জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে দু'ঘণ্টার বৈঠক মুখ্যমন্ত্রীর, অম্লমধুর কথাবার্তায় অনশন উঠবে?

Mamata Banerjee-Junior Doctors Meeting: এদিন ৪৫ মিনিটের বৈঠকের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু বৈঠক গড়ায় তার চেয়ে অনেক বেশি সময়। প্রায় দু'ঘণ্টা ধরে চলে বৈঠক।

আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে জুনিয়র চিকিৎসকদের অনশন চলছে। দেখতে দেখতে ১৭ দিনে পড়ল চিকিৎসকদের অনশন। গত ৫ অক্টোবর থেকে ধর্মতলায় মেট্রো চ্যানেলের সামনে জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন চলছে। গোটা পুজোটাই কেটেছে তাঁদের অনশনে। এ ব্যাপার নিয়ে তেমন কোনও উচ্চবাচ্য করতে দেখা যায়নি প্রশাসনকে। অবশেষে সোমবার বিকেলে অনশনরত চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলার সিদ্ধান্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের। বিকেল সাড়ে চারটের মধ্যেই চিকিৎসকদের প্রতিনিধিদের নবান্নে পৌঁছে যাওয়ার কথা বলা হয়েছিল। মেপে দেওয়া হয় কথাবার্তার সময়ও। নবান্নের তরফে জানানো হয়েছে, ৪৫ মিনিট সময় দিতে পারবেন মুখ্যমন্ত্রী।

গত বার লাইভ স্ট্রিমিং নিয়ে আপত্তি ছিল নবান্নের। এর আগে ‘লাইভ স্ট্রিমিং’-র দাবিতে নবান্নে ভেস্তে গিয়েছিল জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক। এ বার আন্দোলনকারীরা সে রকম কোনও দাবি রাখেননি। তা সত্ত্বেও বৈঠকের ‘লাইভ স্ট্রিমিং’ হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কালীঘাটের বৈঠকে দেরিতে পৌঁছেছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তার আগে নবান্নের বৈঠকেও দেরিতে পৌঁছেছিলেন তাঁরা। সোমবার নবান্নে নির্ধারিত সময়ের আগেই পৌঁছেছেন আন্দোলনকারীরা। সেজন্য তাঁদের ধন্যবাদও জানান মুখ্যমন্ত্রী।

বৈঠকে ‘দেরিতে আসা’ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ উড়িয়ে আন্দোলনকারী চিকিৎসক আসফাকুল্লা নাইয়া জানান, এর আগে প্রতি বারই বৈঠকের আগে কম সময় পান আন্দোলনকারীরা। সে কারণে নিজেদের মধ্যে জিবি করে বৈঠকে আসতে দেরি হয়ে গিয়েছিল। সরকারের কাছে একাধিক দাবি রয়েছে অনশনরত চিকিৎসকদের। অন্তত দশ দফা দাবিতে আন্দোলন চালাচ্ছেন তাঁরা। কী কী রয়েছে সেই তালিকায়। রয়েছে—

  • অভয়া কাণ্ডের দ্রুত ও স্বচ্ছ বিচার
  • স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমের অপসারণ
  • রেফারেল ব্যবস্থা
  • ফাঁকা বেডের উপর ডিজিটাল নজরদারির ব্যবস্থা
  • রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে টাস্ক ফোর্স গঠন, পর্যাপ্ত পরিমাণে সিসিটিভি বসানো, প্যানিক বাটন, সাহায্যে ফোনের ব্যবস্থার মতো সুবিধার ব্যবস্থা
  • হাসপাতালের নিরাপত্তায় সিভিক ভলিন্টিয়ার নিয়োগ নয়।
  • হাসপাতালে শূন্যপদে নিয়োগ
  • ছাত্রসংসদের ভোট ও আবাসিক চিকিৎসকগের সংগঠনকে স্বীকৃতি
  • 'ভয়ের রাজনীতি' তৈরি করছে যাঁরা, তাঁদের শাস্তি
  • ছাত্র সংসদ ভোট ও আবাসিক চিকিৎসকদের সংগঠনকে স্বীকৃতি
  • রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল এবং হেলথ রিক্রুটমেন্ট বোর্ড দুর্নীতির তদন্ত।

