ভাঙা হলো মুজিবের মূর্তিও! হাসিনার ইস্তফার পর ঠিক কী চলছে বাংলাদেশ জুড়ে?

Bangladesh Unrest: ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট মুজিবুরকে সপরিবার খুন করা হয়েছিল নিজেরই বাড়িতে। সেই কুখ্যাত অগাস্টেই হাসিনাকে চলে যেত হলো দেশ ছেড়ে।

১৭ বছর আগেও বাংলাদেশের প্রশাসনিক ভবিষ্যৎ ঠিক করেছিল সেনাবাহিনীই। ২০২৪ সালে সারা জুলাই ধরে চলা আন্দোলনের জেরে অবশেষে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে বলল সেই সেনাবাহিনীই। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়েন। বোন রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টারে বাংলাদেশও ছাড়েন। এর পরেই আন্দোলনকারীরা কার্যত দখল নেয় বাংলাদেশের গণভবনের। তারপর গণভবন জুড়ে আন্দোলনকারীদের উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে। দু'হাত তুলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায় তাঁদের। ভাঙা হয় বঙ্গবন্ধু মুজিবের মূর্তিও! বাংলাদেশের গণভন দখলের এই ঘটনা মনে করিয়ে দিচ্ছে শ্রীলঙ্কায় সাধারণ মানুষের রাষ্ট্রপতিভবন দখলের কথা। রাজাপক্ষের বাসভবনে তুমুল লুঠপাট চালিয়েছিল বিক্ষোভকারী মানুষ। সাধারণ মানুষ নেমে পড়েছিল রাষ্ট্রপতির নিজস্ব স্যুইমিং পুলে।

সোমবার আওয়ামী লীগের ঢাকা জেলার কার্যালয়েও আগুন ধরিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা। ধানমণ্ডিতে শেখ হাসিনার কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে উল্লাসে ফেটে পড়েন আন্দোলনকারীরা। আগুন ধরানো হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরেও। আন্দোলনকারীরে পাঁচিল টপে ঢুকে যান প্রধান বিচারপতির বাসভবনেও। তারপর সেখানেও চলে ব্যাপক ভাঙচুর। ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতির প্রাসাদও এভাবেই দখল করেছিল সাধারণ মানুষ। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি গোটাবায়া রাজাপক্ষকে সেনারা নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরেই হুড়মুড়িয়ে বিক্ষোভকারীরা ঢুকে পড়েন তাঁর অফিসে, বাড়িতে। চলে অবাধ লুঠ, বাড়িতে আগুন ধরিয়েও দেওয়া হয়। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সংসদের স্পিকারকে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হতে পারে বলে খবর। এরপরে তদারকি প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গড়ার খবর মিলেছে। বছরখানেক পরে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন হতে পারে বলে খবর।

২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারিতেও অশান্ত পরিস্থিতিতে সেই দেশের তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদের তৎপরতায় গঠিত হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। নেতৃত্বে ছিলেন, অর্থনীতিবিদ তথা বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর ফখরুদ্দিন আহমেদ। কোটা আন্দোলন ও পরবর্তীতে হাসিনা সরকারের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে চলা জনরোষের জেরে শেখ হাসিনা ইস্তফা দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করেছেন। সেদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ-জামান বলেছেন, ‘‘আমরা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে আলোচনার মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করব।’’ আশ্বাস দিয়েছেন, ‘‘আমি কথা দিচ্ছি, প্রতিটি হত্যার বিচার হবে।"

আরও পড়ুন- অবশেষে ইস্তফা হাসিনার! বাংলাদেশ ছেড়ে বোনের সঙ্গে কোন দেশে আশ্রয়?

 

১৯৭১ সালে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিনটি বড় সেনা অভ্যুত্থান ঘটেছে বাংলাদেশে। সেনার হাতেই নিহত হন বাংলাদেশের দুই রাষ্ট্রপতি— শেখ মুজিবুর রহমান এবং জিয়াউর রহমান। ২০০৭ সালে সরকার গঠনে সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছিল বাংলাদেশ সেনা। তবে রাষ্ট্রপুঞ্জের বিধিনিষেধের কারণে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন সরসরি ক্ষমতার ভার নেননি।

২০০৭ সালে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার প্রধানমন্ত্রিত্বের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। আওয়ামী লীগসহ অন্য বিরোধীরা সেই সরকারের বিরুদ্ধে পক্ষপাতদুষ্টতার অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামে। তখনই পরিস্থিতি সামলাতে সক্রিয় হয় সেনা। প্রাথমিকভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয় নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মহম্মদ ইউনুসকে। তিনি রাজি না হওয়ায়ে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী হন ফখরুদ্দিন।

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট মুজিবুরকে সপরিবার খুন করা হয়েছিল নিজেরই বাড়িতে। সেই কুখ্যাত অগাস্টেই হাসিনাকে চলে যেত হলো দেশ ছেড়ে। জানুয়ারি মাসে পঞ্চমবারের জন্য ক্ষমতায় আসেন হাসিনা। কিন্তু ভোট বয়কট করেছিল বিএনপি সহ অন্য বিরোধীরা। কার্যত প্রহসন সেই নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় গদিতে বসেন হাসিনা, তখন থেকেই নির্দল, নিরপেক্ষ তত্ত্ববধায়ক সরকারের দাবি উঠেছে।

More Articles