বাদ নেই সিপিএম নেতাও! প্রথম দফাতেই ৪৫০ জন কোটিপটি প্রার্থী দেশে?

Millionaire Lok Sabha Candidates: মোট ৪৫০ জন কোটিপটি এবার প্রথম দফা লোকসভা ভোটের প্রার্থী। কোটিপতির নিরিখে সবচেয়ে বেশি প্রার্থী রয়েছেন বিজেপিতে।

১৯ এপ্রিল লোকসভার প্রথম দফার ভোট। প্রথম দফায় পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি কেন্দ্রে ভোট রয়েছে। সমস্ত রাজ্য মিলিয়ে প্রথম দফার ভোট হবে মোট ১০২ টি আসনে। ইতিমধ্যেই এই সমস্ত আসনে প্রার্থীদের হলফনামা জমা পড়ে গিয়েছে। আর তাতেই কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। তথ্য বলছে, প্রার্থীদের বিরুদ্ধে রয়েছে ফৌজদারি মামলার অভিযোগ, কিছুজন প্রার্থী আবার কোটিপতি। কোন দলের কত জন প্রার্থী ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত? কতজনই বা কোটিপতি? মহিলা প্রার্থীর সংখ্যাই বা কত?

প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা

'The Association for Democratic Reforms' (ADR) এবং 'The National Election Watch'-এর বিশ্লেষণ করা তথ্য থেকে জানা গিয়েছে, ২০২৪ লোকসভা ভোটের প্রথম দফার মোট ২৫২ জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে। তাঁর মধ্যে ১৬১ জনের বিরুদ্ধেই রয়েছে গুরুতর অভিযোগ। ৭ জনের বিরুদ্ধে খুনের, ১৮ জনের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন এবং ৩৫ জনের বিরুদ্ধে রয়েছে ঘৃণাভাষণের অপরাধ সংক্রান্ত মামলা। তার মধ্যে ১৫ জন প্রার্থী দোষী সাব্যস্ত। ফৌজদারি মামলায় অভিযোগ রয়েছে আরজেডির ৪ জনের, ডিএমকের ১৩ জনের, এসপির ৩ জনের, এআইটিসির ২ জনের, বিজেপির ২৮ জনের, এআইডিএমকের ১৩ জনের, কংগ্রেসর ১৯ জনের, বিএসপির ১১ জনের, এনটিকের ১১ জনের, পিপিআই(ডি)-র ১ জনের, পিএমকের ৬ জনের বিরুদ্ধে। সংখ্যার হিসেবে বিজেপি প্রথম স্থানে থাকলেও, শতাংশের হিসেবে প্রথম স্থানে রয়েছে আরজেডি (১০০%), তারপর রয়েছে ডিএমকে (৫৯%), তারপর সমাজবাদী পার্টি (৪৩%) এবং তৃণমূল (৪০%)। এই বঙ্গের নিরিখে মোট ৫ জনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার অভিযোগ রয়েছে। কোচবিহারের বিজেপি প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিকের বিরুদ্ধে রয়েছে ১৪ টি, কোচবিহারের তৃণমূল প্রার্থী জগদীশচন্দ্র বর্মা বসুনিয়ার বিরুদ্ধে রয়েছে ১ টি, আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল প্রার্থী প্রকাশ চিক বরাইকের বিরুদ্ধে রয়েছে ১টি, আলিপুরদুয়ারের বিজেপি প্রার্থী মনোজ টিগ্গার বিরুদ্ধে ৬টি, জলপাইগুড়ির সিপিএম প্রার্থী দেবরাজ বর্মনের বিরুদ্ধে ২টি ফৌজদারি মামলার অভিযোগ আছে। ডব্লিউবিইডব্লিউ নেতৃত্বে দাবি করা হয়েছে, প্রার্থীদের বিরুদ্ধে রয়েছে খুন, ধর্ষণ, অপহরণের মতো মারাত্মক অভিযোগ। প্রার্থীদের বিরুদ্ধে চলা মামলাগুলিতে দোষী সাব্যস্তদের শাস্তি হতে পারে ৫ বছর বা তার বেশি সময়ের কারাদণ্ড। প্রায় সব দলেরই প্রার্থীদের নাম রয়েছে তালিকায়। প্রশ্ন উঠছে, কেন ফৌজদারি মামলার মতো গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্তদেরই প্রার্থী করল রাজনৈতিক দলগুলি? জনগণ কাদের হাতে তুলে দেবে দেশ শাসনের ভার?

আরও পড়ুন- বিজেপিতে গেলেই ফাঁড়ামুক্তি! দেশের ২৩ দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাকে যেভাবে বাঁচিয়েছে মোদি সরকার

