১০০ কোটি টাকার ভাগাভাগি! জনৈক অভিষেকের বিরুদ্ধে চার্জশিটে কী লিখেছে সিবিআই?

Abhishek Banerjee CBI: সিবিআইয়ের দাবি, প্রায় ১ ঘণ্টার ওই অডিওতে জনৈক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম শোনা গিয়েছে।

প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে তদন্ত করতে গিয়ে চার্জশিটে সিবিআই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামোল্লেখ করেছে। সেই নিয়ে পাল্টা বিবৃতিও দিয়েছেন তৃণমূল নেতা তথা সাংসদ অভিষেকের আইনজীবী। স্পষ্ট বলেছেন, তাঁর মক্কেলকে হেনস্থা করা হচ্ছে। নাম উস্কে দিয়ে আগামীতে হেনস্থা করার রাস্তা জিইয়ে রাখছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ২৮ পাতার চার্জশিটে সিবিআই ঠিক কী দাবি করেছে? সিবিআইয়ের এই চার্জশিটে একটি অডিও ক্লিপের উল্লেখ রয়েছে। কেন্দ্রীয় তদঙ্কারী এই সংস্থা বলছে, বেআইনি নিয়োগের জন্য সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে ‘কালীঘাটের কাকু’-র থেকে ১৫ কোটি টাকা চেয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়! কে এই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়? তিনিই কি তৃণমূল নেতা? তিনিই কি সাংসদ? নাকি এই অভিষেক অন্য কোনও অভিষেক? সকল অভিযুক্তের পরিচয় উল্লিখিত রইলেও, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আসলে কোন জন, তা সিবিআই স্পষ্ট করেনি। সিবিআইকে আক্রমণ করে সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, "বিজেপি যেমন ভাববাচ্যে কথা বলে, তেমন সিবিআইও ভাববাচ্যে কথা বলেছে।’’ অভিষেক বলছেন, তাঁর ভাবমূর্তি নষ্টের চেষ্টা করছে কেন্দ্রের এই তদন্তকারী সংস্থা।

ওই অডিও ক্লিপে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং মানিক ভট্টাচার্যের নামও শোনা গিয়েছে বলে জানিয়েছে সিবিআই। চার্জশিট অনুযায়ী, ঘুষের টাকা দিতে ২০১৭ সালে বেহালায় ‘কালীঘাটের কাকু’ অর্থাৎ সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র বাড়িতে গিয়েছিলেন অপর দুই অভিযুক্ত কুন্তল ঘোষ, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আরও দু’জন। সিবিআইয়ের দাবি, এই অডিও ক্লিপ সেই সময়কার। অডিওটি বিস্ফোরক কারণ কীভাবে বেআইনি শিক্ষক নিয়োগ চলত, কারা কীভাবে দুর্নীতিতে যুক্ত ছিলেন, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল যা ওই অডিও ক্লিপে ধরা পড়েছে বলে দাবি করেছে সিবিআই। ওই গোপন বৈঠকে কীভাবেই বা অডিও রেকর্ড হলো, তা কীভাবেই বা হাতে পেলেন সিবিআইয়ের আধিকারিকরা?

চার্জশিটে সিবিআই দাবি করেছে, ওই বৈঠকটি হয়েছিল ২০১৭ সাল। কুন্তল ঘোষের নির্দেশেই তাঁর বেতনভুক কর্মী অরবিন্দ রায়বর্মণ একটি মোবাইলে সমস্ত কথোপকথন রেকর্ড করেন এবং তা ল্যাপটপে সেভ করে রাখেন। তদন্ত শুরু হলে ল্যাপটপ থেকে ওই অডিও ক্লিপ সিবিআইয়ের হাতে আসে। সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সেটি সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্সেস ল্যাবরেটরিতে পাঠায় সিবিআই। এর পাশাপাশি দুর্নীতিতে অভিযুক্ত সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র, কুন্তল ঘোষ এবং শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠস্বরের নমুনাও দিল্লিতে পাঠানো হয় পরীক্ষার জন্য। সিবিআই চার্জশিটে জানিয়েছে, ২০১৭ সালের ওই দিন সুজয়কৃষ্ণের বাড়িতে কুন্তল এবং শান্তনুর সঙ্গে ছিলেন অরবিন্দ এবং সুরজিৎ চন্দ। এই দুই সাক্ষীই গোপন জবানবন্দিও দিয়েছেন। সাক্ষীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ওই অডিওর সত্যতা স্বীকার করেছেন বলেই জানিয়েছিল সিবিআই।

