ইঙ্গিত পেয়েই ইস্তফা দেবের? কেন ইডির সমন?

ED Summons Dev: আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি তাঁকে দিল্লিতে ইডি-র সদর দফতরে ডেকে পাঠানো হয়েছে। সমস্ত নথি নিয়ে অভিনেতা-সাংসদকে দিল্লিতে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে।

ফের ইডির ডাক পেলেন সাংসদ-অভিনেতা দেব। এবার দিল্লিতে। একের পর এক প্রশাসনিক পদ থেকে ইস্তফা, সংসদের শেষ অধিবেশনের ছবি পোস্ট করে দেবের বিদায়বার্তা, সব মিলিয়ে তীব্র হয়েছিল জল্পনা। এবার তবে রাজনীতি ছাড়তে চলেছেন দেব। অধিবেশন থেকে বেরিয়ে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তেমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ঘাটালের তৃণমূল সাংসদ নিজেও। তবে সেই সংশয় ঘোঁচে অচিরেই। কিছুদিন আগেই অভিষেক ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন অভিনেতা। আর তার পরেই জানিয়ে দেন, আসন্ন লোকসভা ভোটে ফের প্রার্থী হতে চলেছেন তিনি। আর ভোটে দাঁড়ানোর খবর আসতে না আসতেই ফের ইডি ডেকে পাঠাল সাংসদ-অভিনেতা দেবকে।

আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি তাঁকে দিল্লিতে ইডি-র সদর দফতরে ডেকে পাঠানো হয়েছে। সমস্ত নথি নিয়ে অভিনেতা-সাংসদকে দিল্লিতে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে। যতদূর জানা গিয়েছে, প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং অ্যাক্টের আওতায় ডেকে পাঠানো হয়েছে তৃণমূল সাংসদকে। ইমেল মারফত নোটিস গিয়েছে দেবের কাছে। দেবের ঘনিষ্ঠ মহল তরফে জানা গিয়েছে, আগামী ২১ তারিখ ইডি-র ডাকে সাড়া দিয়ে দিল্লি যাবেন অভিনেতা। এই প্রথম নয়। এর আগেও এমন জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়েছেন দেব। কোনওদিনই ইডি-র হাজিরা এড়াতে দেখা যায়নি অভিনেতাকে। দেবের ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন, ‘‘ওকে যত বার ডেকে পাঠানো হবে, তত বারই যাবে। তদন্তে সবসময় সহযোগিতা করবে।’’

আরও পড়ুন: ‘আর কয়েক ঘণ্টা’! রাজনীতি ছাড়ছেন অভিনেতা-সাংসদ দেব?

২০২২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দেবকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল সিবিআই। কলকাতায় সিবিআই দফতর নিজাম প্যালেসে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছিল, গরু পাচারকাণ্ডে বিভিন্ন সাক্ষীকে জেরা করার সময় দেবের নাম উঠে এসেছিল। সেই কারণে তাঁকে ডাকা হয়েছিল বলে মনে করা হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সিবিআই দফতর থেকে বেরিয়ে দেব জানিয়েছিলেন, ‘‘একজন ব্যক্তিকে চিনি কি না, সেই বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল। আমার বক্তব্য জানিয়েছি। মনে হয় আর ডাকবে না।’’

কিন্তু ফের ডাক আসে অভিনেতার। ২০২৩ সালে নিয়োগদুর্নীতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগ এনেছিলেন সহ-অভিনেতা ও বিজেপি বিধায়ক হিরণ। তাঁর অভিযোগ, গরু পাচারকাণ্ডে ধৃত এনামুল হকের কাছ থেকে ৫ কোটি টাকা নিয়েছেন ঘাটালের সাংসদ। দেব পাল্টা জানিয়েছিলেন, তথ্যপ্রমাণ থাকলে ইডি বা সিবিআইয়ের কাছে যান হিরণ।

সম্প্রতি উস্কে উঠেছিল দেবের রাজনীতি ছাড়ার জল্পনা। দিন কয়েক আগে ঘাটালের তিনটি প্রশাসনিক পদ— ঘাটাল কলেজ, ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতি ও বীরসিংহ উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দেন সাংসদ দেব। তার পরেই দেবের রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার জল্পনা আরও জোরালো হয়। তবে সেই সব জল্পনার অবসান করে দিন কয়েক আগেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন দেব। সেখান থেকে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে। তবে জোড়া বৈঠক সেরে দেব ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “আমি ছাড়তে চাইলেও রাজনীতি আমাকে ছাড়বে না!” তার পরেই ঘাটাল থেকে ফের ভোটে লড়াইয়ের কথা জানান দেব।

আরও পড়ুন: দক্ষিণ ২৪ পরগণায় ইডির উপর হামলা: নেপথ্যে কোন দুইজন?

আর সেই ভোটে লড়ার বিষয়টা সামনে আসতে না আসতেই ফের ইডি-র ডাক পেলেন সাংসদ-অভিনেতা। বরাবরই রাজনীতির ময়দানে একটু ছকভাঙা থাকতে দেখা গিয়েছে দেবকে। ইচ্ছা করেই লোকসভা ভোটের আগে দেবকে নাস্তানাবুদ করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তাঁর কথায়, “দেব যেহেতু বলেছে, বিজেপির সামনে ঝুঁকেগা নেহি। তৃণমূলেই থাকবেন। তাই প্রতিহিংসার রাজনীতির শিকার হলেন।”  প্রশ্ন উঠেছে, এমন কিছু কি আগেভাগেই আঁচ করেছিলেন দেব? সে কারণেই কি একের পর এক প্রশাসনিক পদ থেকে ইস্তফা দেন অভিনেতা-সাংসদ। তবে তার উত্তর মিলবে ২১ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে ইডি-দেব  বৈঠকের পরেই। 

More Articles