ভারতীয় বাজেটে কেন ব্যবহার করা হতো লাল বহিখাতা?
Budget 2023 : বাজেটে কীভাবে এল লাল বাহি খাতা? কেন বদলে গেল সেই রীতি
আজ ফেব্রুয়ারির এক তারিখ, প্রতি বছরের মতো এবারেও প্রস্তুত করা হয় গিয়েছে আগামী বছরের বাজেট। আজকের তারিখে কেবল তার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের নেতৃত্বে আসন্ন ২০২৩-২৪ এর একটি সূচিত বাজেট পেশ করা হবে। মোদি সরকারের দ্বিতীয় ধাপে অর্থমন্ত্রী হিসেবে ২০১৯, ২০২০, ২০২১,২০২২-এর পর এই বছর পঞ্চমবারের মতো সংসদে বাজেট পেশ করছেন সীতারামন।
দেশীয় অর্থনীতিতে একটি বড় দিক হল ‘বাজেট’। সামান্য একটা সংসার চালাতে গেলেই আমাদের মাসের শুরুতে আয় ব্যয়ের হিসেব কষে খরচের বাজেট করতে হয়, সেখানে আস্ত একটা দেশ চালাতে গেলে যে বাজেটের গুরুত্ব কতখানি, তা আলাদা করে বলে দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না। আর বছরের শুরুতে তার একটা হিসেব করে জনসাধারণের সামনে পেশ করার যে রীতি তাকেই বলা হয় ‘বাজেট’। আমাদের দেশে সাধারণত প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসের ১ তারিখ পেশ করা হয় আগামী বছরের বাজেট।
আরও পড়ুন - আদানির পতনে আসলে লাভ হিন্ডেনবার্গের! কেন ইউরোপিয় গবেষণাই আজও মান্যতা পায় দেশে?
এই বাজেট পেশের পরম্পরা চালু হয়েছিল সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই। সে সময় ব্রিফকেস বন্দী হয়ে আসত বাজেটের নথি। ১৮৬০ সালের ৭ এপ্রিল ঔপনিবেশিক ভারতে প্রথম বাজেট পেশ করেছিলেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী জেমস উইলসন। তাঁর হাতে ছিল একটি গ্ল্যাডস্টোন বক্স। ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রীও পার্লামেন্টে এই ব্যাগ নিয়েই বাজেট পেশ করতে যেতেন। সেই ধারা তারাই প্রথম এনেছিলেন উপনিবেশ ভারতে। পরবর্তীতে স্বাধীন ভারতেও বজায় ছিল এই রীতি। ১৯৪৭ সালের ২৬ নভেম্বর স্বাধীন ভারতের প্রথম কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করেছিলেন অর্থমন্ত্রী আর.কে. শনমুখম চেট্টি৷ তাঁর হাতে তখন ছিল চামড়ার পোর্টফোলিও ব্যাগ। এরপর ইন্দিরা গান্ধির আমল থেকে মোদি আমলের অরুণ জেটলি পর্যন্ত অক্ষুণ্ণ ছিল সেই ধারা। অতঃপর নির্মলা সীতারমন-এর হতে এসে বদল এল সেই ধারায়।
২০১৯ সালে বাজেট প্রথমবার বাজেট পেশ করতে ঢুকে ব্রিফকেসের বদলে নির্মলা সীতারমন তুলে ধরলেন লাল রঙের বহিখাতা। খেরোর খাতার কথা হয়তো অনেকেই শুনে থাকবেন। ব্যবসার আয় ব্যয়ের হিসেব রাখা হয় যাতে। ঠিক সেরকম না হলেও লাল বহিখাতায় যেন বজায় থাকল ওই সংস্কৃতিও। চিরকালীন এমন নিয়মে হঠাৎ এই পরিবর্তনের কারণ নিয়ে শুরু হয়ে যায় জল্পনা। কেন হঠাৎ করে এতদিনের ব্রিফকেস বদলে গেল, সেই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় বর্তমান কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে।
আরও পড়ুন - আয়কর থেকে বিরাট মুক্তি! নির্মলা সীতারমণের এবারের বাজেটে কি বাঁচবে মধ্যবিত্তরা?
যদিও পরবর্তীকালে বাজেট পেশের এই পদ্ধতিতে বারবার বদল এনেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। পুরনো রীতি ভেঙে ট্রেন্ডি হয়ে ওঠার একটা প্রয়াস লক্ষ্য করা গিয়েছে। তবে প্রথমবার দায়িত্ব পেয়েই ব্রিফকেস বদলে বহিখাতা আনার পিছনে তিনি যে কারণটা দেখিয়েছিলেন তা হল, “২০১৯ সালে বাজেটের জন্য স্যুটকেস আনিনি। আমরা স্যুটকেস বহনকারী সরকার নই। একটি স্যুটকেস অন্য কিছুকেও বোঝায়, 'স্যুটকেস নেওয়া, স্যুটকেস দেওয়া। মোদীজির সরকার স্যুটকেস সরকার না।”
সূক্ষ হলেও একটা গভীর রাজনৈতিক খোঁচা ছিল এর মধ্যে। টাকা ভর্তি ব্রিফকেস, এই বিষয়টি যে জালিয়াতির সূচক সেই বিষয়ে সরাসরি তোপ দেগে দেন তিনি। সেই থেকেই বাজেটে জায়গা করে নেয় এই লাল বহি খাতা। বাইরের খাতাটি লাল রেশমে মোড়ানো। তার উপরে অশোক স্তম্ভ। ভারতে হিসাব রাখার জন্য এই খাতা ব্যবহার করা হতো। যদিও সেই খাতার মেয়াদও মাত্র বছর দুই। করোনা পরবর্তী সময়ে অর্থাৎ ২০২১ সালের বাজেটে আর জায়গা হয়নি বহিখাতার। ডিজিটাল ইন্ডিয়ার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে সেই জায়গায় এসেছে ট্যাবলেট। আজকের কাগজবিহীন বাজেটের পথচলা শুরু এইভাবেই।