পাকিস্তানের চেয়েও দ্বিগুণ! বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে দরিদ্র মানুষ ভারতেই, জানাচ্ছে রিপোর্ট
Highest Poverty in India: ভারতে মোট ২৩৪ মিলিয়ন মানুষ দারিদ্র্য সীমার নীচে বসবাস করছে, যা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ।
ভারতবর্ষে অমৃতকাল চলছে। সরকারের দাবি অনুযায়ী ভারত বিশ্বের ক্ষমতাশালী দেশগুলির অন্যতম। ভারতের অর্থনীতির দিকেই সারা বিশ্বের নজর! এই ভারতবর্ষ, যা নাকি জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসনের সঙ্গে কানামাছি খেলছে, সেই ভারতবর্ষের আসল চেহেরা কেমন? বিভিন্ন মাপকাঠিতে বিচার সম্ভব। আপাতত আসা যাক ধনী-দরিদ্রের কথাতেই। ইউনাইটেড নেশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম এবং অক্সফোর্ড পভার্টি অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেই প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ভারতে মোট ২৩৪ মিলিয়ন মানুষ দারিদ্র্য সীমার নীচে বসবাস করছে, যা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। অর্থাৎ সবচেয়ে বেশি দরিদ্র মানুষের বাস আমাদের সোনার ভারতে!
২০২৪ সালের গ্লোবাল মাল্টিডায়মেনশনাল পভার্টি ইন্ডেক্স রিপোর্ট তৈরি হয়েছে বিশ্বের ১১২টি দেশের সবচেয়ে সাম্প্রতিক তুলনামূলক তথ্য নিয়েই। এই ১১২টি দেশের মধ্যে ২১টি নিম্ন-আয়ের দেশ, ৪৭টি নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশ, ৪০টি উচ্চ-মধ্য আয়ের দেশ এবং ৪টি উচ্চ-আয়ের দেশ। স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং জীবনযাত্রার মানের ১০টি সূচকের উপর ভিত্তি করে প্রতিটি পরিবার এবং ব্যক্তির বঞ্চনার তালিকা তৈরি করেই দারিদ্র্য পরিমাপ করা হয়েছিল।
১১২টি দেশ এবং ৬.৩ বিলিয়ন মানুষের মধ্যে ১.১ বিলিয়ন মানুষ অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার ১৮.৩% মানুষ তীব্র দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করে। আর এই দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাসকারীদের অর্ধেকের বেশিই হচ্ছে শিশু।
আরও পড়ুন- কারও পকেটে ৭০০ কোটি তো কারও ৩০ হাজার! মোদি-মন্ত্রিসভার সবচেয়ে ধনী ও দরিদ্রতম সদস্য কারা জানেন?
পাকিস্তানে, ৯৩ মিলিয়ন মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করছে। ইথিওপিয়ায় ৮৬ মিলিয়ন, নাইজেরিয়ায় ৭৩ মিলিয়ন এবং কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে ৬৬ মিলিয়ন। ভারতকে জুড়ে নিলে এই পাঁচটি দেশেই দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাসকারী ১.১ বিলিয়নের প্রায় অর্ধেক অর্থাৎ ৪৮.১% মানুষের বাস। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বিশ্বের প্রায় অর্ধেক দরিদ্র সাব-সাহারান আফ্রিকায় (৫৫৩ মিলিয়ন) এবং দক্ষিণ এশিয়ায় (৪০২ মিলিয়ন) এক তৃতীয়াংশেরও বেশি মানুষ বাস করে।
ওই প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রায় ৪০% অর্থাৎ ৪৫৫ মিলিয়ন মানুষ সেই সব দেশে দারিদ্র্যসীমার নীচে বাস করেন যেখানে যুদ্ধ চলছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, "এর মধ্যে ২১৮ মিলিয়ন মানুষ যুদ্ধরত দেশে বসবাস করছে, ৩৩৫ মিলিয়ন মানুষ অস্থির বা সংঘাতে জেরবার দেশগুলিতে বাস করছে এবং ৩৭৫ মিলিয়ন মানুষ অশান্তির দেশে বসবাস করছে। ২৮৯ মিলিয়ন (২৫.১%) মানুষ এই তিনটি অবস্থার মধ্যে দু'টি বা তার বেশি অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছেন, আর ১৮৪ মিলিয়ন (১৬%) মানুষ এই তিনটি অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়েই যাচ্ছেন।
আরও পড়ুন-অপুষ্টিতে ভুগে মরছে লাখো লাখো শিশু, এই ভারত চেয়েছিলেন নেতাজি?
যুদ্ধপ্রভাবিত দেশগুলিতে, সামগ্রিক দারিদ্র্যের হার ৩৪.৮%। সংঘাত বা যুদ্ধ নেই এমন দেশগুলিতে এই হার ১০.৯% মাত্র। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধ বিগ্রহে আক্রান্ত এবং অশান্তিপূর্ণ দেশগুলিতে এই দারিদ্র দ্বিগুণেরও বেশি। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে যুদ্ধ ও হিংসা তীব্র হয়েছে, তা বহুগুণ বেড়েছে। হতাহতের সংখ্যা নতুন নতুন রেকর্ড গড়েছে। কোটি কোটি মানুষ বাস্তুহারা হয়েছে। জীবন ও জীবিকার ব্যাপক বিঘ্ন ঘটেছে বিশ্বজুড়েই। জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির অ্যাডমিনিস্ট্রেটর অ্যাচিম স্টেইনার বলছেন, দারিদ্র্যের মধ্যে থাকা মানুষদের ব্যাপক ও কার্যকরীভাবে সমর্থন জোগাতে এবং দারিদ্র্যের চক্রটি ভাঙতে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে উন্নয়ন দরকার। সম্পদ বৃদ্ধি এবং সেই সম্পদ ব্যবহারের জন্য সমান সুযোগ দরকার এই মানুষদের।
প্রতিবেদন অনুসারে, ৮৩ শতাংশেরও বেশি দরিদ্র মানুষ গ্রামীণ এলাকায় বাস করেন। গ্রামে দারিদ্র্যের হার শহরাঞ্চলের তুলনায় বেশি। বিশ্বব্যাপী, শহুরে জনসংখ্যার মাত্র ৬.৬% মানুষ গরিব। গ্রামীণ জনসংখ্যার ২৮% মানুষই দরিদ্র। বিশ্বের এই ১.১ বিলিয়ন মানুষের বাঁচার প্রয়োজনীয় চাহিদাগুলিরই অভাব রয়েছে। ৮২৮ মিলিয়নের পর্যাপ্ত স্যানিটেশন নেই, ৮৮৬ মিলিয়নের ঠিকঠাক বাড়ি নেই এবং ৯৯৮ মিলিয়নের রান্নার জ্বালানি নেই। মোট ৬৩৭ মিলিয়ন মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছেন। ভারত অমৃতকালে তাহলে দারিদ্র্যের নিরিখে জগৎসভায় পরিচিত হলো তবে?