এই দশ দফা দাবিতে আন্দোলন চলছে জুনিয়র ডাক্তারদের। শনিবারই অনশনমঞ্চে গিয়েছিলেন মুখ্যসচিব। তাঁর মাধ্যমে অনশনকারীদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। ১০ দফা দাবি শোনেন তিনি। জবাবও দেন। কিছু দাবি পূরণের জন্য তিন-চার মাস সময় চেয়ে নেন ডাক্তারদের কাছে। তার পরে সোমবার বৈঠকের কথা বলা হয়। মমতার সঙ্গে ডাক্তারদের কথোপকথনের পর মুখ্যসচিব তাঁদের একটি ইমেল করেছিলেন। সেখানে বলা হয়েছিল, অনশন তুলে নিলে সোমবার নবান্নে ডাক্তারদের সঙ্গে বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী। ১০ জন প্রতিনিধিকেই নবান্নে যেতে বলা হয়েছিল। জুনিয়র ডাক্তারেরা মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে রবিবার ইমেলের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা বৈঠকে যোগ দিতে যাবেন। তবে ‘শর্ত’ অনুযায়ী অনশন তার আগে তুলে নেওয়া হবে না। বৈঠকের পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। রবিবার মুখ্যসচিবকে ইমেল করেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁদের ১০ দফা দাবিগুলিই তাতে আরও এক বার উল্লেখ করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকের জন্য সময় দেওয়ায় তাঁকে ধন্যবাদও জানানো হয়েছে ইমেলে।

আরও পড়ুন: বিনীত গোয়েল, স্বাস্থ্য অধিকর্তা অপসারিত! জুনিয়র ডাক্তারদের জয় না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের?

সোমবার সকালেই ধর্মতলার অনশনমঞ্চ থেকে অনশনকারী সায়ন্তনী ঘোষ হাজরা বলেন, ‘‘আশা আছেই বলেই আমাদের প্রতিনিধিরা নবান্নে বৈঠকে যাচ্ছেন। বৈঠকের আগে কোনও নেতিবাচক মন্তব্য আমরা করতে চাই না। মুখ্যমন্ত্রীর উপর আমাদের আস্থা আছে। ন্যায়বিচারের সঙ্গে আমাদের ১০ দফা দাবির যোগসূত্র রয়েছে। আমরা সাত-আট জন ছাড়া সকলেই কাজ করছেন। পরিষেবা চালু আছে। পরিষেবা কখনও ব্যাহত হচ্ছে না। ফলে আমরা আশাবাদী হয়ে বৈঠকে যাব।’’

সোমবার বৈঠকে একের পর এক ইস্যু নিয়ে কথাবার্তা বলতে থাকেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তার দেবাশিস হালদার জানান, আরজি কর-কাণ্ড হয়েছে প্রতিষ্ঠানিক ব্যর্থতার কারণে। পাশাপাশি স্টেট টাস্ক ফোর্সে চিকিৎসকদের সংখ্যা বৃদ্ধির আর্জি জানালেন আন্দোলনকারী চিকিৎসক দেবাশিস। তিনি কমিটিতে জুনিয়র ডাক্তারদের রাখার দাবি তুলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘কমিটি সিলেক্টেড নয়, ইলেক্টেড হতে হবে।’’ দেবাশিস বলেন, ‘‘নির্বাচন যত দিন না হচ্ছে, তত দিন অন্তর্বর্তী এক ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে।’’ নবান্নের বৈঠক থেকে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের প্রাক্তন প্রিন্সিপাল সন্দীপ ঘোষ এবং থ্রেট কালচারে অভিযুক্ত আশিস পান্ডের নাম নেন দেবাশিস হালদার। তাতে আপত্তি জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, যাঁরা এখানে নেই, তাঁদের নাম নেওয়া উচিত নয়। যে বিষয়টা বলতে চান, সেটা যেন বলেন ডাক্তাররা। তাতে দেবাশিস পালটা বলেন যে তাঁদের কয়েকজনের নামে অভিযোগ আছে। সেক্ষেত্রে কী করবেন? মুখ্যমন্ত্রী পালটা বলেন, অভিযোগ তো অনেকের বিরুদ্ধেই আছে।

