অন্তর্বর্তী সরকার গড়ে আপাতত চলবে দেশ, জাতির উদ্দেশে ভাষণে যে বার্তা বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের
Bangladesh Unrest: শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরই সেনাপ্রধান জাতির উদ্দেশে ভাষণে জানিয়েছেন, বাংলাদেশে এই আন্দোলনে প্রতিটি হত্যার বিচার হবে।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর। দেশ জুড়ে গণবিক্ষোভের মুখে পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য হয়েছেন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতিমধ্যেই বোনের সঙ্গে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। আপাতত সেনাবাহিনীর হাতে দেশ। তবে সেনাবাহিনীর প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান জানান, অন্তর্বর্তী সরকার গড়ে আপাতত চালানো হবে দেশ। হাসিনা ঢাকা ছাড়ার আগেই বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর তরফে জানানো হয়, জাতীর উদ্দেশে ভাষণ দেবেন সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান। এদিন হাসিনাকে পদত্যাগের সময় বেঁধে দিয়েছিল সেনাবাহিনী। সোমবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ ঢাকার বাসভবন ছেড়ে বোনকে নিয়ে কপ্টারে রওনা হন হাসিনা। ইস্তফা দিয়েই দেশ ছাড়েন তিনি। যতদূর জানা গিয়েছে, তিনি আশ্রয় নিয়েছেন ভারতে।
সোমবার জাতির উদ্দেশে ভাষণের আগেই বাংলাদেশের বিশিষ্টজন ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন সেনাপ্রধান। জানা গিয়েছে, জামাত, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা ছিলেন সেই বৈঠকে। তাঁরা এক যোগে একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করার। সেনাপ্রধান জানান, যেখানে হাজির ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল ও জোনায়েত সাকিও। আসিফ এদিন সেনাপ্রধানের সামনেই ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে একটি বার্তা দিয়েছেন। সেনাপ্রধান জানান, ওঁর কথা সবাই শোনে, শ্রদ্ধা করে। ছাত্রছাত্রীরা ওঁর কথা শুনেছেন। তাঁরা এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে চলে আসবে বলেই আশাবাদী তিনি। তবে সেনা প্রধান একই সঙ্গে জানিয়েছেন ওই বৈঠকে আওয়ামি লিগের কোনও প্রতিনিধি ছিলেন না। এ দিন সাংবাদিক-সহ দেশের সকলের সামনে হাজির হয়ে সামগ্রিক পরিস্থিতির কথা জানান সেনাপ্রধান। তিনি জানিয়েছেন, আপাতত অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে দেশ চালানো হবে। একই সঙ্গে প্রতিটি হত্যার বিচারের আশ্বাসও দেন তিনি।
আরও পড়ুন: অবশেষে ইস্তফা হাসিনার! বাংলাদেশ ছেড়ে বোনের সঙ্গে কোন দেশে আশ্রয়?
