অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীদের আমেরিকা থেকে নির্বাসন! মুখরক্ষা হবে মোদির?
US illegal Indian migrants Deporting: সোমবার ২০৫ জন অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীকে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামরিক বিমান পঞ্জাবের অমৃতসরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে।
ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই অভিবাসন নিয়ে কড়া মনোভাব দেখিয়েছিলেন সদ্য নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কোনও অবস্থাতেই আমেরিকায় অভিবাসীদের সহ্য করা যাবে না, এই মর্মে অনড় ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন অনথিভুক্ত অভিবাসীদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন আরও জোরদার করছে। সোমবার ২০৫ জন অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীকে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামরিক বিমান পঞ্জাবের অমৃতসরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। C-17 বিমানটি সান আন্তোনিও থেকে ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। জানা গিয়েছে নিজের দেশে ফেরত পাঠানোর আগে প্রত্যেকের পরিচয় যাচাই করা হয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় 'নির্বাসন' অভিযান চালানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) সেই পথেই হেঁটেছে। আমেরিকা থেকে নির্বাসনের জন্য ইতিমধ্যেই ১.৫ মিলিয়ন ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যাদের মধ্যে আবার প্রায় ১৮,০০০ অনথিভুক্ত ভারতীয় নাগরিকদের একটি প্রাথমিক তালিকাও তৈরি করা হয়েছে। তবে ওই রওনা হওয়া বিমানে কতজন যাত্রী ছিলেন তা এখনও স্পষ্ট নয়।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য বলছে, প্রায় ৭,২৫,০০০জন অবৈধ ভারতীয় অভিবাসী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। মেক্সিকো এবং এল সালভাদরের পরে অননুমোদিত অভিবাসীদের তৃতীয় বৃহত্তম জনসংখ্যা রয়েছে এই দেশেই৷ আমেরিকায় থাকার খোয়াব নিয়ে ভারত থেকে নানা ঝুঁকি নিয়েই আমেরিকায় পাড়ি দেন ভারতীয়রা। তবে সেই দেশে গিয়েও যে সুখে জীবন কাটান তা নয়। এই ভারতীয় অবৈধ অভিবাসীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন ভয়ে ভয়ে, অনিশ্চয়তায় জীবনযাপন করেন।
আরও পড়ুন- ‘ডানকি রুটে’ আমেরিকায় ঢোকার নয়া শর্টকাট এখন কানাডা! যে বিপদের মুখে অসংখ্য ভারতীয়
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই নির্বাসন পরিকল্পনার ভুক্তভোগী ভারতীয়দের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে গত মাসেই নয়াদিল্লি জানিয়েছিল, ভারতের দরজা সবসময়ই খোলা। অনথিভুক্ত ভারতীয়দের দেশে বৈধ প্রত্যাবর্তনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে ভারত। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছিলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কাদের ভারতে নির্বাসিত করা যেতে পারে এবং এই জাতীয় ব্যক্তির সংখ্যা ঠিক কত— তা ভারত যাচাই করছে। তবে এই সংখ্যা এখনও নির্ধারণ করা যায়নি। জয়শঙ্কর বলেন, "আমরা সবসময়ই বলেছি যে, আমাদের নাগরিকদের কেউ যদি সেখানে অবৈধভাবে থাকে এবং যদি আমরা নিশ্চিত হই যে তারা আমাদের নাগরিক, আমরা সর্বদাই ভারতে তাদের বৈধ প্রত্যাবর্তনের জন্য দরজা খুলে রেখেছি।"
