জন্ম থেকেই ছিল না যোনি! সরকারি হাসপাতালের কল্যাণে যেভাবে মাতৃত্বের স্বাদ পেলেন তরুণী
Medical Miracle: অবশেষে মেলে সাফল্য। কৃত্রিম যোনি নিয়েই গর্ভবতী হন তরুণী। সম্প্রতি একেবারে স্বাভাবিক উপায়ে পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়েছেন তিনি।
বিরল এবং জটিল এক সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকদের দ্বারস্থ হয়েছিলেন পূর্ব বর্ধমানের এক তরুণী। ছোট থেকেই তাঁর মলদ্বার ও যোনিদ্বার ছিল না। বিয়ের পর সন্তানধারণের আকাঙ্খা নিয়ে কল্যাণীক জেএনএম হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে এসেছিলেন তিনি। কার্যত তরুণীর এই বিরল সমস্যা দেখেশুনে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। তবে হাল ছাড়েননি তাঁরা। বরং ঘটিয়েছেন মিব়্যাকেল। সম্প্রতি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন বর্ধমানের ধাত্রীগ্রামের বাসিন্দা বছর একুশের ওই তরুণী। যা চিকিৎসা শাস্ত্রের ইতিহাসে বিরলতম ঘটনা বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।
ছোট থেকেই শরীরে মলদ্বার বা যোনিদ্বার ছিল না তরুণীর। প্রাথমিক ভাবে মলদ্বারের চিকিৎসার জন্য তিনি আসেন কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে। সেখানে মলদ্বারের সমস্যা মেটে তাঁর। কিন্তু যোনিদ্বারের সমস্যা মেটাতে পারেননি সেখানকার চিকিৎসকেরা। এরপর ২০২৩ সাল নাগাদ কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসক মৃগাঙ্ক মৌলি সাহার কাছে ওই বিরল সমস্যা নিয়ে এসেছিলেন তরুণী। এসএসকেএমের এক চিকিৎসকই ডাক্তার মৃগাঙ্ক মৌলি সাহার নাম পরামর্শ করেন। কল্যাণী হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের আওতাতেই ২০২৩ সালে এই সংক্রান্ত একটি অস্ত্রোপচার হয় তাঁর। যেখানে কৃত্রিম যোনি তৈরি করে মেয়েটির শরীরে বসিয়ে দেন চিকিৎসকেরা। সেটিকে তরুণীর জরায়ুর সঙ্গে সংযুক্তও করে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: গাছ চেরাই নয়! জানেন, চেনের করাত প্রথম আবিষ্কার হয়েছিল সন্তানের জন্ম দিতে!
অবশেষে মেলে সাফল্য। কৃত্রিম যোনি নিয়েই গর্ভবতী হন তরুণী। সম্প্রতি একেবারে স্বাভাবিক উপায়ে পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়েছেন তিনি। মা ও সন্তান দু'জনেই ভালো আছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। কার্যত বিরলের মধ্যে বিরলতম ছিল তরুণীর সমস্যা। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এক লক্ষের মধ্যে এক জনের হয় এই সমস্যা। বেসরকারি ভাবে এই ধরনের অস্ত্রোপচার করা যথেষ্ট ব্যয়বহুলও। কিন্তু সরকারি হাসপাতালে কার্যত নিখরচায় অস্ত্রোপচার সেরে সুস্থ জীবনে পা দিতে পেরেছেন তরুণী।
আর কী বলছেন চিকিৎসক মৃগাঙ্ক গৌরী সাহা, যাঁর হাত ধরে নতুন জীবনে পা রাখতে পারলেন তরুণী? মৃগাঙ্কবাবুর কথায়, "আমরা এক বছর আগে জরায়ুতে অপারেশন করি। কিন্তু সেই অস্ত্রোপচার যে সাফল্য পেয়েছে, তা আজ প্রমাণিত হল। ওই অস্ত্রোপচারের মূল লক্ষ্যই ছিল, ওই তরুণীর গর্ভে সন্তান নিয়ে আসা। এমন বিরল এক সমস্যার সমাধান করতে পেরে আমরাও অত্যন্ত আনন্দিত।"
আরও পড়ুন:টানা ১৬ বছর না জল, না খাবার! সন্তানের জন্ম দিয়েও বহাল তবিয়তে বেঁচে মহিলা
যেভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গিয়েছেন তরুণী, শুধু ফিরেই যাননি, জন্ম দিয়েছেন সুস্থ ও স্বাভাবিক একটি সন্তানের, তাতে খুশি তরুণীর পরিবারও। পাশাপাশি দুই হাসপাতালের চিকিৎসকদের কাছেই কৃতজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন তাঁরা। তরুণীর মা রুহিনা জানান, "আমার মেয়ের যে সমস্যা ছিল তা সরকারি হাসপাতালে সম্পূর্ণ বিনা খরচায় মিটেছে। এর থেকে আনন্দের কী-ই বা হতে পারে।" রাজ্যের সরকারি এক হাসপাতালে যেভাবে এই বিরলতম রোগের চিকিৎসা হয়েছে এবং সাফল্য মিলেছে, তা কার্যত এ রাজ্যের চিকিৎসা পরিকাঠামোর জন্য অত্যন্ত গর্বের বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।