অনলাইন এফআইআর, কমান্ড সেন্টার! বাংলাদেশ পুলিশকে যেভাবে সাজাচ্ছেন ইউনূস
Bangladesh Command Center: ইউনূস বলেছেন, "আমাদের ততটাই সতর্ক থাকতে হবে যেন আমরা যুদ্ধের মতো পরিস্থিতির মধ্যে আছি। এই বছরটি দেশের জন্য অত্যন্ত সংকটময়।"
'নয়া' বাংলাদেশ গঠনের কাজ চলছে। অগাস্টের গণ অভ্যুত্থানের জেরে শাসক হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত হওয়াতে স্বাভাবিক ভাবেই অস্থির হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক, সংখ্যালঘুদের উপর হামলা, হাসিনা আমলে দুর্নীতি— সমস্ত ইস্যু নিয়েই মাসের পর মাস উত্তাল থেকেছে বাংলাদেশ। সে দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী মহম্মদ ইউনূস একাধিকবার জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশকে নতুনভাবে গড়তে চাইছেন তারা। তারই অংশ হিসেবে এবার বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে একটি কমান্ড সেন্টার তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছেন ইউনূস।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় নিরাপত্তা প্রধানদের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছিলেন প্রধান উপদেষ্টা। উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খুদাবক্স চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গণি এবং পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, ডিএমপি, কোস্টগার্ড ও বিশেষ শাখার প্রধানরা। এই বৈঠকের পরেই ইউনূস কমান্ড সেন্টার গঠনের নির্দেশ দেন। কী এই কমান্ড সেন্টার, কেন তা গড়ে তোলার উপর এত গুরুত্ব দিচ্ছেন ইউনূস?
আরও পড়ুন- গরিবের উপর করের বোঝা! ভ্যাট বাড়ানোর পথই কেন বেছে নিল ইউনূস সরকার?
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস বলছেন, নিরাপত্তা সংস্থাগুলিকে অবশ্যই যোগাযোগ রক্ষার সর্বোচ্চ পর্যায়ে যেতে হবে যাতে তারা কোনও পরিস্থিতিতে দ্রুত হস্তক্ষেপ করতে পারে। ইউনূস বলছেন, "আমাদের একটি কমান্ড সেন্টার বা একটি কমান্ড সদর দফতর স্থাপন করতে হবে, যা সমস্ত পুলিশ এবং নিরাপত্তা সংস্থার মধ্যে সমন্বয়সাধন করবে।" ইউনূসের দাবি, নতুন কমান্ড সেন্টার খুব দক্ষভাবে এবং নিবিড়ভাবে সারাদেশের থানা এবং সমস্ত আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করবে।
বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও প্রশ্ন উঠেছে। গণ অভ্যুত্থানের সময় ব্যাপক পরিমাণ অস্ত্র লুঠ হয় থানা থেকে। তারপর নানা অংশে হিংসার খবরও আসে। সে দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে নিরাপত্তা প্রধানদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন ইউনূস। বলেছেন, "আমাদের ততটাই সতর্ক থাকতে হবে যেন আমরা যুদ্ধের মতো পরিস্থিতির মধ্যে আছি। এই বছরটি দেশের জন্য অত্যন্ত সংকটময়। আমাদের কাউকে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে দেওয়া উচিত নয়।"
ইউনূসের দাবি, ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার সহযোগীরা, আওয়ামী লীগের কর্মীরা বাংলাদেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির কাজ করছে, বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। বাংলাদেশকে আবারও অস্থির করে তোলার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে বলেও আশঙ্কা তাঁর।
ইউনূস আশ্বাস দিয়েছেন, প্রতি নাগরিকের মানবাধিকার রক্ষিত হবে। এর জন্য নিরাপত্তা প্রধানদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ধর্মীয় বা জাতিগত সংখ্যালঘুদের উপর যেকোনও হামলা নস্যাৎ করতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন ইউনূস। রমজান মাসে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে তোলাবাজদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর জন্যও পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন ইউনূস। পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করার পর রাজধানীতে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা কমেছে বলেই দাবি পুলিশের।
পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম জানিয়েছেন, জুলাই ও অগাস্ট মাসে হাসিনার নিরাপত্তা বাহিনীর নৃশংসতা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলা পর্যবেক্ষণের জন্য পুলিশ ১০টি দল গঠন করেছে। পুলিশকে এই মামলাগুলির দ্রুত নিষ্পত্তির এবং এই মামলাগুলির ফলে কোনও নিরপরাধ মানুষের যাতে হয়রানি না হয় তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন ইউনূস।
আরও পড়ুন- গণঅভ্যুত্থানের আহত যোদ্ধদের জন্য যে বিশেষ পদক্ষেপ মহম্মদ ইউনূসের
ইউনূসের মতে, পুলিশের একটি নির্দিষ্ট ফোন নম্বর থাকা উচিত যাতে অভিযোগকারীরা দেশের যেকোনও প্রান্ত থেকেই অন্তত একটি এফআইআর দাখিল করতে পারেন। পুলিশকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অনলাইন এফআইআর দায়েরের জন্য একটি নতুন ফোন নম্বর চালু করার নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা। পাশাপাশি অনলাইনে মামলা দায়েরের বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য একটি কল সেন্টার স্থাপনের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি যাতে অনলাইনে মামলা দায়ের করতে সমস্যা হলে আম জনতা সহজেই কল সেন্টার থেকে সাহায্য নিতে পারেন। পুলিশ প্রধান বাহারুল আলম জানিয়েছেন, গণঅভ্যুত্থানের সময় ভারতে পালিয়ে আসা শেখ হাসিনার বিষয়ে রেড নোটিশ জারির জন্য বাংলাদেশ ইন্টারপোলের কাছেও অনুরোধ জানিয়েছে।