সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু পরিচিতিই দরকার পড়বে না! জাতীয় সংলাপে যা বললেন ইউনূস
Muhammad Yunus Bangladesh: ইউনূস জাতীয় সংলাপে বলেছেন, “সংস্কার ও নির্বাচনের প্রস্তুতি একই সঙ্গে চলতে থাকবে। নির্বাচনের প্রস্তুতির কাজ মূলত নির্বাচন কমিশনের।"
হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়া এবং মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হওয়ার পরে পদ্মা দিয়ে বহু জল গড়িয়ে গিয়েছে সাগরে। আওয়ামী লীগের শাসনপরবর্তী বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক সংখ্যালঘু ইস্যুতে টালমাটাল। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘৃণা প্রচারের কাজও চলছে। এমতাবস্থায় ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন বিষয়ে দুই দিনব্যাপী জাতীয় সংলাপ শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। প্রথম দিনেই নিজের ভাষণে ইউনূস জানিয়েছেন, এমন এক বাংলাদেশ গড়ার কথা ভাবছেন তারা, যেখানে সংখ্যাগুরু-সংখ্যালঘু এই পরিচয়ই রইবে না আর। রাজধানী ঢাকার খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে আয়োজিত এই জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠানের লক্ষ্য নির্বাচন ও সংস্কার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছনোর একটি পথ খোঁজা, সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। জাতীয় সংলাপে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা, গণ–অভ্যুত্থানের পক্ষের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা, ছাত্রনেতারা, নাগরিক সমাজ ও বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করছেন। সংলাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মহম্মদ ইউনূস ঠিক কী কী বললেন নতুন বাংলাদেশ বিষয়ে?
১। ইউনূস বলছেন, “আমাদের এমন অর্থনীতি গড়ে তুলতে হবে যেটা সকল নাগরিকের জন্য সম্পদের ও সুযোগের বৈষম্যহীনতার নিশ্চয়তা প্রদান করবে। যত নিম্ন আয়ের পরিবারেই জন্মগ্রহণ করুক না কেন- প্রতিটি নাগরিকের, তিনি নারী হোক, আর পুরুষই হোক তিনি যেন বিনা বাধায় তো বটেই বরং রাষ্ট্রের আয়োজনে তার সৃজনশীলতা প্রকাশ করে যেকোনও পর্যায়ের উদ্যোক্তা হতে পারেন। অথবা তিনি যে ধরনের কর্মজীবন চান তাই বেছে নিতে পারবেন।”
২। ইউনূস বলছেন, বাংলাদেশে “এমন রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় পরিবেশ থাকবে যেখানে সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু এই পরিচিতি অবান্তর হয়ে পড়বে। সবার একটিই পরিচয়- আমি বাংলাদেশের নাগরিক এবং রাষ্ট্র আমাকে আমার সকল অধিকার প্রদান করতে বাধ্য। রাষ্ট্রের কাছে এবং অন্য নাগরিকের কাছে আমার অন্য কোনও পরিচয় দেবার প্রয়োজন হবে না। যেখানে ব্যক্তি বন্দনার কোনো সুযোগ থাকবে না। দেশের ভেতরে বা বাইরে প্রভু-ভৃত্যের কোনও সম্পর্কের সুযোগ থাকবে না। আমরা বাংলাদেশের নাগরিক হবার সুবাদে হব বিশ্ব নাগরিক।”
৩। সহনাগরিকদের উদ্দেশ্যে ইউনূস আরও বলেন, “সংস্কারের যে মহান দায়িত্ব ঐতিহাসিক কারণে আমাদের কাছে এসে গেছে এই দায়িত্ব আমাদের প্রত্যেকের- প্রতি নাগরিককে, রাজনৈতিক দলকে, প্রতিটি সামাজিক, অর্থনৈতিক, ব্যবসায়িক এবং ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর প্রত্যেককে দৃঢ়তার সঙ্গে সংস্কারের এই মহাযজ্ঞে আনন্দের সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।”
আরও পড়ুন- ধর্ম বা রাজনীতি দিয়ে কোনও বাংলাদেশির সঙ্গে বৈষম্য হবে না! ইউনূসের আপ্তবাক্য ফলবে?
৪। ইউনূস জাতীয় সংলাপে বলেছেন, “সংস্কার ও নির্বাচনের প্রস্তুতি একই সঙ্গে চলতে থাকবে। নির্বাচনের প্রস্তুতির কাজ মূলত নির্বাচন কমিশনের। নাগরিকদের নির্বাচনের তারিখ না-পাওয়া পর্যন্ত এই প্রক্রিয়ায় সময় দিতে হয় না কিন্তু সংস্কারের কাজে সকল নাগরিককে অংশগ্রহণ করতে হবে। যারা ভোটার তারা তো অংশগ্রহণ করবেনই, তার সঙ্গে যারা ভবিষ্যতে ভোটার হবেন তারাও সর্বাত্মকভাবে সংস্কারের কাজে নিজেদেরকে নিয়োজিত করুন।”
৫। ইউনূস জানিয়েছেন, নাগরিকদের জন্য এই সংস্কারের কাজটি সহজ করতে সরকার ১৫টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছিল। যাদের প্রতিবেদন জানুয়ারি মাসেই হাতে আসবে। “প্রত্যেক সংস্কার কমিশনের দায়িত্ব হলো প্রধান বিকল্পগুলো চিহ্নিত করে তার মধ্য থেকে একটি বিকল্পকে জাতির জন্য সুপারিশ করা। যার যার ক্ষেত্রে সংস্কারের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ কীভাবে রচিত হবে তা বিভিন্ন পক্ষের মতামত নিয়ে সুপারিশমালা তৈরি করে দেওয়া, নাগরিকদের পক্ষে মতামত স্থির করা সহজ করে দেওয়া।”
৬। তবে কমিশনের প্রতিবেদনে সুপারিশ করলেই সবাইকেই যে তা মেনে নিতে হবে এমনটাও না বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মুখ্য উপদেষ্টা। জানিয়েছেন, এজন্য সর্বশেষ পর্যায়ে জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন গঠন করা হয়েছে। “সব ক’টা কমিশন মিলে আমাদের সামনে বহু সুপারিশ তুলে ধরবে। আমরা এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছি যে যার যাই মতামত হোক না কেন আমরা দ্রুত একটা ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত করে সংস্কারের কাজগুলো করে ফেলতে চাই। নির্বাচনের পথে যেন এগিয়ে যেতে পারি সেই ব্যবস্থা করতে চাই,” বলেছেন ইউনূস।