আয়লার মতোই দাপট দেখাবে ঘূর্ণিঝড় 'ডানা'? কারা দিল এমন নাম?
Cyclone Dana: গত ঘূর্ণিঝড়টির নামটি দিয়েছিল বাংলাদেশ। এবারের ঘূর্ণিঝড়ের নাম ডানা বা দানা। কী অর্থ এই নামের?
ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ডানা। আবহাওয়া দফতরের তরফে জানানো হচ্ছে, বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপ অঞ্চল থেকে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হলে, তার সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে বাংলা ও ওড়িশার উপকূলে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, মঙ্গলবার সকালে এটি গভীর নিম্নচাপের পরিণত হতে পারে। এর পর শক্তি বৃদ্ধি করে বুধবার পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিতে পারে সেটি। এখনও পর্যন্ত ঠিক রয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে সেটির নাম হবে ডানা বা দানা।
এদিকে সময় যত এগোচ্ছে, ততই বাড়ছে আশঙ্কা। ইতিমধ্যেই জায়গায় জায়গায় জারি করা হয়েছে সতর্কতা। মৌসম ভবন জানিয়ে দিয়েছে, উত্তর আন্দামান সাগর এবং তৎসংলগ্ন পূর্ব-মধ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে থাকা ঘূর্ণাবর্তের কারণে সোমবার ভোরে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন উত্তর আন্দামান সাগরে একটি নিম্নচাপ অঞ্চল তৈরি হয়েছে। মৌসম ভবনের শেষ দেওয়া খবর অনুযায়ী, বুধবার থেকেই ঝোড়ো হাওয়া বইবে পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশার উপকূলে। ৪০ কিমি থেকে ৬০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। আগামী বুধবার তথা ২৩ তারিখের মধ্যেই ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে সেই নিম্নচাপ। তেমনটাই জানাচ্ছে আবহাওয়া দফতর। হাওয়া অফিস জানাচ্ছে, ২৪ তারিখ রাত থেকে ২৫ তারিখের সকালের মধ্যে উত্তর-পশ্চিম দিকে নর্থ উড়িষ্যা এবং সাগর আইল্যান্ডের দিকে পুরী ও সাগর আইল্যান্ডের দিকে অগ্রসর হতে পারে সেটি।
আরও পড়ুন: ডানা আসছে! কবে কোন জেলায় চলবে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব?
আর সেটি অতিক্রম করার সময় বাতাসের গতিবেগ থাকতে পারে ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা। কোথাও কোথাও আবার ১২০ কিলোমিটার বেগে ও ঝোড়ো হাওয়া বইবে। আগামী বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে সেটি। এর প্রভাবে আমাদের পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলিতে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। মৎস্যজীবীদের জন্য ইতিমধ্যেই সতর্কতা জারি করা হয়েছে। যাতে ২৩ তারিখ থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত তারা যাতে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে না যায়।
২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আয়লার গতিবেগও ছিল প্রতি ঘণ্টায় ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার। যার দাপটে কার্যত ওটলপালট হয়ে গিয়েছিল একাধিক এলাকা। তবে কি আয়লার মতোই দাপট দেখাতে চলেছে ঘূর্ণিঝড় ডানাও। এর আগে পশ্চিমবঙ্গের কান ঘেঁষে বেরিয়ে গিয়েছিল রেমাল ঘূর্ণিঝড়। যদিও তার ব্যাপক প্রভাব পড়েনি এই বাংলায়। সেই ঘূর্ণিঝড়ের নামটি দিয়েছিল বাংলাদেশ। এবারের ঘূর্ণিঝড়ের নাম ডানা বা দানা।
এবারের ঘূর্ণিঝড়টির নাম দেওয়ার কথা ছিল কাতারের। দানা বা ডানা নামটি দিয়েছে তাঁরাই। আরবি ভাষায় এই শব্দের অর্থ ‘সুন্দর এবং মূল্যবান মুক্তো’। অবশ্য এর অর্থ নিয়ে অন্য একটি মতও রয়েছে। আরবিতে দানা শব্দের অর্থ ‘উদারতা’ বা ‘দান’। কেউ কেউ আবার ডানা শব্দের অর্থ মুক্তি (free) বলেও জানিয়েছেন। আরব সাগর এবং বঙ্গোপসাগর, অর্থাৎ উত্তর ভারত মহাসাগরে তৈরি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণের জন্য একটি তালিকা প্রস্তুত করার সিদ্ধান্ত নেয় আন্তর্জাতিক আবহাওয়া দফতর (ওয়ার্ল্ড মেটিয়োরোলজিক্যাল ডিপার্টমেন্ট)।
২০২০ সালে মৌসম ভবনের তরফে ১৬৯টি ঘূর্ণিঝড়ের তালিকা দেওয়া হয়। বর্তমানে বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণাবর্ত যদি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়, তা হলে তালিকা অনুযায়ী সেই ঘূর্ণিঝড়ের নাম হবে ‘দানা’ বা ‘ডানা’। তবে এখনও আবহাওয়া দফতরের তরফে এই নাম ঘোষণা করা হয়নি। ঘূর্ণিঝড় পরিস্থিতি তৈরি হলে তবেই ঘোষণা হবে নাম। যার প্রভাবে উত্তরবঙ্গেও বৃষ্টি হতে পারে। বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। তবে অন্য কোনও জেলায় আবহাওয়া সংক্রান্ত সতর্কতা জারি করা হয়নি।
পাশাপাশি আলিপুর হাওয়া অফিস জানিয়েছে, সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত কলকাতায় আপাতত বৃষ্টির সতর্কতা নেই। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত ভাবে হালকা বৃষ্টি হতে পারে। তবে বৃহস্পতিবার ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে কলকাতায়। সেই সঙ্গে ভারী বর্ষণ হতে পারে হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা এবং ঝাড়গ্রামেও। বৃহস্পতিবার দক্ষিণবঙ্গের তিন জেলায় অতি ভারী বৃষ্টিও হতে পারে। সেই তালিকায় রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর এবং পশ্চিম মেদিনীপুর। এই জেলাগুলিতে বুধবারও ভারী বৃষ্টি হতে পারে। বুধবার ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনাতেও। এ ছাড়া দক্ষিণবঙ্গের আর কোনও জেলায় আপাতত আবহাওয়া সংক্রান্ত কোনও সতর্কতা জারি করা হয়নি।
আরও পড়ুন:Climate Change: বদলাচ্ছে পৃথিবীর আকৃতি, যে ভয়াবহ বিপদের মুখে আমরা
উপকূল অঞ্চলে বাতাসের গতিবেগ বেশি থাকার কারণে বেশ কিছু গাছ, কাঁচা রাস্তা, বিপজ্জনক বাড়ি, কুঁড়েঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বেশ কিছু লোলাইন জায়গাগুলোতে জলমগ্ন হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। কংসাবতী ও দামোদর এই দুটি নদীর জল বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড় ডানার প্রভাব আয়লার মতোই ভয়াবহ হতে চলেছে কিনা, তা তো সময় বলবে। আপাতত ঘূর্ণিঝড়ের আতঙ্কে কাঁপছে পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা-সহ একাধিক রাজ্য।