চোখের সামনে লুটিয়ে পড়ল অনীক, আমরা তবু স্লোগান তুলেছিলাম
Bangladesh Quota Protest: বাসার নীচে রাস্তায় এসে কিছুদূর এগোতেই দেখলাম ছাত্রলীগ, যুবলীগের ছোট মিছিল যাচ্ছে। স্লোগান দিচ্ছিল 'বঙ্গবন্ধুর বাংলায় রাজাকারের ঠাঁই নাই'!
ঘুম থেকে উঠলাম, বেশ রৌদ্রোজ্জ্বল দিন। আবহাওয়া কেমন যেন নিস্তব্ধ। ব্যস্ত পুরনো ঢাকা এখনও নিজের রূপে আসেনি, যদিও সে এখনও ব্যস্ত। সকালে এটা সেটা করতে করতেই দুপুর হয়ে গেল। এরই মধ্যে খবর এল মিরপুরের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা হয়েছে।
কাওছারকে কল দিলাম, ও বলল ক্যাম্পাসে আসবে। আমিও বেরিয়ে পড়লাম। বাসার নীচে রাস্তায় এসে কিছুদূর এগোতেই দেখলাম ছাত্রলীগ, যুবলীগের ছোট মিছিল যাচ্ছে। স্লোগান দিচ্ছিল 'বঙ্গবন্ধুর বাংলায় রাজাকারের ঠাঁই নাই' , 'একটা একটা রাজাকার, ধইরা ধইরা জবাই কর'।
লক্ষ্মীবাজার এসে সবার সঙ্গে দেখা হলো। আমি একটা স্টাম্পের মাথায় পতাকা বেঁধে নিলাম। জানি, লীগের টোকাইরা হামলা করবে। সবাই ক্যাম্পাসে গেলাম। আমরা মিছিল নিয়ে ভিক্টোরিয়া পার্ক হয়ে রায় সাহেব বাজারের দিকে এগোচ্ছি। সামনেই কোর্ট কাছারি। আমরা স্লোগান দিচ্ছি,
কোটা না মেধা ?
মেধা !! মেধা !!
সূর্য সেনের/প্রীতিলতার/ ৫২/৭১/১৮ বাংলায়
বৈষম্যের ঠাঁই নাই।
অ্যাকশন টু অ্যাকশন,
ডাইরেক্ট অ্যাকশন ।
সংসদে আইন করো!
কোটা প্রথার সংস্কার করো ।
কুমিল্লায়/ জাবি/চবি/ঢাবি/জবিতে হামলা কেন
প্রশাসন জবাব দে"
আরও পড়ুন- ১১ মাস জেলও খেটেছেন! তবু কেন বাংলাদেশের জনগণের মন রাখতে ব্যর্থ শেখ হাসিনা?
মিছিল বেশ এগিয়েছে, কোর্টের সামনে রাস্তায় মিছিল নিয়ে এগোচ্ছি। ওরা (সোনার ছেলেরা) কোর্টের সামনে ফাঁকা জায়গায় ওঁৎ পেতে দাঁড়িয়েছিল। আমরা গলির সামনে গেলে দুইজন মিছিলের দিকে পিস্তল তাক করে। আমরা দেখতে পেয়ে পতাকা উঁচিয়ে ধাওয়া দিই। ওরা কোর্টের ভেতর দিয়ে শাখারী বাজারের গলির দিকে দৌড় দেয়, পিছু হটে। আমরা অনেকটা ভেতরে গিয়ে ফিরে আসার সময় ওরা গুলি করা শুরু করে।
ওরা দু'জন তাক করে গুলি চালাচ্ছে, একজন গেটের পিলারের আড়াল থেকে তাক করছে। আমার সব কেমন যেন বিদঘুটে লাগছিল। আশেপাশের সবাই উত্তেজিত, বারুদ ঠাসা কণ্ঠ, অগ্নিঝরা ফুলকির মতো বারেবারে প্রকম্পিত হচ্ছিল চারপাশ। এতকিছুর মধ্যেও আমি ভাবছি সব স্বাভাবিক। হঠাৎ অনীকের গুলি লাগল, অনীক পড়ে গেল। কোত্থেকে যেন বেশ কিছু আধলা ইট এসে পড়ছিল আশেপাশে। পাশে একজনের মাথা ফেটে গড়গড়িয়ে রক্ত ঝরছে। রাগ, উত্তেজনা, ক্ষোভ, ভয় সব মিলিয়ে এক হয়ে গেছে।
অনীককে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো, আর আমরা আবার মিছিল নিয়ে ভিক্টোরিয়া পার্ক ঘুরে মেইন গেটের সামনে অবস্থান নিলাম। আমরা অনড়, রক্ত দেখেও অনড়, হামলার মুখেও অনড়। সবাই স্লোগান ধরলাম আবার, আরও জোরে
কোটা না মেধা?
মেধা!! মেধা!!
সূর্য সেনের/প্রীতিলতার/ ৫২/৭১/১৮ বাংলায়
বৈষম্যের ঠাঁই নাই ।
অ্যাকশন টু অ্যাকশন,
ডাইরেক্ট অ্যাকশন ।
সংসদে আইন করো!
কোটা প্রথার সংস্কার করো ।
কুমিল্লায়/ জাবি/চবি/ঢাবি/জবিতে হামলা কেন
প্রশাসন জবাব দে"
লেখক- তৌকির আহমেদ, পড়ুয়া, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।