১৪ অগস্ট রাতে আরজি কর হাসপাতালে ভাঙচুড়ের অভিযোগে ধৃতদের জামিন দেওয়া হয়েছে। সেই নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মতামত জানতে চাইলেন আন্দোলনকারী চিকিৎসক কিঞ্জল নন্দ। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এটা নতুন দাবি’’। চিকিৎসকেরা জানান, এটা তাঁদের দাবি নয়। মতামত জানতে চাইছেন তাঁরা। এর পর আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের তৃতীয় বর্ষের পিজিটি ছাত্র অনিকেত মাহাতো বলেন, আমি জানতাম না যে কলেজে এরকম অপরাধ চক্র চলছে। অনিকেত দাবি করেন যে এমন একটা কমিটি থাকা দরকার, যে কমিটি নিরপেক্ষ হবে। আর কারও অভিযোগ থাকলে তাঁরা সেখানে গিয়ে নিদেনপক্ষে অভিযোগ জানাতে পারবেন ‘‘আরজি করের মতো দ্বিতীয় ঘটনা যাতে না হয়, তা দেখা হোক। মেয়েদের নিরাপত্তার জায়গাটা দেখা হোক।’’ তাঁর দাবি, ‘থ্রেট কালচার’-এর পাশাপাশি যৌন হেনস্থাও চলে।

একই সঙ্গে স্বাস্থ্যসচিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন আন্দোলনকারীরা। এই মর্মে স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমকে অপসারণের দাবিও তোলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁদের মধ্যে আরেকজন বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যসচিবের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযোগ রয়েছে। আপনি প্রমাণ চেয়েছেন। স্যরের হাত দিয়ে বেশ কিছু চিঠি বেরিয়েছে।’’ মমতা বলেন, ‘‘একটা মানুষ অভিযুক্ত কি না, প্রমাণ না পেলে তাঁকে অভিযুক্ত করা যায় না।’’ আন্দোলনকারী এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘দোষ প্রমাণের আগে তাঁকে দোষী বলা যাবে না। তবে অভিযুক্ত বলা যেতে পারে।’’ মুখ্যমন্ত্রী এই দাবি মানেননি। তিনি জানিয়ে দেন, ‘অভিযুক্ত’ বলা যাবে না।

এরই মধ্যে চা খাওয়ার কথা জিজ্ঞেস করেন জুনিয়র ডাক্তারদের। তাঁরা জানান, অনশনে আছেন তাঁদের বন্ধু-সহযোদ্ধারা। এর পরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তাঁদের তো খেতে বলা হচ্ছে না। এর পর নবান্নে উপস্থিত জুনিয়র ডাক্তার-সহ বাকিদের চা পরিবেশন করা হয়। এর পরেই মুখ্যসচিব আন্দোলনরত চিকিৎসকদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া শুরু করেন। মুখ্যসচিব বলেন, ‘‘ইতিমধ্যে অনেক কাজ এগিয়েছে। প্রত্যেক মেডিক্যাল কলেজে যাতে নিরাপদ পরিবেশ থাকে, তা আমাদেরও চেষ্টা। আমরা স্টেট লেভেল টাস্ক ফোর্স করেছি। গ্রিভ্যান্স রিড্রেসল সেল গঠন করা হয়েছে। ইমেল আইডি দিয়েছি, যেখানে অভিযোগ জানাতে পারবেন।’’

