কবিতাগুচ্ছ বসন্তপঞ্চমী : অভিরূপ মুখোপাধ্যায়
Basanta Panchami Poetry Collection : কবি অভিরূপ মুখোপাধ্যায়ের কবিতাগুচ্ছ
কবি ও কবিতা
নামের প্রথম দু’টি অক্ষর তোমার আমার একই
নামের প্রথম ওই দু’টি অক্ষরে
বিকেলবেলা দাঁড়িয়ে আছে একটি যুবা গাছ
গাছের মাথায় সরস্বতী ওড়ে
উড়ন্ত সেই পূজাপাঠকে উচিত গোপন রাখা
নামের প্রথম দু’টি অক্ষর-ভূমি
সেইটুকুতেই বাস আমাদের, ধরিত্রী-পৃষ্ঠায়
কবিতাবই : বসন্তপঞ্চমী!
১৪ ফেব্রুয়ারি
খামের ভেতর বাতাবি ফুল
ভরে পাঠাই, এমন
ইচ্ছে করে
খামের কাগজ, আঠা, কলম
আমার বাড়ি, পাশের পাড়াঘর
মফস্সলের রাস্তাগুলি ফাল্গুন মাস এলে
কী মারাত্মক যুবক, ওদের
ইচ্ছে করে পাঠাই
খামের ভেতর
নদী পাহাড়, সমুদ্রজল, লোনা…
তার ঠিকানা মুখস্থ, নাও, বলছি লিখে নাও
ডিটিডিসি-র লোকটি রোদে অবাক হয়ে দ্যাখে-
বাতাবি ফুল
ফুলেরগুচ্ছ নিজের মনকে বোঝায়
আজকে দেখা করার কথা মুখ ফুটে বলিনি
কালকে দেখা করার কথা কক্ষনো বলব না!
সঙ্গ
জানলা দরজা
তাকায়, অবাক, তাকায়
ঘরের পর্দা
তাকায়, রাত্রে বাতাস
মাথার কাছেই
যাতায়াত করে, প্রাণ
ওদের সঙ্গে
তোমার ঘরের, পাগল
আসবাব হয়ে
তাকিয়ে দেখেছি, তুমি
ঘুমন্ত নও
সঙ্গ করছ ঘুমের
সবচেয়ে প্রিয়
পুরুষ তোমার ঘুম?
ওকে মেরে ফেলে
গাছ হয়ে জন্মাই
তোমার ঘরের
পাশেই দাঁড়িয়ে আছি
ঘুম আসছে না?
এখনই ঝরব, ঝরি?
সঙ্গ করব
তোমার খাটেই একা
কাঞ্চনফুল
রক্তের কুমকুম…
বীটনুনের গল্প
পেয়ারা বিক্রেতার কাছে নোনতা গল্প শুনি
প্রথম বউয়ের বাপের বাড়ি সন্ধে-সন্ধে হলে
বাগানে টর্চ জ্বেলে ঘুরত শ্বশুরগৃহের লোক
চুরি করতে আসত সে এক বেবুশ্যে বিধবা
আমিও যেতাম, শ্বশুরমশাই সঙ্গে নিয়ে যেত
কিছুই তখন দেখতে পাইনি, পরে বিকেলবেলা
পুকুরে স্নান করছি যখন পেয়ারা হাতে মেয়ে
এগিয়ে এল, আমিও তাকে বাধা দিইনি আর
একখানা পেয়ারা কামড় ভাগ করে খেয়েছি
চারিদিকের বাগান শুধুই সম্মতি জানাল
জানতে পেরে গ্রামের লোকে পিটিয়ে মারল ওকে
আমাকেও তো কম মারেনি, পালিয়ে এসে ফের
বিয়ে করেছি নতুন আমার ছেলেমেয়েরা ঘরে
বিরাট বড় পেয়ারা বাগান তার ভেতরে পুকুর
সেই পুকুরে বসন্তকাল এসে দাঁড়ায় যখন
বিধবা সেই বাগানকন্যা দেখা করতে আসে
হাতের মুঠোয় আধ-খাওয়া তার পেয়ারা আমায় দিয়ে
আঁচল থেকে ঝরিয়ে দেয় বীট নুনের স্বাদ
আমার বাপু বয়স হচ্ছে, সে তো স্বয়ং ভূত
তবুও তারই সঙ্গে আজও শুতে ইচ্ছে করে!
বসন্তকালের মা
ঝোলায় রাখা ইটের টুকরো ছুঁড়ে মারছে, গায়ে
ময়লা সবুজ ম্যাক্সির ওপর ছেঁড়া সুতির শাড়ি
সারা পাড়ার গৃহিণীদের উচ্ছিষ্ট কুড়িয়ে
দু-হাত ভরে পরে নিয়েছে শাঁখা-পলা-শাঁখা
মুখে শুধুই খারাপকথা, মুড়ি খাচ্ছে বসে
পোড়ো বাড়ির চাতালে শুয়ে কথা শুনছে ওর
মা-হারা এক মেয়েকুকুর নাম দিয়েছে লালি
ন-দিন বয়স খিদের চোটে তাকিয়ে আছে ওই
ময়লা ছেঁড়া ম্যাক্সি থেকে বেরিয়ে আসা দুধ
‘খাবি? খা না… আমার কোনও মেয়ে তো নেই, আয়
দুধ খেয়ে যা’, কালো বুকের মধ্যে উঠে শিশু
চুষতে-চুষতে দুগ্ধ কোথায়? রক্তবালি খায়…
সেদিন থেকেই বসন্তকাল ছড়িয়ে দিতে এসে
কেউ জানে না পোড়ো বাড়ির মধ্যে যাওয়া-আসা
ঠাকুরঘরের কালো কৃষ্ণ লালির বাবা হয়ে
দুপুরবেলা এখন রোজই কল্পনা পাগলিকে
মাতৃশান্তি দুগ্ধশান্তি শরীরে দিয়ে যায়…