড্রোমর্ফদের অন্যরা আক্রমণও করে বেশি।

আরও পড়ুন-মাকড়সা দেখলেই পিটিয়ে মারছেন? কখনই বাড়ির মাকড়সা মারা উচিত নয় কেন জানেন?

“আরেকটি বিশেষত্ব হল যে আমরা পরীক্ষামূলকভাবে চারবার স্ত্রী মাকড়সাদের সঙ্গে এই গাইনান্ড্রোমর্ফদের মুখোমুখি রাখি। কোনওবারই এরা ঘনিষ্ঠ হয়নি বা স্ত্রীদের উদ্দেশ্যে কোনও যৌন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি৷ উল্টে একবার গাইনান্ড্রোমর্ফকেই একটি স্ত্রী ট্যারান্টুলা আক্রমণ করেছিল, তাতে সেই মাকড়সার একটি পা আহতও হয়েছিল,” বলছেন ফার্নান্দো। তবে এইসব অসুবিধা সত্ত্বেও অপেক্ষাকৃত স্বাভাবিক বয়স অবধিই এরা বেঁচে থাকে।

কোনও জীবের মধ্যে কী কারণে গাইনান্ড্রোমর্ফিজম দেখা যায় তার কারণ পুরোপুরি পরিষ্কার নয়। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, অস্বাভাবিক কোশ বিভাজন এবং প্রাথমিক বিকাশের সময় যৌন ক্রোমোজোমগুলি আলাদা হয়ে যাওয়াতেই এমনটা ঘটে। প্রাণীদের ক্ষেত্রে জৈবিক লিঙ্গ নির্ধারণের জন্য X এবং Y ক্রোমোজোমটাই আসল (সাধারণত XX ক্রোমোজোম থাকলে মহিলা এবং XY থাকলে পুরুষ)। তবে কিছু গাইনান্ড্রোমর্ফিকদের এমন কিছু কোশ থাকবেই যাতে তারা বাবা বা মা কারও কাছ থেকে একটি X ক্রোমোজোম পেতে পারে, আর অন্যজনের থেকে Y ক্রোমোজোম পেতে পারে। এর ফলে মোজাইকের মতো মিশ্রণ হয়, যেখানে একই ব্যক্তির মধ্যে কোশগুলির ভিন্ন জেনেটিক গড়ন দেখা যায়।

মাকড়সাদের যৌন ক্রোমোজোমের বিষয়টি আরও জটিল। মাকড়সাদের বিভিন্ন প্রজাতিতে বিভিন্ন যৌন ক্রোমোজোম দেখা যায়। এই জটিলতা থেকেই বিজ্ঞানীরা বলছেন, গাইনান্ড্রোমর্ফি টারান্টুলাদের ক্ষেত্রে অত্যন্ত বিরল। তবে প্রকৃতি তো এমন আশ্চর্য ব্যতিক্রমেই ভরা।

More Articles