কাউন্সিল প্রসঙ্গে মুখ্যসচিব জানান, কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। কমিটির কি সুযোগ-সুবিধা, দায়িত্ব রয়েছে, তা নিয়ে জানানো হবে। কোথায় প্রশাসনিক পদক্ষেপ করা যায়, কোথায় যায় না, তা নিয়েও স্পষ্ট জানানো হবে। মমতা বলেন, ‘‘কেউ কেউ ইচ্ছা মতো কাউন্সিল তৈরি করছেন।’’ একই সঙ্গে মুখ্যসচিব পন্থ আশ্বাস দিয়েছেন, ২০২৫ সালের মার্চের মধ্যে নির্বাচনী প্রক্রিয়া শেষ করা হবে। পাশাপাশি শূন্যপদে দ্রুত নিয়োগের চেষ্টা করছে রাজ্য বলেও জানান তিনি।

এদিন নবান্নে বৈঠক চলাকালীন রাজ্যের হাসপাতালের অধ্যক্ষ-সুপারদের সমালোচনা করে মমতা বলেন, ‘‘অনেক অধ্যক্ষ, সুপার নিজেদের কাজ করেন না। তোমাদের সঙ্গে আমি একমত। তাঁরা রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করেন।’’ এ নিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের ক্ষোভ দীর্ঘদিনের। এর পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘‘আগে ডাক্তারের সংখ্যা ছিল চার হাজার। আমরা এসে তা বৃদ্ধি করে ১৭ হাজার করেছি। ৩৫টি মেডিক্যাল কলেজ করেছি। পেডিয়াট্রিক বিভাগ প্রায় ৬০০। সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র হয়েছে। ওগুলো প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র। সেখানে সব চিকিৎসক দিলে হাসপাতাল চলবে কী করে?’’

একই সঙ্গে চিরাচরিত ভঙ্গিতে কেন্দ্রের দিকে আঙুল তুলতে ভোলেনি মুখ্য়মন্ত্রী। ফের বরাদ্দ না পাওয়ার অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রী জানান, কেন্দ্রের থেকে টাকা মেলে না। তার পরেও রাজ্যের হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বলেন, ‘‘ছোটবেলায় যখন হাসপাতালে যেতাম, দেখতাম অ্যাম্বুল্যান্স যাওয়ার জায়গা নেই। এখন চলাচল করতে পারে। আমরা কিছু করেছি। আরও করতে হবে। হাসপাতালে সন্তান প্রসবের হার এখন ৯৯ শতাংশ। অর্থাৎ ৯৯ শতাংশ মা হাসপাতালে সন্তানের জন্ম দেন। আগে ছিল ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ। আমি চাই ১০০ শতাংশ হোক।’’

এদিন বৈঠকে প্রশ্ন ওঠে ব়্যাগিং নিয়েও। সেই প্রসঙ্গে মুখ খুলে মমতা জানান, এই মানসিকতা বদলাতে হবে। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা চাই না র‌্যাগিং হোক।’’ একই সঙ্গে এদিন জবাব চেয়েছেন মমতা। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘ আরজি করের প্রিন্সিপাল কেন ৪৭ জনকে সাসপেন্ড করলেন কেন? কী ভাবে নিজে সিদ্ধান্ত নিলেন? রাজ্য সরকারকে জানানোর প্রয়োজন মনে করলেন না? এটা থ্রেট কালচার নয়? তদন্ত না করে কাউকে সাসপেন্ড নয়। ইচ্ছে মতো কাজ করবেন না। কেউ কাউকে থ্রেট করবেন না। আমি ক্ষমতাবলে থ্রেট করতে পারি না।’’ তার উত্তরে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি অনিকেত বলেন, ‘‘কমিটি তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার পর সাসপেন্ড করা হয়েছে।’’ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে খানিকটা বাগবিতন্ডাতেও জড়ান ডাক্তারেরা। মুখ্যমন্ত্রী জানান, এ ভাবে তাঁদের না জানিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে না। প্রশাসনিক কাজে হস্তক্ষেপ করা যেতে পারে না। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও আলোচনা না করে সাসপেন্ড করা হল কেন?”

