বাড়ি থেকে বেরোবেন না! বাংলাদেশের প্রবাসী ভারতীয়দের সাবধান করলেন মোদি
Agitation in Bangladesh: সংরক্ষণবিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে এই দেশজোড়া অশান্তির মধ্যেই বাংলাদেশে বসবাসকারী ভারতীয়দের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করে একটি অ্যাডভাইজারি জারি করেছে নরেন্দ্র মোদি সরকার।
অশান্ত বাংলাদেশ। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে কয়েকদিন ধরেই উত্তাল গোটা দেশ। মঙ্গলবার ছাত্রবিক্ষোভ চলাকালীন নিরস্ত্র পড়ুয়াদের উপর গুলি চালায় পুলিশ ও আধাসেনা। অন্তত ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে সেদিনের বিক্ষোভে। জখম অসংখ্য। সেই ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার গোটা দেশ জুড়ে কমপ্লিট শাটডাউনের ডাক দিয়েছে আন্দোলনকারী। যা কার্যত স্তব্ধ করে দিয়েছে গোটা দেশ। বন্ধ যান চলাচল। রাস্তাঘাটে পুলিশের গাড়ি আর অ্যাম্বুল্যান্স ছাড়া অন্য কোনও যানবাহন দেখা যাচ্ছে না রাস্তায়। জরুরি পরিষেবা বাদ দিয়ে বন্ধ বাকি সমস্ত বেসরকারি অফিস, দোকান বাজার থেকে সব কিছুই। ক্রমশ বাড়ছে বিক্ষোভের উত্তাপ। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে বসবাসকারী ভারতীয়দের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
কর্মসূত্রে বহু ভারতীয়ই বাংলাদেশে থাকেন। বাংলাদেশে আত্মীয়স্বজন থেকে শুরু করে বন্ধুবান্ধব রয়েছে অনেকেরই। বাংলাদেশে যে ভাবে অশান্তির আগুন ছড়িয়েছে, তাতে উদ্বেগ বেড়েছে ভারতীয়দের। অশান্তির জেরে বাংলাদেশের বহু জায়গাতেই বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। বহু জায়গাতেই ফোনও কাজ করছে না ঠিক মতো। স্বজনবান্ধবদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে অনেককেই।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ শাটডাউন, হাসিনার পুলিশের নিশানায় সেই বিএনপি
সংরক্ষণবিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে এই দেশজোড়া অশান্তির মধ্যেই বাংলাদেশে বসবাসকারী ভারতীয়দের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করে একটি অ্যাডভাইজারি জারি করেছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। বিদেশ মন্ত্রকের তরফে বৃহস্পতিবার একটি সতর্কবার্তা জারি করে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশে যেসব ভারতীয় নাগরিক ও পড়ুয়ারা রয়েছেন, তাঁরা যেন এই সময়ে ভ্রমণের মতো ব্যাপারগুলি এড়িয়ে যান। এমনকী বাড়ির বাইরে বেরোনোর ব্যাপারেও তাদের সতর্ক করা হয়েছে।
ইতিমধ্যেই ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনের তরফেও বাংলাদেশে বসবাসকারী ভারতীয়দের জন্য সতর্কতা জারি করা হয়েছে। হাই কমিশনের তরফেও বিবৃতি দিয়ে বাংলাদেশের প্রবাসী ভারতীয়দের সমস্ত রকম ভ্রমণ বাতিল করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বাড়ির বাইরে বেরোনোর ক্ষেত্রেও সতর্কতা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে হাইকমিশনের তরফে। বাংলাদেশের বিশেষ একটা-দু'টো জায়গা নয়, গোটা দেশের বড় অংশ জুড়েই ছড়িয়েছে অশান্তির আগুন। ছাত্রবিক্ষোভে পুড়ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, খুলনার মতো একাধিক জায়গা। ইতিমধ্যেই সেই সব জায়গাগুলিতে বসবাসকারী ভারতীয়রা যাতে প্রয়োজন পড়লে হাইকমিশনে যোগাযোগ করতে পারেন, তার জন্য আলাদা আলাদা হেল্পলাইন নম্বর দেওয়া হয়েছে। ফোন তো বটেই, প্রয়োজনে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমেও যোগাযোগ করা যেতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
Advisory on the ongoing situation in Bangladesh. pic.twitter.com/mjXouAST2M
— India in Bangladesh (@ihcdhaka) July 18, 2024
বৃহস্পতিবারের দেশজোড়া শাটডাউনে কার্যত স্তব্ধ গোটা বাংলা দেশ। রাজধানী ঢাকা-সহ বিভিন্ন শহর জুড়ে ধর্মঘটের ছবি। তার সঙ্গেই বিভিন্ন জায়গায় চলছে ধর্না, অবস্থান বিক্ষোভ এবং অবরোধ। মঙ্গলবার বিকেলে দেশ জুড়ে যে হিংসাত্মক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তার বলি ৬। জখম অসংখ্য। বুধবারও গভীর রাত পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে ঢাকা-সহ বিভিন্ন জায়গায়।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে লড়াই করা পরিবারগুলির জন্য চাকরিতে এতদিন পর্যন্ত ৩০ শতাংশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা ছিল সেখানে। সেই সংরক্ষণ বাতিলের দাবিতে পথে নেমেছে পড়ুয়া ও চাকরিপ্রার্থীরা। তাদের দাবি এই ব্যবস্থার মাধ্যমে নিজেদের সমর্থকদের এগিয়ে রাখতে চায় বাংলাদেশে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামি লিগ। মেধাভিত্তিক ব্যবস্থা চালু করার দাবিতে পথে নেমেছে বাংলাদেশের তরুণ সমাজ। এ নিয়ে ২০১৮ সালেও গর্জে উঠেছিল বাংলাদেশ। সেই ইস্যুকে কেন্দ্র করেই ফের উত্তাল হয়ে উঠল পড়শি দেশ।
আরও পড়ুন: বন্ধ স্কুল-কলেজ, বিকল ইন্টারনেট! যে অন্ধকারের দিকে এগোচ্ছে বাংলাদেশ
দেশ ভাগের পঁচাত্তর বছর কেটে গেলেও এখনও ভারতের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য ভাবেই জড়িয়ে ভারত। ফলে পড়শি দেশের অশান্তির ছায়া খুব সহজেই এসে পড়ে এপার বাংলাতেও। চাকরিসূত্রে বা পড়াশোনার প্রয়োজনে বহু ভারতীয়ই বাংলাদেশে যান। তাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে এই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে। ইতিমধ্যেই পরিস্থিতি সামলাতে দেশের সমস্ত স্কুল-কলেজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে যেতে চাওয়া ভারতীয়দের যাত্রা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারতের বিদেশমন্ত্রক।