আরজি কর কাণ্ড: ভেতরে অনেকে আছে, মেনে নিলেন মমতাও
Mamata Banerjee Visits RG Kar Victim's home: সোমবার তরুণীর বাড়িতে গেলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এদিন জানান, নির্যাতিতার বাবা-মা মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, এই ঘটনায় ভিতরের কেউ জড়িত।
আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষণের পর খুন করা হয়েছে এক তরুণী চিকিৎসককে। সেই ঘটনায় উত্তাল গোটা রাজ্য। সোমবার তরুণীর বাড়িতে গেলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন দুপুর পৌনে একটা নাগাদ ওই মহিলা চিকিৎসকরে সোদপুরের নাটাগড়ের বাড়িতে যান তিনি। সূত্রের খবর, মৃতার বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আরজি করের ঘটনার পরে পরেই মৃতার বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সময়েই তাঁদের বাড়িতে যাওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কার্যত এ দিন তিনি এ-ও মেনে নিয়েছেন যে এই ঘটনার নেপথ্যে ভিতরের কেউও জড়িয়ে থাকতে পারে।
তিনি এদিন জানান, নির্যাতিতার বাবা-মা মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, এই ঘটনায় ভিতরের অনেকে থাকতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, "যদি ভিতরের কেউ থাকে, কারও প্রতি সন্দেহ হয়। সেদিন রাতে ওই চিকিৎসকের সঙ্গে বন্ধুবান্ধব বা যাঁরা ছিলেন, তাঁদের ডেকে কথা বলা হবে। এমনকী প্রথম যেদিন বাড়িতে ফোন করেছিলেন, তাকেও ডেকে পাঠানো হবে।"
আরও পড়ুন: আন্দোলনের জের না উপরমহলের চাপ? কেন পদত্যাগ আরজি করের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের?
শুক্রবার সকালে আরজি কর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সেমিনার রুমে ওই ট্রেনি চিকিৎসকের ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়। পরে ময়নাতদন্তে জানা যায়, শুধু খুন নয়, ধর্ষণও করা হয় ওই তরুণী চিকিৎসককে। সেই ঘটনা সামনে আসার পরেই কঠোরতম শাস্তির আশ্বাস দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এমনকী অভিযুক্তদের ফাঁসির পক্ষেও সওয়াল করতে দেখা গিয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীকে।
ওই ঘটনায় ওই বিভাগের ডিউটিতে থাকা সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে মূল অভিযুক্ত সন্দেহে গ্রেপ্তার করে শুরু হয়েছে মামলা। শুক্রবার এই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই মুখ্যমন্ত্রী মৃতার বাবাকে ফোন করেছিলেন। শনিবার এক সংবাদমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “জুনিয়র ডাক্তাররা যে দাবি জানাচ্ছে, তা সঙ্গত। এর মধ্যে কোনও অস্বাভাবিকতা নেই। ওঁরা যে ডিমান্ডগুলো করছে, তার প্রত্যেকটির সঙ্গে আমি একমত। পুলিশও প্রত্যেকটি মেনে নিয়েছে।”
সোমবার নির্যাতিতার বাড়ি থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। তিনি এ-ও জানান, রবিবারের মধ্যে পুলিশ তদন্ত শেষ করতে না পারলে সিবিআইকে তদন্তভার দেওয়া হবে। সোমবারও অপরাধীর ফাঁসির শাস্তি চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবারও একই দাবি জানালেন তিনি। মমতা এদিন জানান, ‘‘পুলিশ তদন্ত করছে। রবিবারের মধ্যে তদন্ত শেষ না হলে সিবিআইকে তদন্তভার তুলে দেওয়া হবে।’’ এর পরেই জুড়ে দেন, ‘‘যদিও সিবিআইয়ের সাফল্যের হার খুব কম। রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কার চুরি যাওয়ার মামলাও সিবিআইকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার কিনারা হয়নি। তবে এ ক্ষেত্রে মানুষের সন্তুষ্টির জন্য সিবিআইকে তদন্তভার দেব।’’
শুক্রবার ওই ঘটনা ঘটার পরেই মমতা বলেছিলেন, এই ঘটনায় ফাস্টট্র্যাক আদালতে ফাঁসির আবেদন জানানো উচিত। সোমবারও সে কথা জানান মমতা। মমতা এর আগে জানিয়েছিলেন, রাজ্য সরকারের তদন্ত সংস্থায় ভরসা না থাকলে অন্য কোনও এজেন্সির তদন্তেও তাঁর আপত্তি নেই। কারণ, সরকার চায় ওই ঘটনার উপযুক্ত তদন্ত হোক। সোমবার পুলিশকে চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দিলেন মমতা।
চিকিৎসকের মৃত্যুকে ‘ন্যক্কারজনক এবং অমানবিক’ বলে মন্তব্য করে আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের পাশেও দাঁড়িয়েছিলেন মমতা। বলেছিলেন, ‘‘জুনিয়র চিকিৎসকেরা যে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, তা সঙ্গত বলেই আমি মনে করি। আমি ওঁদের দাবির সঙ্গে একমত। আমি প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছি, দোষীদের চিহ্নিত করে তিন থেকে চার দিনের মধ্যে ফাস্টট্র্যাক আদালতে এই মামলা তুলতে এবং প্রয়োজনে ফাঁসির আবেদন জানাতে। কিন্তু এই অপরাধের কোনও ক্ষমা নেই।’’
আরও পড়ুন:আরজি করের তরুণীকে হত্যার পর ধর্ষণের অভিযোগ! কী এই বিরল অসুখ ‘নেক্রোফেলিয়া’?
এদিকে, এদিন সকালেই আরজি কর কলেজ হাসপাতালের প্রিন্সিপাল সন্দীপ ঘোষ পদত্যাগ করেছেন। মমতা সে প্রসঙ্গেও মুখ খুলেছেন এদিন। তিনি জানান, এদিন প্রিন্সিপ্যাল নিজে এসে পদত্যাগ করেন। মানসিক চাপেই এই পদত্যাগ বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁকে অন্যত্র সরানো হয়েছে বলেও জানান। একই সঙ্গে চেস্ট ডিপার্টমেন্টের এইচওডি থেকে শুরু করে ওই ঘটনায় আরও বেশ কয়েকটি প্রশাসনিক পদে থাকা ব্যক্তিকে অপসারিত করা হয়েছে বলে জানান মুখ্য়মন্ত্রী। খুনি যাতে তাড়াতাড়ি গ্রেফতার হয় এবং শাস্তি পায়, তার দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও এদিন দিয়েছেন মুখ্য়মন্ত্রী।