অগণিত মৃত্যু, সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস! শাসক-বিরোধী সংঘর্ষে কতটা ক্ষয়ক্ষতি বাংলাদেশে?
Bangladesh Quota Protest: অবশেষে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট মুক্তিযুদ্ধের আত্মীয়দের জন্য সংরক্ষিত কোটা ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার রায় দিয়েছে।
সপ্তাহব্যাপী হিংসা, কার্ফিউ, ইন্টারনেট বন্ধ, অগণিত মৃত্যু। বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনের জেরে দমনপীড়নের যে নজির দেখেছে সাধারণ মানুষ তা আজীবনের অন্ধকার পর্ব হয়ে রইবে বলাই বাহুল্য। টানা আন্দোলনের জেরে বাংলাদেশের চেনা ছন্দ ভেঙে গিয়েছে। শহরে, রাস্তায়, অলিগলিতে বিক্ষোভের চিহ্ন, রক্তের দাগ। ব্যাপক পরিমাণে সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস হয়েছে এর জেরে।
বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় টিভির সদর দফতরে আগুন লাগিয়ে দেন। বিটিভি ভবনে আটকে পড়েন অনেকেই। শত শত বিক্ষোভকারী বিটিভির কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে কমপক্ষে ৬০টি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। একটি অফিসেও ধরানো হয় আগুন। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালালে রামপুরায় একটি পুলিশ পোস্টেও আগুন দেন আন্দোলনকারীরা। এক সাংবাদিকের প্রাণও গিয়েছে এই হিংসায়। বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনে আগুন লাগানোর ঘটনা ছাড়াও, আন্দোলনকারীরা মহাখালী দুর্যোগ ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। আফতাবনগরে ওয়াসার জল শোধনাগারে, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে, মহাখালী সেতু ভবনে, মহাখালী ডাটা সেন্টারে, ডিসি অফিসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। নরসিংদী জেলা কারাগার ভাংচুর চালিয়ে তারপর সেখানেও অগ্নিসংযোগ করা হয়। রংপুরে গোয়েন্দা কার্যালয়ে, রামপুরা থানায় আগুন লাগানো হয়।
আরও পড়ুন- স্বৈরাচারী এরশাদকেও গদি ছাড়তে হয়! বাংলাদেশে গণআন্দোলন কি আর সেই ক্ষমতা রাখে?
ধানমণ্ডি, নারায়ণগঞ্জের পিবিআই অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। ঢাকার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও পুড়ে যায় আগুনের গ্রাসে। মহানগর গোয়েন্দা কার্যালয়ে ভাংচুর চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়। মহাখালীতে টোল প্লাজায় আগুন ধরিয়ে দেওয়ার খবর পাওয়া যায়। মিরপুর ১০-এ ইনডোর স্টেডিয়ামও পুড়ে যায় আগুনে, মিরপুরে মেট্রো স্টেশনে চলে ব্যাপক ভাঙচুর। রংপুরে মা ও শিশু হাসপাতালে আগুন ধরিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা। ঢাকার বেপজা ভবনেও আগুন ধরানো হয়। রংপুরে জেলা মৎস ভবনও আগুনে পুড়িয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা।
১৫০ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণ গেছে এই আন্দোলনে। অবশেষে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট মুক্তিযুদ্ধের আত্মীয়দের জন্য সংরক্ষিত কোটা ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার রায় দিয়েছে। ৯৩ শতাংশ নিয়োগই হবে মেধার ভিত্তিতে, অবশিষ্ট ২ শতাংশ জাতিগত সংখ্যালঘু, ট্রান্সজেন্ডার এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ করা হবে বলে জানায় আদালত।
বিক্ষোভ দমনে কার্ফিউ জারি, সামরিক বাহিনী মোতায়েন এবং ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট সহ কঠোর ব্যবস্থা নেয় হাসিনা সরকার। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট এবং ধোঁয়ার গ্রেনেড ব্যবহার করে জনগণের ক্ষোভকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
আরও পড়ুন- অবশেষে স্বস্তি! ডাউকি-দর্শনা সীমান্ত দিয়ে দেশে ফিরলেন অজস্র ভারতীয়
প্রধানমন্ত্রী হাসিনা হত্যাসহ সাম্প্রতিক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সুষ্ঠু ও ন্যায্য বিচার নিশ্চিত করতে বিচার বিভাগীয় তদন্তের ঘোষণা করেন। হাসিনা বলেছেন, কার প্ররোচনায় সংঘাত শুরু হয়েছে, কারা কোন উদ্দেশ্যে দেশকে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে তা তদন্ত করে বের করা হবে।
জনজীবন ক্ষতিগ্রস্ত চরমভাবে। বড়বাজার হোক বা ছোট দোকান। বাজারগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবরাহ কমে গিয়েছে হু হু করে। শহরজুড়ে কমছে ওষুধের জোগান। পরিবহন বন্ধ থাকার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে। ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়াতে মোবাইল ব্যাঙ্কিং অচল হয়ে পড়ে। বিপাকে পড়েছে বিদ্যুতের হাজার হাজার প্রিপেইড মিটার ব্যবহারকারীরা। হিংসাত্মক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হাসিনা সরকার শুক্রবার মধ্যরাত থেকেই কার্ফিউ জারি করে সেনা মোতায়েনের নির্দেশ দেয়। ওষুধের সরবরাহ কমেছে বাংলাদেশ জুড়ে। কার্ফিউয়ের সময় ওষুধের দোকান খোলা রাখার অনুমতি থাকলেও ঢাকার বহু এলাকায় দোকান বন্ধই দেখা গেছে।