হিজবুল্লাহর গোপন বাঙ্কারে বিপুল সোনাদানা, ধনরাশির খোঁজ! হাসপাতালের নীচে কেন মজুত এত অর্থ?

Israel-Hezbollah War: হিজবুল্লাহের গোপন বাঙ্কারে লুকানো রয়েছে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের নগদ এবং সোনাদানা। বেইরুটের একটি হাসপাতালের নিচে রয়েছে হিজবুল্লাহের সেই গোপন বাঙ্কার।

গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে ইজরায়েল। সম্প্রতি ইজরায়েলি হামলায় মৃত্যু হয়েছে হামাস প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারের। তার পরেই ইজরায়েলের উপর হামলার প্রাবাল্য বাড়ানো হবে বলে শাসিয়েছিল হিজবুল্লাহ। কদিন আগেই হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহের মৃত্যু হয়েছে ইজরায়েলি হামলায়। যার পরে ইজরায়েলের সঙ্গে সংঘাত উস্কে তুলেছিল ইরানও। তবে লেবাননে হামলা থেকে আদপেও সরে আসেনি ইজরায়েল। বরং বেড়েছে আক্রমণের তীব্রতা। এবার হিজবুল্লাহের গোপন বাঙ্কারে বিপুল ধনরত্নের সন্ধান পেল ইজরায়েল।

হিজবুল্লাহের গোপন বাঙ্কারে লুকানো রয়েছে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের নগদ এবং সোনাদানা। বেইরুটের একটি হাসপাতালের নিচে রয়েছে হিজবুল্লাহের সেই গোপন বাঙ্কার। ইজরায়েলের দাবি, হিজবুল্লাহের কার্যকলাপে খরচ করা হত ওই বিপুল পরিমাণ ধনরাশি। এবং তার সঙ্গে প্রাক্তন হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরুল্লাহের সরাসরি যোগাযোগ ছিল বলেও দাবি ইজরায়েলের। ইজরায়েল সামরিক মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি সম্প্রতি একটি টেলিভিশন ভাষণে জানান, বাঙ্কারটি রয়েছে বেইরুটের আল-সাহেল হাসপাতালের নীচে। যেটি তৈরি করান প্রাক্তন হিজবুল্লাহ প্রধান সইয়দ হাসান নাসরুল্লাহ। গত মাসেই ইজরায়েলি হামলায় মৃত্যু হয় তাঁর।

গত রবিবার রাতে হিজবুল্লাহের ৩০টি ঘাঁটি লক্ষ্য করে বিমানহামলা চালায় ইজরায়েল। তার মধ্যে ছিল হিজবুল্লাহের সঙ্গে যুক্ত আর্থিক সংস্থা আল-কার্ড আল-হাসান (AQAH) দ্বারা পরিচালিত বেশ কয়েকটি সাইটও। তবে বেইরুটের ওই হাসপাতাল, যার নীচের বাঙ্কারে ওই বিপুল ধনরাশি লুকিয়ে রেখেছে হিজবুল্লাহ, সেখানে হামলা করেনি ইজরায়েল। ইজরায়েলের গুপ্তচর সংস্থাই ওই বিপুল ধনরাশির খবর প্রকাশ্যে এনেছে। ড্যানিয়েল হাগারি খোদ জানান, গোয়েন্দা তথ্য থেকেই সেই ধনসম্পদের কথা জানতে পেরেছেন তারা। বেইরুটের কেন্দ্রে আল-সাহেল হাসপাতালে কোনও রকম হামলা চালানো হয়নি।

আরও পড়ুন: তিন মাসের মাথায় ফের খুন হামাস-প্রধান, কেন সিনওয়ারকে ‘কসাই’ বলত ইজরায়েল?

যদিও বেইরুটের যে হাসপাতালটির নীচে ওই বিপুল ধনরাশির সন্ধান পেয়েছে বলে দাবি করেছে ইজরায়েল, তা নাকচ করে দিয়েছে আল-সাহেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, ইজরায়েল মিথ্যাচারণ করছে। হাসপাতালটি ইতিমধ্যেই খতিয়ে দেখেছে লেবানন সেনাবাহিনী। যা দেখে তারা রিপোর্ট দেয়, অপারেটিং রুম, রোগী এবং মর্গ ছাড়া আর কিছুই নেই হাসপাতালে। আল সাহেল হাসপাতালের ডিরেক্টর ফাদি আলামেহ জানান, ইজরায়েলি হামলার ভয়ে হাসপাতালটি সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়ে। ইজরায়েলি হামলার ভয়ে অত্যন্ত আতঙ্কে রয়েছে তারা।

কার্যত অর্থের ওই বিপুল ভাণ্ডারে হামলা না চালানোর নেপথ্যে একাধিক কারণ দেখিয়েছেন হাগারি। তিনি জানান, অনুমান করা যাচ্ছে, ওই বাঙ্কারে কম করে হলেও অর্ধেক বিলিয়ন ডলার নগদ অর্থ ও সোনা মজুত রয়েছে। যা লেবানন রাষ্ট্রের পুনর্গঠনে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে বলাই বাহুল্য, রবিবার রাতে ইজরায়েলের নিশানায় ছিল হিজবুল্লাহের সেই বাঙ্কারটিও। তবে লেবাননের জঙ্গিগোষ্ঠী হিজবুল্লাহের অন্তত তিনশোটি ঘাঁটিতে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে হামলা চালিয়েছে ইজরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স। বিশেষ করে হিজবুল্লাহের কাছে অর্থ সরবরাহ যাতে বন্ধ করে দেওয়া যায়, সে কারণেই তাদের আর্থিক ও লজিস্টিক হাবগুলিকেই বেছে বেছে নিশানা করছে ইজরায়েল।

