ভারতের দীর্ঘতম সমুদ্র সেতু 'অটল'! ১৭,৮৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি এই ব্রিজ কেন 'বিস্ময়' জানেন?

Atal Setu, India's Longest Sea Bridge: মুম্বই থেকে নভি মুম্বইয়ের মধ্যে সংযোগকারী এই সেতুর পরিকল্পনা আজকের নয়। সেই ১৯৬৩ থেকে এই সেতুটি তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। অবশেষে এত বছর পরে তৈরি হল সেই সেতুর কাজ।

ভারতের দীর্ঘতম সমুদ্রসেতু। যার দিকে অনেকদিন ধরে তাকিয়ে বসে রয়েছে দেশ, সেই অটল সেতু প্রস্তুত। শুক্রবারই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাতে উদ্বোধন হওয়ার কথা সেতুটির। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর নামেই নামকরণ করা হয়েছে সেতুটির। তবে শুধু দীর্ঘতম বলেই নয়, আরও একটি কারণে এই সেতুটি নিয়ে চর্চায় দেশ। ২১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুটি নাকি সম্পূর্ণ ভাবে ভূমিকম্পরোধী। আর সেই শংসাপত্র দিয়েছেন আইআইটি বম্বের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিভাগীয় প্রধান স্বয়ং।

সেতুর অধিকাংশটাই থাকছে সমুদ্রের উপরে। ফলে এর নিচের মাটিতে যেখানে সেতুগুলোর ভিত রয়েছে, তার উপরে ভূমিকম্পের প্রভাবের বিষয়টি মাথায় রাখতে হয়েছিল। জানা গিয়েছে, এটি এমন ভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে রিখটার স্কেলে ৬.৫ মাত্রার চার ধরনের ভূমিকম্প সহ্য করার ক্ষমতা রয়েছে এটির।

আরও পড়ুন: সেতুর পর সেতু, বাড়িঘর ভাসিয়েও ফুঁসছে তিস্তা! কোন ভুলের মাশুল দিচ্ছে সিকিম?

হবে না-ই বা কেন। এই অটল সেতুর প্রকল্পের নকশার জন্য নিয়োগ করা হয় বম্বে আইআইটির ৬ জন স্কলারকে। ২০১৮ সালে এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করা হয় দেশের একাধিক সেরা প্রতিষ্ঠানকে। ৬ মাসের মধ্যে এই ব্রিজের নকশা নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিয়েছিল তারা।

Atal Setu, India's Longest Sea Bridge, Built With Quake-Resistant Tech

মুম্বই থেকে নভি মুম্বইয়ের মধ্যে সংযোগকারী এই সেতুর পরিকল্পনা আজকের নয়। সেই ১৯৬৩ থেকে এই সেতুটি তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। অবশেষে এত বছর পরে তৈরি হল সেই সেতুর কাজ। প্রায় ১৭,৮৪০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে এই সেতু গড়তে। মুম্বই ট্রান্স হারবার লিঙ্ক (MTHL) নামেও পরিচিত এই সেতুটি। মাত্র কুড়ি মিনিটে মুম্বই থেকে নভি মুম্বইয়ে পৌঁছে দেবে এই সেতুটি। মুম্বইয়ের যানজট পৃথিবী বিখ্যাত। আর বাণিজ্যনগরীর সেই কুখ্যাতি কি ঘুচতে চলেছে এবার মুম্বইয়ের এই অটল সেতুর হাত ধরে! বিশেষজ্ঞেরা তো এই সেতুকে 'ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিস্ময়' বলেই ব্যাখ্যা করেছেন।

২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাত ধরে। ভারতের পরিবহণগত পরিকাঠামোর উন্নতিতে একে এক ঐতিহাসিক মাইলফলক বলেও চিহ্নিত করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ২১.৮ কিলোমিটার দীর্ধ সেতুটি মুম্বইয়ের সেউরি ও রায়গড় দেলার নাভা শেভা এলাকাকে সংযুক্ত করছে বলে জানা গিয়েছে।

১২ জানুয়ারি, যুব দিবস তথা স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনটাকেই বেছে নেওয়া হয়েছে এই অটল সেতুর উদ্বোধনের জন্য। এই সেতু তৈরিতে এমন কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে যা ভারতে প্রথম। সেতুতে ব্যবহৃত আলো যাচে সমুদ্রের জলজ পরিবেশকে কোনও রকম ভাবে বিঘ্নিত না করে সেদিকেও নজর রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যেই এই সেতু ব্যবহার নিয়ে একাধিক নিয়মকানুন বেঁধে দেওয়া হয়েছে। জানিয়ে দেওয়া হয়েছে,

  • মুম্বই ট্রান্স হারবার লিঙ্ক (MTHL)-এ চার চাকার গাড়ির সর্বোচ্চ গতির হতে হবে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার।
  • গাড়ি, ট্য়াক্সি, হাল্কা মোটর যান, মিনিবাস ও ও দুই অ্যাক্সেল বাসের মতো যানবাহনের সর্বোচ্চ গতিসীমা থাকতে হবে প্রতি ঘন্টায় ১০০ কিলোমিটার
  • সেতুতে ওঠা ও নামার সময় গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকতে হবে।
  • ইতিমধ্যেই পুলিশের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ওই সেতুতে মোটরবাইক, অটো রিকশা ও ট্র্যাক্টর চলাচল বেআইনি। মোটরসাইকেল, মোপেড, থ্রি-হুইলার, পশু-চালিত এবং ধীরগতির যানবাহনও উঠতে পারবে না ওই সেতুতে।
  • মাল্টি-অ্যাক্সেল ভারী যানবাহন, ট্রাক এবং বাসও মুম্বাইয়ের দিকে ইস্টার্ন ফ্রিওয়েতে প্রবেশ করবে না।

আরও পড়ুন:গলে পড়ছে আস্ত সেতু! বিচিত্র এই সব সেতুতে যেতে পাঁ কাপে চরম সাহসীদেরও

শুক্রবারই ওই সেতুটি উদ্বোধন করার কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। একই সঙ্গে আরও বেশ কয়েকটি প্রকল্প শুরুর কথা রয়েছে তাণর মহারাষ্ট্রে। মুম্বইয়ের ভয়াবহ যানজটকে আরও একটু সহজ করে তুলতে পারে কিনা এই অটল সেতু, সেটাই আপাতত দেখার।

More Articles