কোটিপতি সম্পত্তির প্রার্থী

প্রার্থীদের জমা দেওয়া মনোনয়নপত্র বিশ্লেষণ করে সম্পত্তির যে পরিমাণ জানা গিয়েছে, তা আঁতকে দেওয়ার মতোই! 'Association for Democratic Reforms'-এর তথ্য বলছে, মোট ৪৫০ জন কোটিপটি এবার প্রথম দফা লোকসভা ভোটের প্রার্থী। কোটিপতির নিরিখে সবচেয়ে বেশি প্রার্থী রয়েছেন বিজেপিতে। এই তালিকায় রয়েছেন, বিজেপি থেকে ৬৯ জন, কংগ্রেস থেকে ৪৯ জন, এআইডিএম-কে থেকে ৩৫ জন, ডিএমকে থেকে ২১ জন, বিএসপি থেকে ১৮ জন এবং তৃণমূল আর আরজেডি থেকে ৪ জন করে। বেঙ্গল ইলেকশন ওয়াচ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস অনুযায়ী, বঙ্গে প্রথম দফার মোট ৩৭ জন প্রার্থীর মধ্যে ১০ জন প্রার্থী কোটিপতি। পশ্চিমবঙ্গের নিরিখে কোটিপতি প্রার্থীদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছেন জলপাইগুড়ির বামপ্রার্থী দেবরাজ বর্মন। তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ৩ কোটি ৮৯ লক্ষ ৮৯ হাজার ৪৬৮ টাকারও বেশি। ৩৩ লক্ষ ৪৬ টাকারও বেশি সম্পত্তি রয়েছে আলিপুরদুয়ারের সিপিএম প্রার্থী মিলি ওঁরাওয়ের। আবার অন্যদিকে সোশ্যালিস্ট ইউনিট সেন্টার অফ ইন্ডিয়ার (SUCI) আলিপুরদুয়ারের প্রার্থী চন্দন ওঁরাওয়ের সম্পত্তির পরিমাণ ১২ হাজার টাকা। এডিআর-এর তরফে জানানো হয়েছে, ওই ১০ জন প্রার্থীর মধ্যে ৩ জন নির্দল, ২ জন বিজেপির, ২ জন তৃণমূল কংগ্রেসের, ১ জন সিপিএমের, ১ জন কংগ্রেসের এবং ১ জন আরএসপির। বিশ্বখ্যাত পণ্ডিত টমাস পিকেটি সহ প্যারিস স্কুল অব ইকনমিক্সেরর ওয়ার্ল্ড ইনিক্যুয়ালিটি ল্যাবের গবেষকরা জানিয়েছিলেন, ভারতে ঔপনিবেশিক আমলের চেয়েও এখন আর্থিক অসাম্যের পরিমাণ বেশি। এর আগে অক্সফ্যামের রিপোর্টেও একই তথ্য মিলেছিল। দরিদ্র ও অসাম্য নিয়ে কর্মরত অর্থনীতিবিদরা প্রশ্ন তুলছেন, নির্বাচনী ভাষণে প্রচার করা 'বিকশিত ভারত' কোথায়? প্রধানমন্ত্রী তো বলেছিলেন, "কংগ্রেসকে ৬০ বছর দিয়েছেন, আমাকে ৬০ মাস দিন"। এখন তো মোদি শাসনের ১০ বছর হয়ে গিয়েছে। অভিযোগ, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার নাকি দারিদ্র নিয়ে গবেষণার পথও বন্ধ করে দিয়েছে। একদিকে রাজনীতিতে যুক্ত ব্যক্তিদের অগাধ আর্থিক সম্পত্তি, অন্যদিকে দারিদ্রের পরিসংখ্যানে দেশের যে দ্বিখণ্ড চিত্র বেরিয়ে আসবে সেই সত্যতা ঢাকা দিতেই কি গবেষণাতে বাধা দেয় সরকার?

আরও পড়ুন- প্রার্থীর সম্পত্তির হিসেব জানার অধিকার নেই ভোটারের! সুপ্রিম কোর্টের যে রায় ঘিরে শোরগোল

প্রথম দফায় মহিলা প্রার্থী

নির্বাচন কমিশনের সূত্র অনুযায়ী, প্রথম দফা ভোটে দেশ জুড়ে মাত্র ৮% মহিলাই প্রার্থী হয়েছেন। সংখ্যায় তা ১৩৪ জন। ২০১৯ লোকসভা ভোটে মহিলা প্রার্থী ছিল ৯%। প্রথম দফা ভোটে সর্বোচ্চ মহিলা প্রার্থী মনোনীত করেছে মিজোরাম এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে। এছাড়া অরুণাচল প্রদেশে ১জন, বিহারে ৩ জন, মধ্যপ্রদেশে ৭ জন, মহারাষ্ট্রে ৭ জন, মেঘালয়ে ২ জন, পুদুচেরিতে ৩ জন, রাজস্থানে ১২ জন, সিকিমে ১ জন, উত্তরপ্রদেশে ৭ জন , উত্তরাখণ্ডে ৪ জন, পশ্চিমবঙ্গে ৪ জন মহিলা প্রার্থী রয়েছেন। তামিলনাড়ুতে প্রথম দফাতেই সব আসনে ভোট হয়ে যাওয়ায় সেখানেই মহিলা প্রার্থী সর্বোচ্চ। তামিনাড়ুতে মোট ৭৬ জন মহিলা প্রার্থী হয়েছেন। অন্যদিকে মণিপুর, নাগাল্যান্ড, লাক্ষাদ্বীপ , ছত্তিশগড়, ত্রিপুরা এবং জম্মু ও কাশ্মীরে লোকসভা নির্বাচনে মহিলা প্রার্থীর সংখ্যা শূন্য।

কন্যাশ্রী, লক্ষীর ভান্ডার, লাখপতি দিদি, জনধন প্রকল্প দিয়ে নানা রাজনৈতিক দল মহিলাদের স্বনির্ভর করার কথা বললেও প্রার্থী তালিকাতে কিন্তু মহিলাদের অংশগ্রহণ মাত্র ৮%। প্রশ্ন উঠছে, দলগুলির কাছে মহিলা ভোটব্যাঙ্ক অন্যতম বড় অস্ত্র হলেও কেন মহিলা প্রার্থী এতই কম? মহিলারা প্রার্থী হতে চান না না কি মহিলাদের প্রার্থী হওয়ার উপযুক্ত গুণের অভাব? মহিলাদের দাবিদাওয়াকে যুগের পর যুগ ধরে চেপে রাখারই অভ্যাস থেকে কবে মুক্ত হবে রাজনৈতিক দলগুলি?

More Articles