দিল্লির পর CAA-স্বীকৃতি এবার বাংলাতেও! যে ভাবে নাগরিকত্ব পেলেন নদিয়ার বিকাশ
Citizenship under CAA: নদিয়া জেলার আসাননগরের বাসিন্দা বিকাশ মণ্ডল। ২০১২ সালে বাংলাদেশের ঝিনাইদহ থেকে সপরিবারে আসাননগরে চলে আসেন তিনি। সম্প্রতি সিএএ-র আওতায় এই দেশের নাগরিকত্ব পান বিকাশ।
ভোটের আগেই নাগরিকত্ব আইন (CAA) কার্যকর করে দিয়েছিল দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। বিষয়টি নিয়ে দেশের বিভিন্ন মহলে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। যে দুটি রাজ্য সব চেয়ে বেশি সরব হয়েছিল সিএএ-র বিরোধিতায়, তার মধ্যে অন্যতম পশ্চিমবঙ্গ। মোদির সিএএ নীতির বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে এ রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল সরকার। আগামী ১ জুন পশ্চিমবাংলার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ভোট। তার ঠিক আগেই এ রাজ্যে সিএএ আইনের আওতায় আবেদন করে নাগরিকত্ব পেলেন এই বাংলার এক বাসিন্দা।
নদিয়া জেলার আসাননগরের বাসিন্দা বিকাশ মণ্ডল। সম্প্রতি সিএএ-র আওতায় এই দেশের নাগরিকত্ব পান বিকাশ। ২০১২ সালে বাংলাদেশের ঝিনাইদহ থেকে সপরিবারে আসাননগরে চলে আসেন তিনি। এখানেই ছোটখাটো ব্যবসা তাঁর। সিএএ আইন পাশ হওয়ার পর থেকেই অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন তিনি কবে কীভাবে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা যায়।
লোকসভা ভোট ঘোষণার ঠিক মুখে মুখেই সিএএ আইন কার্যকর দেয় দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তারপর গত ১৭ মে অনলাইনে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেন বিকাশ। ২৭ মে তিনি ডাক পান কৃষ্ণনগর পোস্টাল সুপারিনটেনডেন্ট অফিসে ভেরিফিকেশনের জন্য। সেখানে গিয়ে সমস্ত নথি জমা দেন তিনি।
আরও পড়ুন: হিন্দু হলেই নাগরিকত্ব নিশ্চিত? CAA-তে আবেদন জানাতে পারবেন কারা?
গত ১৩ মে ছিল নদিয়ায় লোকসভার ভোটগ্রহণ। ভোটের ফল ঘোষণা আগামী ৪ মে। তার আগেই বৃহস্পতিবার নাগরিকত্ব শংসাপত্র নেওয়ার জন্য ডাক পান বিকাশ। দেরি না করেই দিনের দিনেই শংসাপত্রটি সংগ্রহ করে আনেন তিনি। এতদিন বাদে পূরণ হয়েছে স্বপ্ন। আর কেউ তাঁকে দেশে অনুপ্রবেশকারী বলে সম্মোধন করতে পারবে না। এখন থেকে তিনি এই বাংলারই নাগরিক।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দফতরের তরফ থেকে প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে জানানো হয়, সিএএ সংক্রান্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটি বুধবার থেকেই সিএএ আইন অনুযায়ী নাগরিকত্বের শংসাপত্র বিলির কাজ শুরু করে দিয়েছে। আর তার ঠিক একদিনের মধ্যেই নিজের নাগরিকত্বের শংসাপত্র হাতে পেয়ে গেলেন নদিয়ার এই বাসিন্দা। স্বাভাবিক ভাবেই ওই কাগজ হাতে পেয়ে যারপরনাই খুশি বিকাশের পরিবার। স্ত্রী-পুত্র পরিবার নিয়ে নদিয়ায় বাস বিকাশের। শুধু পরিবার-পরিজনই নয়, প্রতিবেশীদের মধ্যেও আনন্দের ঢেউ। অনেকেই বিকাশকে দেখে আগ্রহ পেয়েছেন আবেদন করছেন। আরা যাঁরা ইতিমধ্যেই আবেদন করেছেন, তাঁদের আবেদন প্রক্রিয়াও সফল হবে, এই আশায় বুক বেঁধেছেন তাঁরা।
লোকসভা ভোটের চতুর্থ দফার পরে পরেই গত ১৫ মে প্রথমবার তিনশো জন সিএএ আবেদনকারীর হাতে শংসাপত্র তুলে দেয় কেন্দ্র। দিল্লিতে ১৪ জন আবেদনকারীর হাতে ওই শংসাপত্র তুলে দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয়কুমার ভাল্লা স্বয়ং। সিএএ অনুযায়ী নাগরিকত্ব প্রদানের কাজ পুনরায় শুরু হওয়ার ফলে, হরিয়ানা, উত্তরাখণ্ডের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের আবেদনকারীরাও তাদের নাগরিকত্বের শংসাপত্র পেতে শুরু করেছেন। তবে এখনও এই আইনে নাগরিকত্ব পাওয়ার আবেদন নিয়ে বহু ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিভ্রান্তি রয়েছে খবর।
আরও পড়ুন:CAA-র জন্য প্রয়োজনীয় নথি না থাকলে কী হবে? যা জানালেন শাহ
সিএএ আইন কার্যকর হওয়ার পর তার বারবার বিরোধিতা করেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মানুষ যাতে অত্যুৎসাহী হয়ে আবেদন না করেন, সেই পরামর্শও দিয়েছিলেন। তবে সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় এই সিএএ আবেদনের ক্ষেত্রে মানুষের ব্যাপক সাড়া মিলেছে বলেই জানা যাচ্ছে। সীমান্তবর্তী রাজ্যের বাসিন্দারা কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছেন এই আইনে, তা-ও অস্বীকার করার জায়গা নেই।
বিতর্কিত এই নাগরিকত্ব আইনের প্রভাব বিজেপির ভোটবাক্সে আদৌ পড়বে? নাকি এ সব বিচ্ছিন্ন ঘটনামাত্র, উঠেছে প্রশ্ন।