এর পরেই জেলায় জেলায় গিভ্যান্স সেল হওয়া উচিত বলে ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা সাসপেনশন নিয়ে জানালেন, তদন্ত করা হবে। পক্ষপাতিত্ব চলবে না, আগামী দিনে দেখা হবে বিষয়টি। সরকারকে না জানিয়ে ‘অ্যাকাডেমিক’ কাউন্সিল কী ভাবে তৈরি হল, কী ভাবে সাসপেন্ড করা হল, সেই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
এদিন নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করে দেন, রোগী কল্যাণ সমিতিতে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। মমতা জানান, ‘‘তোমাদেরও দায়বদ্ধতা আছে, বোনেদের দেখে রাখা। বোনেদের দায়িত্ব রয়েছে ভাইদের দেখে রাখা।’’

একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টে জুনিয়র ডাক্তারদের আইনজীবীকে কটাক্ষ করতেও ছাড়েননি মমতা। তিনি জানালেন, কোর্টে ওই মহিলা আইনজীবী দাবি করেছেন, রাজ্যের হাসাপাতালে তুলোও পাওয়া যায় না। এর পরেই তিনি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষদের প্রশ্ন করেন, ‘‘এটা কি ঠিক? এতে রাজ্যের মুখ পুড়ল।’’ প্রায় প্রতিটি হাসপাতালে অধ্যক্ষকে ধরে ধরে এ নিয়ে প্রশ্ন করেন মমতা। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ ঝরে পড়ে তাঁর গলা থেকে।

এদিন মমতা জানান, জুনিয়র ডাক্তারের আন্দোলন চলাকালীন রাজ্যের চিকিৎসা পরিকাঠামোয় ব্যপক প্রভাব পড়েছে। মমতা বলেন, ‘‘রং জানার দরকার নেই। পরিচয় জানার দরকার নেই। যদিও জানি সব। ৫৬৩ জন আন্দোলন চলার সময় বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করে টাকা নিয়েছেন।’’ তিনি এ-ও জানান, জুনিয়র ডাক্তারদের স্ট্রাইকের জন্য ৪৫০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। জনগণের টাকা অন্য জায়গায় চলে গিয়েছে। মমতা বলেন, ‘‘তোমরা সাধ্যমতো অনশন করেছো। ভাল করেছো। আমি ২৬ দিন অনশন করেছি। কেউ আসেনি। আমি মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিবকে পাঠিয়েছি। রোজ খবর নিয়েছি। ঘণ্টায় ঘণ্টায় রিপোর্ট নিই।’’ এর পরেই জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন এবং আন্দোলন থেকে সরে আসার পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী। যাতে মানুষ যথাযথ চিকিৎসা পরিষেবা পায়।

এর পরেই জুনিয়র ডাক্তারেরা অভিযোগ করেন, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল, সাগরদত্তের মতো হাসপাতালের পরিবেশ সুস্থ স্বাভাবিক নেই। এখানে বহু পড়ুয়া নটোরিয়াস ক্রিমিন্য়ালের মতো হয়ে গিয়েছে। তাঁরা মেয়েদের সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ ব্যবহার করে। যা লজ্জাজনক। এই প্রসঙ্গেই আন্দোলনকারী অনিকেত সরকারের ‘সদিচ্ছা’ নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। বললেন, ‘‘কলেজ ক্যাম্পাস সুস্থ জায়গা হতে হলে, সেখানে আমাদেরও থাকতে হবে। এক জন ছাত্র কলেজে প্রবেশের পর কী এমন ঘটছে যে সে পচা হয়ে উঠছে? সে কারণে ক্যাম্পাসের পরিবেশ সুস্থ, স্বাভাবিক করা প্রয়োজন।’’

এর সঙ্গেই আন্দোলনকারী ছাত্রীর অভিযোগ, টাস্ক ফোর্স কী কাজ করছে, তার সদস্য কত জন, তা নিয়ে কিছু তাঁরা জানেন না। দেবাশিস জানান, টাস্ক ফোর্সে সব মেডিক্যাল কলেজের প্রতিনিধিত্ব থাকা প্রয়োজন। অনিকেত ‘থ্রেট কালচার’ প্রসঙ্গে জানান, অনেক অভিযুক্তের পরীক্ষার খাতা পরখ করা হলে দেখা যাবে, তিনি ১০ নম্বরও পাননি। অথচ পদকে পেয়ে বেরিয়ে গিয়েছেন। হাউস স্টাফ হয়েছেন। মমতা পাল্টা বলেন, অনেকের বিরুদ্ধেই অনেক অভিযোগ রয়েছে।

