পৃথিবীর ভয়ঙ্করতম দ্বীপ এটিই! ১১ হাজার বছর ধরে এখানে কেবল বাস বিষাক্ত সাপেদের
Brazil’s Snake Island: যে সাপগুলি ইলহা দা কুইমাদা গ্র্যান্ডে আটকা পড়েছিল তাদের কোনও স্থল শিকারি ছিল না, যার ফলে তারা দ্রুত প্রজনন করতে পারে।
আসলে সামুদ্রিক এক শিলা। তাকে ঘিরেই জঙ্গল। আর সেই জঙ্গলের নাম শুনলেই শুকিয়ে যায় হাত পা। ইলহা দা কুইমাদা গ্র্যান্ডে, মানুষজন চেনেন স্নেক আইল্যান্ড নামেই। সাও পাওলো উপকূল থেকে প্রায় ৯০ মাইল দূরে অবস্থিত ইলহা দা কুইমাদা গ্র্যান্ড বিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক সাপগুলির মধ্যে অন্যতমের বাসস্থান। প্রায় ৪৩ হেক্টর জায়গা জুড়ে অবস্থিত এই জায়গাটি। ব্রাজিলের পুরোনো গল্পকথা অনুযায়ী, এই ইলহা দা কুইমাদা গ্র্যান্ডের সাপ আসলে এনেছিল জলদস্যুরা। সেই জলদস্যুরা নাকি নিজেদের লুঠ করা সম্পত্তি লুকিয়ে রাখত এই দ্বীপে, যাতে কেউ সেই দ্বীপে ঢুকতে না পারে তাই সাপেদের বিষয়টি প্রচার করা হয়। তবে এই সর্পদ্বীপের আসল কারণ একেবারেই অন্য।
স্নেক আইল্যান্ডে কত সাপ আছে?
গোল্ডেন ল্যান্সহেড এক অত্যন্ত বিষাক্ত পিট ভাইপার। ২০০৮ সালে হওয়া একটি সমীক্ষা বলছে, ইলহা দা কুইমাদা গ্র্যান্ডে সম্ভবত ২,০০০ থেকে ৪,০০০ ভাইপারের বাস। এগুলি দ্বীপে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া গেলেও আইইউসিএন লাল তালিকায় আসলে এরা বিপন্ন প্রজাতির সাপ। শুধুমাত্র এখানেই পাওয়া যায় এই সাপটি।
এই সর্পদ্বীপে সাপেরা জেনেটিক্যালি কম বৈচিত্র্যপূর্ণ কারণ জনসংখ্যাটাই কম। ফলে নয়া জেনেটিক বৈচিত্র্য তৈরিই হয় না, বলছেন সেন্ট লুইস বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক রবার্ট অ্যালড্রিজ।
স্থানীয় অনেকেই বলেন, এই ভাইপারের বিষ এক ঘণ্টার মধ্যে একজন মানুষকে মেরে ফেলতে পারে। অসংখ্য স্থানীয় কিংবদন্তি বহুজনের ভয়ঙ্কর পরিণতির কথা বলে যারা স্নেক আইল্যান্ডের অন্দরে ঘুরতে গিয়েছিল। গল্পকথায় বলে, এক অসহায় জেলে একবার কলার সন্ধানে এই দ্বীপে নেমেছিল। কয়েকদিন পরে তার নৌকায় তাঁর দেহ আবিষ্কৃত হয়, শরীরে সাপের কামড়, রক্তে ভেসে যাচ্ছে দেহ। ১৯০৯ থেকে ১৯২০ পর্যন্ত লাইটহাউজ চালানোর জন্য দ্বীপে কিছু লোক বাস করত। স্থানীয়দের বিশ্বাস, এই বাতিঘরের শেষ রক্ষক সপরিবারে মারা যান। একটি সাপ জানালা দিয়ে ঢুকে পড়েছিল তাঁর বাড়িতে।
আরও পড়ুন- চিৎকার করলে সাপেরা কি সত্যিই শুনতে পায়? যে সত্যি সামনে আনল সাম্প্রতিক গবেষণা
স্নেক আইল্যান্ডে এত সাপ এল কীভাবে?