আরও পড়ুন- প্রাথমিক দুর্নীতির চার্জশিটে নাম! আত্মপক্ষ সমর্থনে যা বলছেন অভিষেক

গত ২১ ফেব্রুয়ারি সুজয়কৃষ্ণের বিরুদ্ধে জমা দেওয়া চার্জশিটে সিবিআই ওই অডিয়ো ক্লিপের কথোপকথনের বৃত্তান্ত জানিয়েছে বিশদে। সিবিআইয়ের দাবি, প্রায় ১ ঘণ্টার ওই অডিওতে জনৈক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম শোনা গিয়েছে। এখানেই প্রশ্ন উঠেছে কে অভিষেক? সত্যিই কি তিনি তৃণমূল সাংসদ? কেন সেই বিষয়ে কিছুই উল্লেখ করেনি সিবিআই? পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে ‘প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী’ পরিচয় লেখা হয়েছে, সুজয়কৃষ্ণের ক্ষেত্রে ‘লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডস’-এর ‘চিফ অপারেটিং অফিসার’ পরিচয় উল্লিখিত আছে। বলা আছে, শান্তনু এবং সুজয়কৃষ্ণ তৃণমূলের সদস্য ছিলেন। সুজয়কৃষ্ণের ‘সাব-এজেন্ট’ হয়ে কাজ করতেন শান্তনু। তাহলে কেন অভিষেক নামটি পাওয়া সত্ত্বেও সিবিআই কোনও পরিচয় চার্জশিটে উল্লেখ করেনি?

চার্জশিটের ১২ নম্বর পাতায় সিবিআই লিখেছে, অডিও ক্লিপের কথোপকথনে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রকে বলতে শোনা গিয়েছে, বেআইনি নিয়োগের জন্য ১৫ কোটি টাকা দাবি করেছিলেন অভিষেক। সুজয়কৃষ্ণ তখন বলেছিলেন, তিনি ওই টাকা দিতে পারবেন না কারণ, আগেই প্রার্থীপিছু সাড়ে ৬ লক্ষ টাকা করে নেওয়া হয়ে গিয়েছে। সিবিআই আরও  লিখেছে, সুজয়কৃষ্ণকে বলতে শোনা গিয়েছে, চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ আটকে দেওয়ার জন্য বলেছিলেন অভিষেক, অন্যথায় ওই প্রার্থীদের গ্রেফতার করিয়ে দেওয়া হবে। অথবা তাঁদের চাকরি হবে বাড়ি থেকে দূরে।

সিবিআই বলছে, অডিও ক্লিপ থেকেই জানা গেছে, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মারফতই বেআইনি নিয়োগের ব্যবস্থা করতেন কুন্তল, শান্তনু এবং সুজয়কৃষ্ণ। বেআইনি নিয়োগ নিয়ে অভিষেকের সঙ্গে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থের মনোমালিন্য চলছিল। সুজয়কৃষ্ণ, শান্তনু এবং কুন্তল মিলে আরও দু’হাজার চাকরিপ্রার্থীর থেকে নিয়োগের নামে টাকা তোলার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে জানতে পেরেছে সিবিআই। ওই চাকরিপ্রার্থীদের থেকে ১০০ কোটি টাকা তুলতে চাইছিলেন তাঁরা। এই ১০০ কোটি টাকা থেকে পার্থ, মানিক এবং অভিষেককে ২০ কোটি টাকা করে দেওয়া হবে বলে ঠিক করেছিলেন সুজয়কৃষ্ণেরা। বাকি ৪০ কোটি টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করার পরিকল্পনা ছিল।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের শেষে অভিষেক যখন ‘নবজোয়ার যাত্রা’ করছিলেন, সেই সময়েই তাঁকে হাজিরা দিতে বলেছিল সিবিআই। বাঁকুড়ায় কর্মসূচি স্থগিত রেখে নিজাম প্যালেসে এসে হাজিরা দিয়েছিলেন তিনি। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এখন বলছেন, ‘‘আমায় ডেকে ১০ ঘণ্টা জেরা করেছিল। নবজোয়ার থামিয়ে দিয়ে এসেছিলাম। সেদিনও যা বলেছিলাম, আজও তাই বলছি। কোথাও যদি প্রমাণ করতে পারে, আমার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে মদতে ১০ পয়সার দুর্নীতি হয়েছে, তা হলে চার্জশিট দিতে হবে না। ফাঁসির মঞ্চে গিয়ে মৃত্যুবরণ করে নেব!’’

More Articles