২৬ ফুট লম্বা দৈত্যাকার সবুজ সাপ! আমাজন বৃষ্টি-অরণ্যের যে খোঁজ তাক লাগিয়েছে বিজ্ঞানীদের

Biggest Snake Species in the World: এর আগে এমন বিরাট আকারের অ্যানাকোন্ডা অন্তত আমাজনে মেলেনি বলেই দাবি বিজ্ঞানীদের। অনেকেই একে জায়েন্ট অ্যানাকোন্ডা বলে দাবি করেছেন।

বিশাল বিশাল অ্যানাকোন্ডা আমরা হলিউডি সিনেমায় আখছার দেখি। কিন্তু সে সব তো বেশিরভাগই গ্রাফিক্সে তৈরি। তবে সেই সব হলি-বলি ছবিকেও হার সত্যিকারের এই আনাকোন্ডা। দৈর্ঘ্যে প্রায় ২৬ ফুট। ওজন ২০০ কেজিরও বেশি। না, এই আনাকোন্ডার বাড়িঘর মোটেও এখানে নয়। সুদূর আমাজন বৃষ্টিঅরণ্যে সম্প্রতি মিলেছে এই সুবিশাল সাপের অস্তিত্বের খোঁজ।

প্রায় দু'দশকের দীর্ঘ প্রচেষ্টা। শেষপর্যন্ত সাফল্য পেল সেই অভিযান। সম্প্রতি ন্যাট জিও চ্যানেলের পোল টু পোল অনুষ্ঠানের শুটিং চলছিল। যেখানে উপস্থিত ছিলেন বিখ্যাত হলিউড তারকা উইল স্মিথ। সেই অনুষ্ঠানের শুটিংয়ের সময় হঠাৎ করেই ওই বিশালাকার অ্যানাকোন্ডার মুখোমুখি হন বিজ্ঞানীরা। তবে সেই অ্যানাকোন্ডা দেখার পর বিস্ময়ের অবকাশ ছিল না বিজ্ঞানী দলের। কারণ এমন আশ্চর্য এবং বিরাট সাপ এর আগে কখনও দেখেননি বিজ্ঞানীরা।

আরও পড়ুন: প্রফেসর শঙ্কুর আবিষ্কার বাস্তব! যেভাবে খিদে না পাওয়ার আশ্চর্য ক্যাপসুল তৈরি করলেন বিজ্ঞানীরা

জানা গিয়েছে, সবুজ এই অ্যানাকোন্ডাটি সম্পূর্ণ নতুন প্রজাতির। গোটা দক্ষিণ আমেরিকা জুড়ে সরিসৃপদের রক্ত ও টিস্যুর নমুনা পরীক্ষা করার পরই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন গবেষকেরা। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এটিই পৃথিবীর বৃহত্তম সাপ। যার ওজন প্রায় ৪৪০ পাউন্ডের কাছাকাছি। লম্বায় এটি ২৬ ফুট। গাড়ির টায়ারের মতোই মোটা চেহারার ওই অ্যানাকোন্ডাটিকে জলের মধ্যে আবিষ্কার করেন প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ও অধ্য়াপক ফ্রিক ভঙ্ক। সম্প্রতি একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে বিশালাকার ওই অ্যানাকোন্ডাটির পাশাপাশি সাঁতার কাটতে দেখা গিয়েছে অধ্যাপক ফ্রিক ভঙ্ক। তিনি যখন সাপটিকে তাড়া করেন, সেটি জলের মধ্যে দিয়ে দ্রুত বেগে পালাতে শুরু করে। সেটিকে তাড়া করেন ফ্রিক।

এর আগে এমন বিরাট আকারের অ্যানাকোন্ডা অন্তত আমাজনে মেলেনি বলেই দাবি বিজ্ঞানীদের। অনেকেই একে জায়েন্ট অ্যানাকোন্ডা বলে দাবি করেছেন। এবং এটি একেবারে নতুন একটি প্রজাতি বলেই জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ন'টি দেশের অন্তত ১৪ জন বিজ্ঞানী একসঙ্গে ছিলেন এই অভিযানে। গবেষকেরা এই নতুন প্রজাতিটির নাম দিয়েছেন ল্যাটিন ভাষায় ইউনেক্টেস আকাইমা। যার অর্থ করলে দাঁড়ায় উত্তরীয় সবুজ অ্যানাকোন্ডা। তবে এই নতুন প্রজাতির অ্যানাকোন্ডাটিকে নিয়ে কম দুশ্চিন্তাও প্রকাশ করেননি বিজ্ঞানীরা।

নতুন এই সবুজ অ্যানাকোন্ডার প্রজাতিটির অস্তিত্ব সম্পর্কে বেশ দ্বিধায় বিজ্ঞানীরা। সদ্য আবিষ্কৃত এই অ্যানাকোন্ডার প্রজাতিটি বিলপ্তপ্রায় বলেই মনে করছেন গবেষকদল। আমাজন অঞ্চলে ক্রমাগত জলবায়ু পরিবর্তন ও ক্রমাগত বনাঞ্চল নষ্ট হওয়ার কারণে এই জাতিটি সঙ্কটে বলেই মনে করা হচ্ছে। আমাজনের এক পঞ্চমাংশের বেশি অংশ ইতিমধ্যেই অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে। হিসেব করলে যা গোটা নেদারল্যান্ডের থেকেও বেশি। আর এই দৈত্যাকার সাপের অস্তিত্বের অনেকটাই নির্ভর করছে জঙ্গলের অস্তিত্বের উপরে।

আরও পড়ুন: শিকড়, পাতা, ফুল, ডালপালা কিচ্ছু নেই! তরল গাছ আবিষ্কার করে অসাধ্য সাধন বিজ্ঞানীদের

তবে এমন একটি আশ্চর্য অ্যানাকোন্ডার যে আমাজনের বৃষ্টিঅরণ্যে অস্তিত্ব রয়েছে, তার আঁচ কিন্তু আগেই পেয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। প্রায় বছর পনেরো আগে অধ্যাপক জেসাস রিভাস জানিয়েছিলেন, সবুজ অ্যানকোন্ডার একাধিক প্রজাতি রয়েছে। ২০০৭ সাল নাগাদ এর উপর কাজ করা শুরু করেন অধ্যাপক জেসুস রিভাস ও তাঁর স্ত্রী কোরি রিভাস। তারাই প্রথম লক্ষ্য করেন ভেনিজুয়েলা ও পেরুর অ্যানাকোন্ডা প্রজাতির মধ্যে বিরাট জেনেটিক পার্থক্য রয়েছে। আপাতত এই সবুজ অ্যানাকোন্ডার সংখ্যা পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। তবেই এই অ্যানাকোন্ডার প্রজাতির অস্তিত্ব কতটা বিপন্ন, সে ব্যাপারে পরিষ্কার হওয়া যাবে বলেও মনে করছেন অভিজ্ঞরা।

More Articles