প্রায় ১১,০০০ বছর আগে, প্রারম্ভিক হলোসিন যুগে প্রচুর বরফ গলে যাওয়ারে ফলে এবং উপকূলীয় বরফের স্রোত ভেঙে যাওয়ার ফলে বিশ্বব্যাপী সমুদ্রের উচ্চতা প্রায় ৬০ মিটার বৃদ্ধি পেয়েছিল। এই জলস্তরের উত্থানের ফলে ইলহা দা কুইমাদা গ্রান্ডে মূল ভূখণ্ড ব্রাজিল থেকে আলাদা হয়ে যায়। অর্থাৎ এখানকার সাপগুলি আর মূল ভূখণ্ডের সাপগুলির বিবর্তনের পথ একেবারেই ভিন্ন। বিশেষজ্ঞদের মতে, দ্বীপের ছোট আবাসস্থল এবং পাখির প্রাচুর্যের কারণে- যেগুলি মূলত এই সাপের শিকার, সাপের আকার, বিষ এবং রঙের ধরন ভিন্নভাবে বিবর্তিত হয়েছে।
যে সাপগুলি ইলহা দা কুইমাদা গ্র্যান্ডে আটকা পড়েছিল তাদের কোনও স্থল শিকারি ছিল না, যার ফলে তারা দ্রুত প্রজনন করতে পারে। কিন্তু মূল সমস্যা হলো, স্থলে তাদের কোনও শিকারও ছিল না। খাবার খোঁজার জন্য, সাপেরা পরিযায়ী পাখিদের শিকার করে। সাপ তাদের শিকারকে কামড়ানোর পর অপেক্ষা করে যে বিষ কতক্ষণে কাজ করবে। কিন্তু গোল্ডেন ল্যান্সহেড ভাইপাররা কামড় দেওয়া পাখিদের তো নজরে রাখতে পারত না। তাই ধীরে ধীরে অবিশ্বাস্যভাবে শক্তিশালী বিষ তৈরি হতে থাকে তাঁদের দেহে যা মূল ভূখণ্ডের সাপের চেয়ে তিন থেকে পাঁচ গুণ বেশি শক্তিশালী। শিকারকে মেরে ফেলে এবং মানুষের মাংস গলিয়ে ফেলে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই।
আরও পড়ুন-মাঝ সমুদ্রে মন্দির, পাহারায় থাকে শতাধিক বিষধর সাপ! ৬০০ বছরের পুরনো এই স্থান আজও বিস্ময়
কেন স্নেক আইল্যান্ড এত বিপজ্জনক?
গোল্ডেন ল্যান্সহেড সাপটি এই দ্বীপের পাখিদের জন্য বিপজ্জনক, সেই নিয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু মানুষের কী হবে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গোল্ডেন ল্যান্সহেড অন্যান্য অনেক প্রজাতির বোথরপস পিট ভাইপারের তুলনায় মানুষের জন্য বেশি ক্ষতিকারক- এই ধারণা আসলে ভিত্তিহীন। গোল্ডেন ল্যান্সহেড কোনও মানুষকে কামড়েছে এমন শোনা যায়নি। কিন্তু কিছু বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, সাপের হেমোটক্সিক বিষ অঙ্গের অবক্ষয়, হার্ট অ্যাটাক, পেশীর পক্ষাঘাত বা সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে মৃত্যুও ঘটাতে পারে।
ব্রাজিলের জীববিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্সটিটিউটো বুটানটানের বিজ্ঞানী ফেলিপ গ্রাজিওটিন মনে করেন, ভাইপারের বিষ মানবদেহে বোথরপস প্রজাতির মতোই প্রভাব ফেলতে পারে। এগুলি বিষাক্ত ঠিকই কিন্তু একটু সতর্ক হলে সহজেই স্নেক আইল্যান্ডের সাপেদের ডেরায় যাওয়া আসা সম্ভব। পর্যটকরা যে কোনও সময়ই যেতে পারেন। বস্তুত এই দ্বীপ এবং এর প্রাণীদের রক্ষা করার উপায়ই হচ্ছে স্থানীয় মানুষদের সচেতন করা, পর্যটনকে উত্সাহিত করা৷ বিজ্ঞানী এবং পশু সংগ্রাহকদের কালো বাজারের চাহিদার কারণে, বন্যপ্রাণী পাচারকারীদের নজর রয়েছে এই ইলহা দা কুইমাদা গ্র্যান্ডে। এক একটি গোল্ডেন ল্যান্সহেড ১০ হাজার ডলার থেলে ৩০ হাজার ডলার অবধি দামে বিক্রি হয়।