১৯৮০ সাল থেকে লেবাননে কাজ করছে আর্থিক সংস্থা আল-কার্ড আল-হাসান (AQAH)। কী কাজ করে তারা? সূত্রের খবর, সোনার বিনিময়ে লেবাননের নাগরিকদের ঋণ দিয়ে আসছে সংস্থাটি। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হিসেবে নথিভুক্ত থাকলেও ইজরায়েল ও আমেরিকার দাবি, একেবারেই হিজবুল্লাহের হাতের তলায় থাকা একটি আর্থিক নেটওয়ার্ক এটি। যাকে অর্থ পাচারের কাজে এবং নাগরিক ব্যাঙ্কিংয়ের আড়ালে হিজবুল্লাহের আর্থিক সহায়তায় ব্যবহার করা হয়।

ইজরায়েলের সামরিক মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি জানান, হিজবুল্লাহের আয়ের প্রধান উৎস মূলত দুটি। এক তো ইরান সরকার, যারা প্রতিনিয়ত হিজবুল্লাহকে আর্থিক মদত জুগিয়ে চলে। দ্বিতীয় লেবাননের জনগণ। যাদের থেকে নিজেদের কাজকর্ম চালিয়ে যাওয়ার আর্থিক সহায়তা আদায় করে নেয় হিজবুল্লাহ। ওই বিশেষ আর্থিক সংস্থাটির মাধ্যমে সিরিয়া দিয়ে নগদ স্থানান্তর করে থাকে তারা। পাশাপাশি ইরান থেকে লেবাননে সোনা পাচারের কাজেও ব্যবহার করা হয় সংস্থাটি। ইজরায়েলি গোয়েন্দা সূত্রের খবর, লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন ও তুরস্কে হিজবুল্লাহ দ্বারা পরিচালিত কারখানাগুলি থেকে প্রাপ্ত আয়কেও ব্যবহার করা হয় সন্ত্রাস কাজকর্মে।

সোমবার সিরিয়ায় হিজবুল্লাহের প্রধান আর্থিক ইউনিট, যেটি ইউনিট ৪৪০০ নামে পরিচিত, সেটিকে লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইজরায়েল। জানা গিয়েছে, তেহরান তেল বিক্রি করে যে অর্থ আয় করে, সেখান থেকে হিজবুল্লাহের কাছে আর্থিক সাহায্য পাঠায় ইরান। ইজরায়েলের দাবি, সেই ইউনিটের কম্যান্ডারকে হত্যা করেছে ইজরায়েল সাম্প্রতিক ওই হামলায়। অক্টোবরের গোড়াতেই মহম্মদ জাফক সির নামে হিজবুল্লাহের আর্থিক কাজকর্মের এক প্রধান মাথাকে হত্যা করে ইজরায়েলি সেনা। যা তাদের অন্যতম বড় সাফল্য বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

আরও পড়ুন:৭ অক্টোবরের স্মৃতি উস্কে ফের প্রত্যাঘাত, ইজরায়েলে আঘাত ফেরাল হামাস হিজবুল্লাহ

২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে হঠাৎই ইজরায়েলে হামলা করে দিয়েছিল প্যালেস্টাইনি জঙ্গিগোষ্ঠী হামাস। তার পরেই হামাসের বিরুদ্ধে গাজায় যুদ্ধঘোষণা করে দেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। সেই যুদ্ধ প্রায় এক বছর ধরে চলছে। গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধঘোষণার পর থেকেই ইজরায়েলে বারবার হামলা চালিয়েছে হিজবুল্লাহরা। ছোড়া হয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন। সাম্প্রতিক কালে লেবাননে পর পর পেজার বিস্ফোরণকে কেন্দ্র করে সংঘাত বাড়ে ইজরায়েল ও হিজবুল্লাহের মধ্যে। সেই হামলায় অন্তত ২ হাজার হিজবুল্লাহ জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যু হয় অসংখ্য সাধারণ মানুষেরও। সেই দায় ইজরায়েলের কাঁধেই ঠেলেছিল তারা। তার পরেই ইজরায়েলে হামলা করে দেয় হিজবুল্লাহ। তেল আভিভে মোসাদের সদর দফতর-সহ একাধিক জায়গা লক্ষ্য করে রকেট হামলা চালিয়েছিল হিজবুল্লাহ। পাল্টা উত্তর দেয় ইজরায়েলও। কার্যত গাজার মতোই লেবাননেও হিজবুল্লাহ দমনে সক্রিয় হয়ে ওঠে ইজরায়েলি সেনা। তার পর থেকেই যুদ্ধ চলছে লেবাননে। কোথায় গিয়ে থামবে সেই যুদ্ধের, তা এই মুহূর্তে বলা কঠিন। এই যুদ্ধের মধ্যে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ঢুকে পড়েছে ইরানের পাশাপাশি ইয়েমেনের জঙ্গিগোষ্ঠী হাউথিও। তারাও প্রায়শই হামলা চালাচ্ছে ইজরায়েলে। এই পরিস্থিতিতে জটিল এই যুদ্ধের শেষ কোথায়, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় গোটা আন্তর্জাতিক মহল।

More Articles