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানুয়ারিতেই বলেছিলেন, অবৈধভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসা ভারতীয় অভিবাসীদের ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি "যা সঠিক মনে করেন তাই করবেন"। দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে এই বিষয়ে কথাও হয় ফোনে। টেক্সাসের এল পাসো এবং ক্যালিফোর্নিয়ার সান দিয়েগোতে মার্কিন কর্তৃপক্ষের হাতে আটক ৫,০০০ এরও বেশি অভিবাসীদের নির্বাসনের জন্য বিমান যাতায়াত শুরু করেছে পেন্টাগন। এখনও পর্যন্ত সামরিক বিমান অভিবাসীদের গুয়াতেমালা, পেরু এবং হন্ডুরাসে নিয়ে চলে গেছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সুসম্পর্কের বিশাল প্রচার রয়েছে বিশ্বজুড়ে। গত ২৭ জানুয়ারি দুই নেতার মধ্যে দীর্ঘ আলোচনা হয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্কের 'রিমাইন্ডার' দিয়ে ঘোষণা করেন যে মোদি সম্ভবত ফেব্রুয়ারিতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করবেন। এখানে উল্লেখ্য, অবৈধ অভিবাসীদের ট্রাম্প হামেশাই 'এলিয়েন' বলে কটাক্ষ করে থাকেন। তবে ভারতের ক্ষেত্রে মার্কিন সম্পর্কটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। মোদির সঙ্গে বন্ধুত্ব আমেরিকার বড় হাতিয়ার। ফলে উগ্র না থেকে নম্র অবস্থানই নিয়ে নির্বাসন শুরু করেছেন ট্রাম্প।
আমেরিকা মনে করে, অবৈধ অভিবাসনই সেই দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দুর্বলতার প্রাথমিক কারণ। ভারত অবশ্যই এই নির্বাসিত অভিবাসীদের ফিরিয়ে নেবে। কিন্তু দেশের মানুষের কাছে মুখরক্ষা হবে কি? ভারতে ফিরে আসা নির্বাসিত মানুষরা এবং তাঁদের সম্প্রদায় ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারকে চাপের মুখে ফেলতে পারে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। নির্বাচনে এই নির্বাসন স্পষ্ট প্রভাব ফেলতে চলেছে।
আরও পড়ুন- আমেরিকাকে আমূল বদলে দেবে ‘অ্যাজেন্ডা-৪৭’? কী পরিকল্পনা আঁটছেন ট্রাম্প?
পর্যটন, ব্যবসা এবং শিক্ষার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার বিপুল চাহিদা রয়েছে ভারতীয়দের মধ্যে। সেই বিশাল চাহিদার উপর জোর দিয়েই ২০২৪ সালে টানা দ্বিতীয়বার এক মিলিয়নেরও বেশি অ-অভিবাসী ভিসা জারি করেছিল আমেরিকা। এর মধ্যে রেকর্ড সংখ্যক ভিজিটর ভিসা রয়েছে।অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০২৪ সালে প্রায় ১,১০০ জন অবৈধ অভিবাসীকে ভারতে ফেরতও পাঠিয়েছে।
ডিসেম্বরে প্রকাশিত ২০২৪ অর্থবর্ষের ICE-র বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, সামগ্রিকভাবে, মার্কিন ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (ICE) ওই বছরে (১ অক্টোবর, ২০২৩ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪) ২,৭১,৪৮৪ জন অবৈধ অভিবাসীকে নির্বাসিত করেছে। ট্রাম্প এক বছরে ১ মিলিয়ন অনথিভুক্ত অভিবাসীদের নির্বাসিত করতে চান। অর্থাৎ প্রতিদিন প্রায় ২,৭৫০ জনকে নির্বাসন দিতে চান। গত সপ্তাহে, আইসিই এজেন্টরা গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৯০০ জনকে আটক করেছে। কম বেতনের চাকরিতে নিযুক্ত অনেকেই কাজ এবং কর্মক্ষেত্র থেকে দূরে রয়েছেন বলেও জানা গেছে।
তবে মার্কিন ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের ক্ষমতা সীমিত। আটক ব্যক্তিদের জন্য মাত্র ৪০,০০০ শয্যার বন্দোবস্ত আছে। ট্রাম্প জানিয়েছেন, পেন্টাগন এবং হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগকে গুয়ানতানামো বে-র কুখ্যাত কারাগারকে ৩০,০০০ বন্দি থাকার মতো করে প্রস্তুত করার নির্দেশ দেবেন। ট্রাম্পের ইচ্ছা অনুযায়ী নির্বাসনের জন্য বিমানের ক্ষমতাও বাড়াতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সংশ্লিষ্ট দেশগুলিকেই এই নির্বাসন যাত্রার খরচ দিতে বলতে পারে।