আন্দোলনকারী ছাত্রীর অভিযোগ, টাস্ক ফোর্স কী কাজ করছে, তার সদস্য কত জন, তা নিয়ে কিছু তাঁরা জানেন না। দেবাশিস জানান, টাস্ক ফোর্সে সব মেডিক্যাল কলেজের প্রতিনিধিত্ব থাকা প্রয়োজন। পাশাপাশি স্টেট টাস্ক ফোর্সের মতো কলেজেও কমিটি গড়ার ডাক জুনিয়র ডাক্তারদের। মমতা বলেন, ‘‘আমার কাছে একটি পরিবার আসার কথা। তাঁদেরও মেয়ে মারা গিয়েছে। আমায় যেতে হবে। আন্দোলন শুরু করলে শেষও করতে হবে। মানবাধিকার কমিশনের দাবিতে ২১ দিন ধর্না করেছিলাম। সিঙ্গুর নিয়ে ২৬ দিন অনশন করেছি। কেউ আসেনি। গোপাল গান্ধী ব্যক্তিগত ভাবে আমায় ভালবাসতেন বলে এসেছিলেন। তোমাদের ভালবাসি। আলোচনায় ফাঁক রাখা হয়নি। মন খুলে কথা বলেছো।’’

আরও পড়ুন:অনশন, ধর্না কতদিন? জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে রফাসূত্র কেন বের করতে পারছে না রাজ্য?

আন্দোলনকারী এক মহিলা চিকিৎসক জানালেন, ‘‘আন্দোলন আপনার থেকেই শিখেছি।’’ মমতা জানালেন, তিনি যখন অনশন করেছেন, প্রশাসনের তরফে কেউ আসেননি। কলেজস্তরে র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ এলে কে খতিয়ে দেখবে? অ্যান্টি র‌্যাগিং কমিটি নাকি টাস্ক ফোর্স? প্রশ্ন জুনিয়র ডাক্তারদের। তার পরেই মমতা বলেন, ‘‘আমার কাছে একটি পরিবার আসার কথা। তাঁদেরও মেয়ে মারা গিয়েছে। আমায় যেতে হবে। আন্দোলন শুরু করলে শেষও করতে হবে। মানবাধিকার কমিশনের দাবিতে ২১ দিন ধর্না করেছিলাম। সিঙ্গুর নিয়ে ২৬ দিন অনশন করেছি। কেউ আসেনি। গোপাল গান্ধি ব্যক্তিগত ভাবে আমায় ভালবাসতেন বলে এসেছিলেন। তোমাদের ভালবাসি। আলোচনায় ফাঁক রাখা হয়নি। মন খুলে কথা বলেছো।’’ এর পরেই মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে আন্দোলনকারী এক মহিলা চিকিৎসক জানালেন, ‘‘আন্দোলন আপনার থেকেই শিখেছি।’’ মমতা জানালেন, তিনি যখন অনশন করেছেন, প্রশাসনের তরফে কেউ আসেননি।

এদিন ৪৫ মিনিটের বৈঠকের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু বৈঠক গড়ায় তার চেয়ে অনেক বেশি সময়। এ সংক্রান্ত কাগজপত্র কাল তিনটের মধ্যে পেয়ে যাবেন পড়ুয়ারা, জানান মুখ্যমন্ত্রী। জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে আরজি কর কলেজের বর্তমান প্রিন্সিপ্য়ালের প্রশংসাও করা হয়েছে। তবে এই অম্ল-মধুর বৈঠকের পরেও কি উঠবে জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন। এর পরে ঠিক কী সিদ্ধান্ত নেন তাঁদের প্ল্যাটফর্ম, সেদিকেই তাকিয়ে বাংলা।

 

More Articles