২৯ বছরে রেকর্ড কমল মুদ্রাস্ফিতির হার, দিশানায়েকের হাত ধরেই সুদিন ফিরছে শ্রীলঙ্কায়?
Sri Lanka: নগদ সঙ্কটে দীর্ঘদিন ধরেই জর্জরিত শ্রীলঙ্কা। যে সমস্যা একদিন দেশকে মারাত্মক ভাবে ঠেলে দিয়েছিল বিপর্যয়ের দিকে। এমনকী গণঅভ্যুত্থানেরও মুখোমুখি হয়েছিল দেশ।
অবশেষে সুদিন ফিরছে শ্রীলঙ্কায়। মুদ্রাস্ফিতির ফাঁড়া কাটিয়ে অর্থনৈতিক দিক থেকে স্থিতিশীল জায়গায় উঠে আসছে শ্রীলঙ্কা। তেমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। সম্প্রতি উল্লেখযোগ্য ভাবে মুদ্রাস্ফিতি কমল দ্বীপরাষ্ট্রটিতে। যা উনত্রিশ বছরে কার্যত রেকর্ড।
গত কয়েক বছরে অনেক কিছু দেখেছে সাগরপারের ছোট্ট দেশটি। মূল্যবৃদ্ধি, দেশ জুড়ে ব্যাপক অব্যবস্থা, তার পর গণঅভ্যুত্থান। জনরোষের জেরে বাসভবন ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষ। তার পর রণিল বিক্রমাদিত্যের হাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তবে দেশটা যে অন্য কিছুর প্রতীক্ষায় ছিল, তা বোঝা গেল ২০২৪ প্রেসিডেন্সিয়াল ভোট আসতেই। মানুষ বেছে নিলেন ন্যাশনাল পিপল'স পাওয়ার (এনপিপি) তথা বামজোটের নেতা অনুরাকুমারা দিশানায়েকেকে। কার্যত বাকিদের পিছনে ফেলে সর্বোচ্চ ভোটে শ্রীলঙ্কার গদিখানি দখল করে নিয়েছেন তিনি। তার আমলে শ্রীলঙ্কা আদৌ নতুন দিশা খুঁজে পাবে কিনা, সে প্রশ্ন তো থাকবেই। তবে যেটা আশার কথা, প্রেসিডেন্ট বদলের পরে পরেই খানিকটা হলেও সুদিন ফিরল দ্বীপরাষ্ট্রে। সেপ্টেম্বরে উল্লেখযোগ্য ভাবে কমল দেশের মুদ্রাস্ফিতি। যা শ্রীলঙ্কার মতো দেশের পক্ষে আশার কথা তো বটেই।
আরও পড়ুন: রনিল, রাজাপক্ষেকে পিছনে ফেলে প্রেসিডেন্ট পদে, শ্রীলঙ্কাকে দিশা দেখাতে পারবেন বামপন্থী দিশানায়েকে?
নগদ সঙ্কটে দীর্ঘদিন ধরেই জর্জরিত শ্রীলঙ্কা। যে সমস্যা একদিন দেশকে মারাত্মক ভাবে ঠেলে দিয়েছিল বিপর্যয়ের দিকে। এমনকী গণঅভ্যুত্থানেরও মুখোমুখি হয়েছিল দেশ। তার পর সরকার বদলেছে। অবস্থা তেমন বদলায়নি। বদলালো শেষমেশ ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এসে। পরিসংখ্যান বলছে, এই সেপ্টেম্বরে মুদ্রাস্ফিতির পরিমাণ নেমে এসেছে প্রায় ০.৫ শতাংশে। যা কার্যত গত ২৯ বছরে রেকর্ড বললে ভুল হয় না।
আদমশুমারি ও পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্য বলছে, খাদ্যপণ্য এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমেছে অনেকটাই। যা সেপ্টেম্বর মাসে মূল্যবৃদ্ধিকে নামিয়ে এনেছে ০.৫ শতাংশে। ১৯৯৫ সালে শেষ বার মুদ্রাস্ফিতির হার নেমে এসেছিল ০.৯ শতাংশে। তার আগে ১৯৮৫ সালে তা নেমেছিল ২.১ শতাংশে।
বছর দুয়েক আগে যেখানে শ্রীলঙ্কার মুদ্রাস্ফিতির হার ছিল সবচেয়ে বেশি। ছুঁয়ে ফেলেছিল তা ৬৯.৮ শতাংশের মাত্রা। যার ফলে ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয় নেমে এসেছিল দ্বীপরাষ্ট্র জুড়ে। খাদ্যসঙ্কট শুরু হয় দেশ জুড়ে। জ্বালানি থেকে শুরু করে ওষুধপত্র, যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে মারামারি পড়ে যায় দেশ জুড়ে। ২০২২ সালের জুলাই মাসে যার জেরে গদি ছাড়তে হয় তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষেকে।
আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কাকে দ্বীপ দান! ৫০ বছর আগে ইন্দিরা গান্ধির সিদ্ধান্ত নিয়ে ভোটের আগে কেন সরব বিজেপি?
এর পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নিয়ে কুর্সিতে বসেন রনিল বিক্রমসিংহে। দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে করবৃদ্ধি ও জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি প্রায় ২.৯ বিলিয়ন ডলার আন্তর্জাতিক সাহায্য জোগার করেছিলেন বিক্রমসিংহে। তবে তা সত্ত্বেও দেশের কুর্সির ভার তার হাতে রাখতে চায়নি দেশের জনগণ। সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর বামজোটের নেতা অনুরাকুমারা দিশানায়েকে-কেই ভোটে জিতিয়ে এনেছেন শ্রীলঙ্কার নাগরিকেরা। দেশের হাল ধরতে না ধরতেই সুখবর এল দ্বীপরাষ্ট্রে। মূল্যবৃদ্ধির ভয়ঙ্কর অভিশাপ কাটিয়ে তবে কি এবার সুদিন ফিরতে চলেছে শ্রীলঙ্কায়? তেমন আশাতেই বুকে পেতেছে দ্বীপরাষ্ট্রের মানুষজন।