কোটা বিরোধী বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে কিছুদিন আগেই উত্তাল হয়ে উঠেছিল গোটা বাংলা দেশ। ছাত্রআন্দোলন প্রশমিত করতে চরম দমন-পীড়ন নীতি নেন হাসিনা সরকার। অন্তত ২০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল পুলিশ ও আওয়ামি লীগের গুন্ডাদের হাতে। সুপ্রিম কোর্টের রায় অবশ্য শেষপর্যন্ত সংরক্ষণের বিপক্ষেই যায়। তবে এত এত মৃত্যুর প্রতিবাদে সুবিচার চেয়ে ফের পথে নামে বাংলাদেশ। দু'দিন আগেই বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছিলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের জনগণের আস্থার প্রতীক। জনগণের স্বার্থে এবং রাষ্ট্রের যে কোনও প্রয়োজনে সেনাবাহিনী সব সময় জনগণের পাশে আছে এবং থাকবে। এরপর রবিবার বাংলাদেশ জুড়ে সহিংসতায় মৃত্যু হয়েছে প্রায় ১০০ জনের। তার পরেই সোমবার জনবিক্ষোভের মুখে টলে যায় সরকারের গদি।
শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরই সেনাপ্রধান জাতির উদ্দেশে ভাষণে জানিয়েছেন, বাংলাদেশে এই আন্দোলনে প্রতিটি হত্যার বিচার হবে। তবে একই সঙ্গে তিনি জনগণকে অনুরোধ করেছেন হিংসার পথ ছেড়ে সংযত হওয়ার, দেশে শান্তি বজায় রাখার। একই সঙ্গে যে ভয়ঙ্কর হত্যালীলা ঘটেছে সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশে, তা যাতে ফের না ঘটে, সে জন্য সেনাবাহিনী ও পুলিশকে কোনও রকম গোলাগুলি না চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে জনগণের উদ্দেশে ওয়াকার-উজ-জামান জানান, তাঁরাও যাতে কোনও রকম ভাঙচুর না চালান। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে বহু ক্ষতি হয়েছে। পুনরায় যাতে কোনও ক্ষয়ক্ষতি না হয়, তা দেখার দায়িত্ব জনগণের বলেই জানান তিনি। বাংলাদেশের জনতার কাছে সেনাপ্রধানের আর্জি, ‘‘ভাঙচুর, মারামারি, সংঘর্ষ থেকে বিরত থাকুন। ধৈর্য হারাবেন না। আমি নিশ্চিত, আপনারা যদি আমাদের কথামতো চলেন, আমরা যদি একসঙ্গে কাজ করি, তা হলে আমরা একটা সুন্দর পরিণতির দিকে এগোতে পারব।’’
বাংলাদেশের সেনাপ্রধান এদিন জানিয়েছেন, ‘‘আমরা এর আগে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেছি। বিশিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা রাষ্ট্রপতির কাছে যাব। তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করব। আপনারা সেনাবাহিনীর উপর আস্থা রাখুন। সশস্ত্র বাহিনীর উপর আস্থা রাখুন আমরা সমস্ত দায় দায়িত্ব নিচ্ছি।’’ গত কয়েকদিনে যে পরিস্থিতি দেখেছে বাংলাদেশ, তাতে বলাই বাহুল্য, মানুষের সরকার ও পুলিশের উপর আস্থা তলানিতে ঠেকেছে। এদিন সেনা প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান জানান, ‘‘আমি কথা দিচ্ছি। আপনারা এখনই আশাহত হবেন না। আপনাদের যত দাবি আছে, তা আমরা পূরণ করব এবং দেশের শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনব।’’
আরও পড়ুন: হাসিনাশাহির অবসান চেয়ে ফের মৃত্যু! কোন পথে এগোচ্ছে ঢাকার লং মার্চ?
ফলে এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জনতার সহায়তার দিকেই তাকিয়ে রয়েছে সে দেশের সেনাবাহিনী। একই সঙ্গে মানুষকে আশ্বস্ত করে সেনাপ্রধান পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশের জনতাকে সংঘাত থেকে বিরত থাকার। তাঁর মতে, ‘‘সংঘাতের মাধ্যমে আর নতুন কিছু আমরা পাব না। প্রতিটা হত্যার বিচার করা হবে। প্রতিটি অন্যায়ের বিচার হবে।’’ সমস্ত দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে এ দিন সেনাপ্রধান আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। আপনারা শান্তি-শৃঙ্খলার পথে ফিরে আসুন। কারণ তা না হলে আমাদের দেশের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি আমরা। মানুষ মারা যাচ্ছেন।’’ দেশ শান্তি হলে কার্ফুর প্রয়োজন নেই বলেও এদিন জানিয়েছেন তিনি।
সেনাপ্রধানের ভাষণ অনুযায়ী, আপাতত বাংলাদেশ চালনার দায়িত্ব সেনাবাহিনীর হাতেই। দেশবাসীর দাবিপূরণ করে শান্তিশৃঙ্খলা ফেরানোর কথা জানিয়েছেন তিনি। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের পরে কে পাকাপাকি ভাবে বসতে চলেছে বাংলাদেশের গদিতে, কী হতে চলেছে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ, সেদিকেই তাকিয়েই গোটা দুনিয়া।